গলা কেটে খুন যুবতী, আটক মা-বোন

বাড়ির সামনের উঠোন থেকে উদ্ধার হল এক যুবতীর গলা কাটা দেহ। আর দেহের পাশে যে জলভর্তি বালতি রাখা ছিল তাতে মিলল মুণ্ড। শনিবার সকালে নন্দকুমার থানার শ্রীধরপুর গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মর্জিনা বিবি (২৮) গত ছ’বছর ধরে মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকতেন। ওই যুবতীর বোন মুর্শিদা খাতুন পুলিশের কাছে খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪১
Share:

ঘটনাস্থলে ভিড় প্রতিবেশীদের। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

বাড়ির সামনের উঠোন থেকে উদ্ধার হল এক যুবতীর গলা কাটা দেহ। আর দেহের পাশে যে জলভর্তি বালতি রাখা ছিল তাতে মিলল মুণ্ড। শনিবার সকালে নন্দকুমার থানার শ্রীধরপুর গ্রামের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মর্জিনা বিবি (২৮) গত ছ’বছর ধরে মেয়েকে নিয়ে বাপের বাড়িতেই থাকতেন। ওই যুবতীর বোন মুর্শিদা খাতুন পুলিশের কাছে খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে জানা গিয়েছে।

Advertisement

শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ আটক করে মৃতার মা হাসিনা বিবি ও বোনকে। তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক মৃতার বড় দাদা-বৌদি-সহ পরিবারের অন্যরা। এমনকী তারা নিয়ে গিয়েছে নিহত ওই মহিলার মেয়েকেও। নন্দকুমার থানার ওসি অজয় মিশ্র বলেন, ‘‘মর্জিনার বোন মুর্শিদা জানায় দিদিকে সেই কাটারি দিয়ে মেরেছে। কাটারিও এখন উদ্ধার হয়নি। খুনের ঘটনায় কারা জড়িত তা জানতে ওই দু’জনকে আটক করা হয়েছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নন্দকুমার থানার শ্রীধরপুর হাইরোড সংলগ্ন হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে শ্রীধরপুর পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা শেখ মুজিবর। পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই ব্যক্তির চার ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে ছিল মর্জিনা। বছর বাইশের মেজ মেয়ে মুর্শিদা ও ১৬ বছরের ছোট মেয়ে মুসলেমা খাতুন অবিবাহিত। চার ছেলের মধ্যে বড় হানিফ ও সেজ হাবিবুল একই বাড়িতে থাকে। মেজ ছেলে বাড়ির কাছেই আলাদাভাবে থাকে। আর ছোট ছেলে হাসিবুল কাজের সূত্রে ভিনরাজ্যে থাকেন।

Advertisement

বছর দশেক আগে মর্জিনার সঙ্গে চণ্ডীপুরের এক যুবকের বিয়ে হয়েছিল। তাঁদের দু’জনের সাত বছরের এক মেয়ে রয়েছে। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর পর স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে গত ছ’বছর ধরে বাপের বাড়িতেই থাকতেন মর্জিনা বিবি। শ্রীধরপুর গ্রামেই এক ব্যক্তির বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন মর্জিনা। শনিবার সকালে বাড়ির মধ্যে কান্নার শব্দ শুনতে পেয়ে প্রতিবেশীরা দেখেন বাড়ির উঠোনে মর্জিনার গলাকাটা অবস্থায় রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। আর পাশেই একটি বালতিতে জলের মধ্যে তাঁর মুণ্ড ডোবানো রয়েছে। কাছেই বসে রয়েছে তাঁর মেজ বোন মুর্শিদা আর বাড়ির মধ্যে রয়েছেন মা। এমন ঘটনায় শিউরে উঠেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশের দাবি, জিজ্ঞাসাবাদে মুর্শিদা দিদিকে খুনের কথা স্বীকার করেছেন।

শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ঘনবসতির ওই পাড়ার মধ্যে টালির চাল দেওয়া একতলা মাটির বাড়ির সামনে থিকথিক করছে ভিড়। বাড়ির সামনের উঠোনে রক্ত পড়ে রয়েছে। বাড়ি ঢোকার মুখে বাঁশের বেড়ার দরজা ভাঙা। ভিতরে বাল্বের আলো জ্বলছে। বাড়িতে কেউ নেই। প্রতিবেশী গৃহবধূ আলেমারা বিবি বলেন, ‘‘প্রতিদিন গ্রামেরই এক বাসিন্দার বাড়িতে মর্জিনা কাজ করতে যেত দেখেছি। মাসখানেক ধরে মর্জিনা বেশ অস্বাভাবিক আচরণ করছিল। এনিয়ে ওদের বাড়িতে বেশ অশান্তি হত।’’

তবে বোনই যে মেরেছে দিদিকে সে কথা স্থানীয়রা মানতে চাননি। তাঁদের অভিযোগ, মর্জিনার সঙ্গে তাঁর বড় দাদা ও বৌদির মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হত। শুক্রবার রাতে পরিবারের সকলের মাঝে হঠাৎ খুন হলেন কী করে মর্জিনা? আর মর্জিনার মেয়েকে নিয়ে কেনই বা পালালেন তাঁর দাদা, বৌদিরা? এমন নৃশংশ ঘটনায় কি তাহলে জড়িয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরাও? উত্তর মিলছে না অনেক কিছুরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন