মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। পরিস্থিতি দেখে এ বার ব্লকস্তরে শিবির করতে চাইছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। আজ, শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে মানসিক অবসাদের নানা দিক নিয়ে ব্লকস্তরে এই সচেতনতা শিবির হবে। সেখানে স্বাস্থ্যকর্মীদের জানানো হবে, অবসাদের লক্ষণগুলো কী কী। কী ভাবেই বা এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র রিপোর্টে যে পরিসংখ্যান উঠে এসেছে তা দেশের জন্য আশঙ্কাজনকই। মনোস্বাস্থ্য নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। ফলে এই বিষয়টি এখন যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখতেই হবে।” জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, “দৈনন্দিন জীবনে স্ট্রেস বাড়ার ফলেও প্রভাব পড়ছে মনোস্বাস্থ্যে। এ নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো খুব জরুরি। সেই কাজটা শুরুও হচ্ছে।”
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গোটা দুনিয়া জুড়েই মানসিক অবসাদগ্রস্ত মানুষজনের সংখ্যা বেড়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে এমনই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছে হু। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রতিবন্ধকতার অন্যতম কারণ হয়ে উঠবে এই মানসিক অবসাদ। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলছিলেন, “মনোস্বাস্থ্যের অবনতির জন্য বাড়ছে আত্মহত্যার ঘটনা। এটা প্রতিরোধ করতে ব্লকস্তরে সচেতনতা শিবিরের গুরুত্ব রয়েছে। একজন সচেতন হলে তিনি আরও একশোজনকে সচেতন করতে পারেন।”
শুধু মানসিক অবসাদ নয়। তার আগের ধাপে রয়েছে মানসিক উৎকণ্ঠাও। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এই উৎকণ্ঠাও যথেষ্ট উদ্বেগের বিষয়। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “অবসাদের কিছু সূক্ষ্ম লক্ষণ থাকে, যা সহজে বুঝতে পারা যায় না। তাই অবসাদের প্রাথমিক পর্যায় সম্পর্কে সকলকে সচেতন থাকতে হবে।”
ঠিক কী কারণে মানুষ অবসাদে ভোগেন?
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এর পিছনে নানা কারণ রয়েছে। কাজের চাপ, হতাশা, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কষ্ট, একাকীত্বের মতো সমস্যাই সামনে উঠে আসে। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায় বংশগত কারণেও অবসাদে আসে।
জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার জানাচ্ছেন, হু-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে ৩৫ কোটি মানুষ অবসাদের শিকার। এরমধ্যে বেশিরভাগেরই খিটখিটে মেজাজ, ক্লান্তি, ঘুম ও খিদে কমে যাওয়ার মতো ছোটখাটো লক্ষণ দেখা যায়। তাঁর দাবি, “ছেলেদের থেকে মেয়েরাই বেশি অবসাদে ভোগেন।”
দীর্ঘ সময় ধরেই মনোকষ্টে ভুগতে ভুগতে বদল ঘটে যায় আক্রান্তের আচার-আচরণ, অনুভূতিতে। দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটায় সার্বিক ভাবে ভাল থাকা আর হয়ে ওঠে না। চিকিৎসকদের মতে, আধুনিক প্রজন্মের জীবনযাত্রার তাল অতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। তাতে প্রভাব পড়ছে সার্বিক স্বাস্থ্যে। অস্বাস্থ্যকর খাবার থেকে অনিয়মিত জীবনযাপনও এর জন্য দায়ী। একসঙ্গে অতিরিক্ত খাওয়া, চাপের কাছে নতিস্বীকার করা, ইন্টারনেট আসক্তিও অবসাদের কারণ হতে পারে।