ডেঙ্গি ভয়, শীতেও ঘাম ছুটছে স্বাস্থ্যকর্তাদের

শহরের রাস্তার বড় নর্দমা আবর্জনায় বন্ধ। পাড়ার নিকাশি নালার জল বেরোতে না পারায় হচ্ছে মশার লার্ভা। বাড়ছে মশার উপদ্রব। আর এতেই শীতেও উদ্বেগের ঘাম ঝরছে স্বাস্থ্যকর্তাদের।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০৫
Share:

ভ্যাট উপচে। মালঞ্চ রোডে। নিজস্ব চিত্র

শীতেও নিশ্চিন্ত থাকা যাবে না। বলছেন, স্বাস্থ্যকর্তারাই। শহরের নিকাশির হাল দেখেই আশঙ্কিত তাঁরা। আশঙ্কা ডেঙ্গি নিয়ে।

Advertisement

শহরের রাস্তার বড় নর্দমা আবর্জনায় বন্ধ। পাড়ার নিকাশি নালার জল বেরোতে না পারায় হচ্ছে মশার লার্ভা। বাড়ছে মশার উপদ্রব। আর এতেই শীতেও উদ্বেগের ঘাম ঝরছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। প্রায় দেড় মাস বন্ধ রয়েছে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের অভিযান! তাই দুশ্চিন্তা আরও বাড়ছে। তবে সূত্রের খবর, জেলা জুড়ে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় শুরু হতে চলেছে সমীক্ষা।

শীত কিছুটা কমতেই শহরে দেখা দিয়েছে মশার দাপট। প্রতিটি এলাকায় বাড়ছে মশা। এর পিছনে শহরের আবর্জনা ও নিকাশির সমস্যাকেই দায়ি করছে শহরবাসী। তবে চলতি বছরে যাতে কোনওভাবেই ডেঙ্গি থাবা বসাতে না থাকে তার জন্য আগাম ব্যবস্থা নিতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। গত ৪ জানুয়ারি স্বাস্থ্য দফতর থেকে জেলাশাসকের কাছে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে আগাম সমীক্ষার জন্য চিঠি এসেছে। এ ক্ষেত্রে জেলার ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার পরিবেশ, পরিকাঠামো, সচেতনতার উপর সমীক্ষা চালাতে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী ‘অ্যাকশন প্ল্যানে’র পরিকল্পনা করবে স্বাস্থ্য দফতর। ইতিমধ্যেই শহরে পুরসভা ও গ্রামে পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সেই সমীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “এ বছর যাতে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার জন্য বছরের শুরুতেই এই সমীক্ষার নির্দেশ এসেছে। আমরা পুরসভা ও পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সমীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দেব।”

Advertisement

অবশ্য এমন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গি প্রবণ এই রেলশহরে নিয়মিত সাফাই অভিযান হচ্ছে না বলে অভিযোগ। পুরসভা সূত্রের খবর, এত দিন শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এই অভিযানের জন্য ৩ জন করে অতিরিক্ত শ্রমিক নিযুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু টাকা না আসায় ডিসেম্বর থেকে সেই কাজ বন্ধ।

খড়্গপুর পুরসভার জনস্বাস্থ্য বিভাগের পুর-পারিষদ বেলারানি অধিকারী বলেন, “আমরা নতুন পরিকল্পনা করে প্রকল্প পাঠালে ফের ওই অভিযান শুরু হবে।” শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে অপরিচ্ছন্নতার ছবি ধরা পড়ছে। ইন্দা, পাঁচবেড়িয়া, ভবানীপুর, সুভাষপল্লি, মালঞ্চ রোড, খরিদা, নিমপুরা, চণ্ডীপুর, আয়মা, ডিভিসি, নিউ সেটলমেন্ট, পুরাতনবাজার, কৌশল্যা এলাকায় আবর্জনা দেখা দিচ্ছে। অভিযোগ, বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে সপ্তাহে একদিন করে সাফাই হচ্ছে আবর্জনা। ইন্দা জীবনানন্দ সরণির বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী অশোক বিশ্বাস বলেন, “পুরসভা কাজ করে না বলছি না। কিন্তু আবর্জনা সাফাইয়ে আমাদের শহর পিছিয়ে। ইন্দা বয়েজ স্কুলের মাঠে যাওয়ার পথে আবর্জনা জমে রয়েছে। আমাদের এলাকায় নিকাশি নালায় জল জমে রয়েছে। স্প্রে হয় না। সপ্তাহে একদিন আবর্জনা পরিষ্কার হয়। শীত শেষ না হতেই মশার উপদ্রব সহ্য করছি।”

২০১৮ সালে শহরে প্রায় ৩৬জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে শীতে মশার উপদ্রব কম থাকায় পুরসভার এমন ‘ঢিলেঢালা’ চেহারা বলে অনুমান স্বাস্থ্য কর্তাদের। জেলার মশাবাহিত রোগের নোডাল অফিসার তথা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “শীতেও জমা জলে, আবর্জনায় ডেঙ্গির লার্ভা জন্মাতে পারে। তাই আত্মতুষ্টির জায়গা নেই।” যদিও শহরে আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার হচ্ছে বলে দাবি পুর কর্তৃপক্ষের। পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, “নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার হয়। আমাদের কাছে আবর্জনা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন