গড়-রক্ষায় পুরনো যোদ্ধার হাতই ভরসা

বদলের ঝুঁকি নয়। খাসতালুকে পাকা মাথাতেই ভরসা রাখল কংগ্রেস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০২:০১
Share:

জ্ঞানসিংহ সোহন পাল ও মানস ভুঁইয়া।

বদলের ঝুঁকি নয়। খাসতালুকে পাকা মাথাতেই ভরসা রাখল কংগ্রেস।

Advertisement

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কংগ্রেসের প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পরে দেখা গেল প্রত্যাশা মতোই সবংয়ে মানস ভুঁইয়া ও খড়্গপুরে সদর প্রার্থী রেলশহরের ‘চাচা’ বর্ষীয়ান বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপাল। জোটের জোরে পুরনো প্রার্থী দিয়েই গড়-রক্ষা সম্ভব হবে বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা।

জেলা কংগ্রেস সভাপতি বিকাশ ভুঁইয়া বলেন, “মানুষ ফের আমাদের জয়ী করবে। সেই সঙ্গে বাম জোটে ভোট বাড়বে।’’ মানসবাবুও জয় নিয়ে আশাবাদী। বলছেন, ‘‘কংগ্রেসের হয়ে আমি তিন দশকেরও বেশি সবংয়ের মানুষের সেবা করে এসেছি। আমার বিশ্বাস এ বারও মানুষের আশির্বাদ পাব।’’ চাচা-র সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে শহরের কাউন্সিলর রবিশঙ্কর পাণ্ডের বক্তব্য, ‘‘চাচার জয় নিয়ে কোনও সংশয় নেই।’’

Advertisement

সবংয়ে সেই ১৯৮২ সাল থেকে কংগ্রেসের চিহ্নে লড়ছেন মানসবাবু। এ বার আবার সেখানে তাঁর হয়ে আসরে নেমেছে সিপিএম। খোদ দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র সবংয়ের মাটিতে গিয়ে প্রচার করে এসেছেন। তা ছাড়া, সবংয়ে বিজেপির প্রভাব সে ভাবে নেই। গত লোকসভা নির্বাচনে প্রবল মোদী হাওয়াতেও এই বিধানসভা কেন্দ্রে গেরুয়া শিবির পেয়েছিল মাত্র ২ শতাংশ ভোট। আর প্রায় ৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছিল কংগ্রেস। তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট। আর ২০১১ সালে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের প্রার্থী হিসেবে মানসবাবু পেয়েছিলেন ৫১ শতাংশ ভোট। এ বার মানসবাবুর বিরুদ্ধে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন একদা তাঁর শিষ্য নির্মল ঘোষ। নির্মল অবশ্য বলছেন, “লড়াই খুব কঠিন হবে না। গত পাঁচ বছরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা আমাদের সরকারের কৃতিত্ব। তাই আমি নই, তৃণমূল জয়ী হবে।সিপিএমের রক্তমাখা হাতে মানস ভুঁইয়ারা হাত মিলিয়েছেন। সবংয়ের মানুষ তা সমর্থন করবে না।’’ আগে থেকেই কেলেঘাই-কপালেশ্বরী সংস্কার, ডেবরা-সবং রাস্তার পিছনে মানসবাবুর ভূমিকা নিয়ে কংগ্রেস কর্মীরা প্রচার শুরু করে দিয়েছে সবংয়ে। জাল নোট-কাণ্ড, সবং কলেজে ছাত্র হত্যায় নিয়েও তৃণমূলের বিরুদ্ধে চলছে প্রচার।

এ বার ৯৩ বছরে চাচা প্রার্থী হবেন কি না সেই নিয়ে জল্পনা চলছিল। খড়্গপুর সদর বিধানসভায় আবার ন’বারের বিধায়ক নবতিপর চাচা-র উপরেই আস্থা রেখেছে কংগ্রেসক। এত দিন চাচার ‘ক্যারিশমা’ আর অবাঙালিদের মধ্যে সমর্থনেই কংগ্রেস এই কেন্দ্রে বিপুল ভোট পেয়েছে। শহরে গুঞ্জন রয়েছে, বরাবর লোকসভা নির্বাচনে পিছিয়ে থাকা কংগ্রেস বিধানসভায় কিন্তু বাম ভোটেও ভাগ বসিয়েছে। ২০১১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে জোটে কংগ্রেস প্রার্থী চাচা প্রায় ৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। সে বার সিপিএম প্রার্থী পেয়েছিলেন প্রায় ৩১ শতাংশ ভোট। অবাঙালির শহরে বিজেপির সংগঠন মজবুত হলেও প্রায় ৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল গেরুয়া-শিবির। গত লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য চাকা ঘুরেছে। বিজেপি গত লোকসভা নির্বাচনে এই বিধানসভায় প্রায় ৩৪ শতাংশ ভোট পেয়ে প্রথম স্থানে ছিল। কংগ্রেস ছিল চতুর্থস্থানে। কিন্তু এক বছর পরে পুরসভায় বিজেপির ভোট কমে প্রায় ২১ শতাংশে নেমে আসে। কংগ্রেস ফের প্রথম স্থানে পৌঁছে যায়। তৃণমূল ছিল দ্বিতীয় স্থানে। শহরের নেতা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য মনোজ ধর বলেন, “ধারাবাহিক সন্ত্রাস তৃণমূলকে পিছিয়ে দেবে। এ বার তৃণমূল বিরোধী সমস্ত ভোট ঘুরে গণতান্ত্রিক, ধর্ম নিরপেক্ষ জোটের দিকেই আসবে।”

চাচার প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী রমাপ্রসাদ তিওয়ারি বলেন, “চাচাকে ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তিনি শহরের উন্নয়ন করেনি। শহরে দুষ্কর্ম বেড়েছে। তাই মানুষ চাচা বা তাঁর দলকে আর ভোট দেবে না।”কংগ্রেসের শহর সভাপতি অমল দাসের অবশ্য বক্তব্য, “চাচার স্বচ্ছ ভাবমূর্তিতে জয় নিশ্চিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন