ঐতিহ্য: দোলে ভিড় রঘুনাথবাড়ির মন্দিরে। নিজস্ব চিত্র
শুধু রাধা-কৃষ্ণের প্রাণের মিলন নয়, এখানে দোল উৎসবের সুর বাঁধা সম্প্রীতির মেলবন্ধনে। গড়বেতার বগড়ি রাজবাড়ির দোল উৎসবে শীলাবতী নদী পেরিয়ে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ যায় মুসলিম অধ্যুষিত রঘুনাথবাড়ি গ্রামের মন্দিরে। জাত-ধর্মের বিভেদ ভুলে সবাই মেতে ওঠেন আবির খেলায়। দোল উপলক্ষে সাতদিনের যে মেলা বসে, সেই মেলা কমিটির সদস্য অঞ্চল প্রধান আখতার খান, সহ-সভাপতি মহম্মদ ইয়াসিন খান। তাঁরা মানছেন, ‘‘দোল উৎসবে আমাদের সকলের বাড়িতেই আত্মীয়-পরিজনেরা আসেন। এই সাতদিন সব বিভেদ ভুলে আমরা আনন্দে মেতে উঠি।’’
শীলাবতীর উত্তরদিকের গ্রাম কৃষ্ণনগরে বগড়ি রাজ পরিবারের নিজস্ব মন্দির। সেখানেই রয়েছে রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি। দোলের আগের রাতে প্রথা মেনে নানা বাদ্যযন্ত্র-সহ বেরোয় শোভাযাত্রা। দুলে সম্প্রদায়ের কাঁধে পালকিতে বিগ্রহ চাপিয়ে গোটা এলাকা ঘোরানো হয়। পোড়ানো হয় চাঁচর ও আতসবাজি। দোলের দিনও শোভাযাত্রা বেরোয়। পালকিতে করে বিগ্রহ নদী পেরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় দক্ষিণ দিকে রঘুনাথবাড়ি গ্রামের মন্দিরে। শোভাযাত্রা দেখতে আবালবৃদ্ধবণিতা ভিড় জমান। শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনিতে চারপাশ তখন মাতোয়ারা।
গড়বেতার কৃষ্ণনগরে বগড়ি রাজাদের বসবাস ছিল। চতুর্দশ শতাব্দীতে রাজা গজপতি সিংহ মন্দিরে কৃষ্ণ বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করেন। প্রায় ৭০ বছর পরে রাজা রঘুনাথ সিংহের আমলে কৃষ্ণের পাশে ঠাঁই পান রাধা। সেই থেকেই দোল উৎসবে যুগল মূর্তিকে নদী পেরিয়ে রঘুনাথবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই হয় রং খেলা। সাতদিন পরে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহ রঘুনাথবাড়ি মন্দির থেকে দুলে সম্প্রদায়ের কাঁধে পালকিতে ফের নদী পেরিয়ে ফিরে যায় কৃষ্ণনগরের মন্দিরে।
রবিবার, দোলের বিকেলে মেলার উদ্ধোধন করেন গড়বেতা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী গৌরাঙ্গানন্দ। উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী। এই মেলার সব থেকে বড় আকর্ষণ মাদুরের রকমারি জিনিস, পিতলের মূর্তি, কাঠের পুতুল, শাঁখার সম্ভার। দোল উৎসব ও মেলা পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে ‘বগড়ি বিরাজিত শ্রী শ্রী ঈশ্বর কৃষ্ণরায় জীউ ঠাকুর দেবত্র ট্রাস্ট’। ট্রাস্টের সম্পাদক বিকাশ রায় বলেন, ‘‘পাঁচশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দোল উৎসব পালিত হচ্ছে। এই উৎসব সব ধর্মের মানুষের মিলন ক্ষেত্র।’’