তৃণমূলের দ্বন্দ্বে বাড়ি ভাঙচুর নারায়ণগড়ে

দোকান দখলকে কেন্দ্র করে বেআব্রু হল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। শনিবার রাতে ৬টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠপাটের অভিযোগ উঠল নারায়ণগড়ের গ্রামরাজ পঞ্চায়েতের কুটরঙ্গি ও সানদেউলি গ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০১:৩০
Share:

বিড়বিড়া গ্রামে ভাঙচুরের পর। নিজস্ব চিত্র।

দোকান দখলকে কেন্দ্র করে বেআব্রু হল তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। শনিবার রাতে ৬টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুঠপাটের অভিযোগ উঠল নারায়ণগড়ের গ্রামরাজ পঞ্চায়েতের কুটরঙ্গি ও সানদেউলি গ্রামে।

Advertisement

স্থানীয় বিরবিরা বাজারের একটি পান দোকানের দখল নিয়ে গোলমাল ছিলই। শনিবার রাতে ওই দোকানের মালিক তৃণমূলকর্মী বিকাশ মহাপাত্রের সানদেউলির বাড়িতে ভাঙচুর চলে। তারপর বিকাশের পক্ষে থাকা কুটরঙ্গি গ্রামের প্রকাশ খাটুয়া, কার্তিক মণ্ডল, গৌর মল্লিক-সহ ৬ জনের বাড়িতেও চলে ভাঙচুর। এই ঘটনায় তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ ও জেলা কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্টের অনুগামীদের কোন্দল ফের সামনে এসেছে। মিহির অনুগামী বলে পরিচিত গ্রামরাজ অঞ্চল সভাপতি কিঙ্কর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এই ভাঙচুর চলেছে বলে অভিযোগ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিরবিরা বাজারে রাস্তার ধারে বছর দশেক ধরে পান দোকান চালাচ্ছেন বিকাশ মহাপাত্র। তবে বহুদিন ধরে বিকাশ দোকান বন্ধ রাখছিলেন। ভোটের পরে ওই দোকান অন্য কাউকে পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে স্থানীয় কয়েকজন তৃণমূলকর্মী। এই নিয়ে বিকাশের সঙ্গে তাদের গোলমাল বাধে। সম্প্রতি সূর্য অট্টের ঘনিষ্ঠ অঞ্চলের যুব তৃণমূল নেতা বিমল ভুঁইয়ার সমর্থনে বন্ধ দোকান নতুন করে খুলতে উদ্যোগী হন বিকাশ। যুব নেতা বিমলের সঙ্গে বিরোধ আছে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মিহির চন্দের অনুগামী অঞ্চল সভাপতি কিঙ্কর চক্রবর্তীর। এই সব বিবাদের জেরে গোলমাল চরমে পৌঁছয়।

Advertisement

শনিবার দুপুরে পান দোকান নতুন করে সাজাচ্ছিলেন বিকাশ। কয়েকজন তৃণমূল কর্মী বাধা দিলে বচসা বাধে। তারপর তা গড়ায় হাতাহাতিতে। বিকাশের পাশে দাঁড়ান প্রকাশ খাটুয়া, গৌর মল্লিকরা। এরপর রাতে বিকাশের বাড়িতে হামলা হয়। ভাঙচুর করা হয় বাড়ির অ্যাসবেস্টসের চাল। লুঠপাট চলে বলেও অভিযোগ। কুটরঙ্গি গ্রামেও ৬টি বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। যুব তৃণমূল নেতা বিমলের অভিযোগ, “আমাদের অঞ্চল সভাপতি কিঙ্কর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। বিকাশ মহাপাত্র আমার সঙ্গে থাকে বলে ওঁর দোকান দখল করতে চাইছে কিঙ্কর অনুগামী গৌতম খাটুয়া, ধ্রবজ্যোতি হাজরারা।’’ জেলা কর্মাধ্যক্ষ সূর্য অট্ট পাশে থাকায় ব্লক সভাপতির অনুগামী কিঙ্করের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বলেও জানান বিমল।

যদিও কিঙ্করের দাবি, “নির্বাচনে বিমল ভুঁইয়া সিপিএমের পতাকা নিয়ে ঘুরেছিল। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে তাঁরাও সিপিএম সমর্থক। ওঁরা নিজেরা গোলমালে জড়িয়ে বাড়ি ভাঙচুর করে আমাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আমার কিছু জানা নেই।” তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মিহিরবাবুর আবার বক্তব্য, “বাড়ি ভাঙচুরের সঙ্গে দলের যোগ নেই। এটা গ্রাম্য বিবাদ।’’ তাঁর মতে, ‘‘বিমল ভুঁইয়া এলাকায় দুষ্কৃতী বলে পরিচিত। এ সব করে দলকে বদনাম করছে।”

সূর্য অট্ট অবশ্য বলেন, “বিমল ভুঁইয়া গ্রামরাজ অঞ্চলে আমাদের দলের যুব সভাপতি। এখন ঘটনার দায় ঝাড়তে যে কাউকে সিপিএম বলে দেওয়ার রীতি শুরু হয়েছে।’’ দোকান দখলকে কেন্দ্র করে দলের দু’পক্ষের মধ্যে গোলমালের জেরেই যে ভাঙচুর তা-ও স্বীকার করেন সূর্য। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি আলোচনায় বসে মীমাংসার চেষ্টা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন