পড়ুয়ার মনের আঁধার কাটানোর পাঠ আইআইটিতে

ছোট থেকেই নীলাদ্রি (নাম পরিবর্তিত) পরীক্ষায় ফার্স্ট। উচ্চ মাধ্যমিকের পরই আইআইটিতে পড়ার সুযোগ। কিন্তু তারপর যেন কী করে তালটা কেটে যায়। অন্য পড়ুয়াদের থেকে এ ভাবে পিছিয়ে পড়া মেনে নিতে পারে না নীলাদ্রি। এক মুঠো ঘুমের ওষুধ খেয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:১৩
Share:

চলছে আলোচনাসভা। —নিজস্ব চিত্র।

ছোট থেকেই নীলাদ্রি (নাম পরিবর্তিত) পরীক্ষায় ফার্স্ট। উচ্চ মাধ্যমিকের পরই আইআইটিতে পড়ার সুযোগ। কিন্তু তারপর যেন কী করে তালটা কেটে যায়। অন্য পড়ুয়াদের থেকে এ ভাবে পিছিয়ে পড়া মেনে নিতে পারে না নীলাদ্রি। এক মুঠো ঘুমের ওষুধ খেয়েই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে।

Advertisement

আদৃতাও ছোট থেকে পড়াশোনায় ভাল। আইআইটিতে সুযোগ পেয়ে ভাল রেজাল্টও ছিল তার। কিন্তু ক্যাম্পাসিংয়ে বন্ধুদের থেকে কম বেতনের চাকরি পেতেই চেনা ছকটা যেন বদলে গেল। প্রথম প্রথম মুখ ভার করে থাকা, তারপর মাদকের জালে কখন যে জড়িয়ে পড়েছে বুঝতে পারেনি সেও।

জীবনে চলার পথে নানা ঘাত-প্রতিঘাত থেকেই জন্ম নেয় মানসিক অবসাদ। হারিয়ে যায় আনন্দ। কিন্তু সেটাই যে জীবনের শেষ হতে পারে না, অবসাদ কাটিয়ে উঠে যে নতুন করে শুরু করা যায়, তা বোঝাতেই আলোসভাসভা হয়ে গেল খড়্গপুর আইআইটিতে। শনিবার খড়্গপুর আইআইটির উদ্যোগে কালীদাস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘সায়েন্স অফ হ্যাপিনেস’ শীর্ষক এই আলোচনাসভার মূল বিষয়ই ছিল জীবনে চলার পথে আনন্দে থাকার পথ খোঁজা।

Advertisement

আলোচনাতেই জানা গেল, মূলত শিক্ষাজীবন থেকে কর্মজীবনে মানসিক চাপ বাড়ছে মানুষের। বাদ নেই বিশ্বমানের প্রযুক্তিবিদ্যার প্রতিষ্ঠান আইআইটির পড়ুয়া থেকে শিক্ষকরাও। অনেক সময়ে প্রতিষ্ঠান চত্ত্বরেই আত্মঘাতী হচ্ছেন পড়ুয়া থেকে আইআইটির আবাসিকরা। এমন সব ঘটনা রুখে জীবনকে কীভাবে হাসিখুশি রাখা যায় তার জন্য এ বার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলতে চলেছে আইআইটি। জানা গিয়েছে, আইআইটির প্রাক্তনী সতিন্দর সিংহ রেখির সহযোগিতায় ‘রেখি সেন্টার ফর হ্যাপিনেস’ নামে এই কেন্দ্রে বেশ কিছু স্বল্প মেয়াদী কোর্স চালু করতে চলেছে। চার সপ্তাহের এই কোর্সে ১০ থেকে ১৪ ঘন্টা পড়ানো হবে। সেখানে আধ্যাত্মিক চেতনার সঙ্গে বিজ্ঞানের মেলবন্ধনে কীভাবে আনন্দে থাকা যায় সেটাই শেখানো হবে। কেন্দ্রের ইন-চার্জ আইআইটির হিউম্যানিটিস অ্যান্ড স্যোশাল সায়েন্সের অধ্যাপক প্রিয়দর্শী পট্টনায়েক বলেন, “কোর্সের সিলেবাস এখনও ঠিক হয়নি। তবে এই কোর্সে পড়ুয়ারা একটি করে ক্রেডিট পাবেন।”

পড়ুয়াদের মানসিক অবস্থা বুঝতে ২০০৯ সাল নাগাদ আইআইটি একটি কাউন্সেলিং সেন্টার চালু করে। সেই সঙ্গে আইআইটি-র পড়ুয়াদের নিয়েই ‘স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার গ্রুপ’ তৈরি হয়। গ্রুপে প্রতিটি হল (হস্টেল) থেকে তিন থেকে চারজন পড়ুয়াকে কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব দেওয়া হয় অন্য ছাত্রদের ওপর নজরদারির জন্য। সেই অনুযায়ী কোনও পড়ুয়ার মধ্যে অস্বাভাবিকত্ব ধরা পড়লেই তাঁকে বুঝিয়ে কাউন্সেলিং সেন্টারে আনার কথা ওই কো-অর্ডিনেটরদের।তবে ২০১৪ সালের ১৭ মার্চ হোলির দিনে মদনমোহন মালব্য হলে বোগা শ্রবণ নামে এক এমটেক পড়ুয়ার ঝুলন্ত দেহ মেলে। জানা গিয়েছিল, আশানুরূপ চাকরি না পাওয়াতেই সে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ওই বছরেরই ৩১ মার্চ রাধাকৃষ্ণণ হলে ডুয়াল ডিগ্রি কোর্সের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া লোকেশ কুমার গোয়েলের (২২) দেহ উদ্ধার হয়। এমন ঘটনাই প্রমাণ করে কাউন্সেলিং সেন্টার খুলেও পড়ুয়াদের মনের আঁধার কাটানো যায়নি।

ফলে নতুন এই কেন্দ্র নিয়ে উৎসাহী পড়ুয়ারা। ধাতুবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সৌভিক ভৌমিক বলেন, “পড়াশোনার জন্য আমাদের চাপ রয়েছে তেমনটা নয়। তবে আমি কেন সেরা হব না এই নিয়ে মানসিক চাপ থাকে। নিজের জীবনের ভারসাম্য বুঝে আনন্দ থাকার উপায় শিখতে পারলে ভাল লাগবে।’’ এই কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ইলেক্ট্রিক্যালের গবেষক ছাত্রী অন্বেষা সেনগুপ্তর কথায়, ‘‘এই কেন্দ্রে অবসাদগ্রস্তের চিকিৎসা নয়, কীভাবে নিজের সমস্যার সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রেখে খুশিতে থাকা যাবে সেটাই উদ্দেশ্য।”

নতুন এই কেন্দ্র পড়ুয়াদের মনের আঁধার কাটাতে কতটা সাহায্য করে, বলবে সময়ই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন