Illegal Mud Mining

আইনের ফাঁক গলেই মাটি কাটা, রাশে তৎপরতা কই!

জমি থেকে মাটি কাটা এবং তা ব্যবহারের সরকারি নানা নিয়ম রয়েছে। তবে সে সব খাতায় কলমেই।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল     শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৯
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আইন ভাঙলে হয় জরিমানা। আর জরিমানা গোনাটাই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝের ক’দিন বন্ধ থাকলেও জেলা জুড়ে ফের রমরমিয়ে চলছে ‘জরিমানা’ দিয়ে মাটি কাটা।

Advertisement

ঘাটাল-সহ গোটা পশ্চিম মেদিনীপুরে যথেচ্ছ মাটি চুরির অভিযোগ বহুদিনের। জেলা পুলিশ-প্রশাসনের ধড়পাকড়ে কয়েক মাস আগে বেশ কিছুদিন মাটি কাটা বন্ধ ছিল। এখন অবশ্য যে কে সেই! এক সময় ভূমি দফতরের ‘ডুপ্লিকেট কার্বন কপি’ (ডিসিআর) নিয়েই মাটি ‘বিক্রি’ চলছিল। সরকারি ভাবে ওই ডিসিআর আসলে ছিল জরিমানা আদায়ের একটি পন্থা। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ ও প্রশাসন তৎপর হওয়ার সূত্রে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল ভূমি দফতরের ওই ডিসিআর। বহু বছরের পুরনো পদ্ধতি এখন বদলে হয়েছে ‘গ্রিপস’ (গভনর্মেন্ট রিসিটস পোর্টাল সিস্টেম)। এই মাধ্যমে অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে মাটি কাটা চলছে। ফলে সরকারি কোষাগারে অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে মাটি ‘চুরি’ চলছেই।

অনেকে মনে করা করাচ্ছেন, ডিসিআর হোক কিংবা গ্রিপস্ সিস্টেম— দুই মাধ্যমেই ভূমি দফতরের লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হয়। গত আর্থিক বছরে (সেই সময় ছিল ডিসিআর) শুধু ঘাটাল মহকুমায় এই বাবদ ২ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা আদায় হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘাটাল মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সৌমিত্র সামন্ত। ‘গ্রিপস’ সিস্টেমে টাকা জমা বন্ধ করে মাটি কাটায় রাশ টানলে রাজস্বও আদায় বন্ধ হবে। সেই ক্ষতিপূরণ হবে কী ভাবে? এই প্রশ্নের জবাব স্পষ্ট নয়। ফলে, অগ্রিম টাকা মাটি কাটাও বন্ধ হয় না।

Advertisement

জমি থেকে মাটি কাটা এবং তা ব্যবহারের সরকারি নানা নিয়ম রয়েছে। তবে সে সব খাতায় কলমেই। নিয়মমতো ‘গ্রিপস’ পদ্ধতিতে একবার টাকা জমা করলে (আগে ছিল ডিসিআর) সারা দিনে ৫-৬ গাড়ি মাটি বহন করা যায়। কিন্তু একবার সেই অনুমতি নিয়ে শয়ে শয়ে গাড়ি মাটি পাচার হয়ে যায় বলে অভিযোগ। সম্প্রতি পুলিশি তৎপরতায় মাটি ভর্তি ট্রাক্টর আটক হলেও ফের শুরু হয়ে গিয়েছে মাটি কাটা। সেই বেনিয়মেই পদ্ধতিতেই।

ঘাটালের মহকুমা পুলিশ অফিসার অগ্নিশ্বর চৌধুরী অবশ্য বলছেন, “যথেচ্ছ ভাবে মাটি কাটায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কাও তৈরি হয়। সরকারি নিয়ম মেনে মাটি কাটতে হবে। অনুমতি না নিয়ে মাটি কাটলে আইনানুগ পদক্ষেপনেওয়া হবে।”নিয়ম হল যে কেউ ব্যক্তিগত জমি থেকে মাটি কাটতে পারবেন। তবে সেই মাটি তাঁর নিজের জমিতেই ব্যবহার করতে হবে। সেই মাটি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না, বিক্রিও করা যাবে না। তবে ইট তৈরির জন্য ইটভাটা কর্তৃপক্ষকে মাটি কাটার অনুমতি দেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা দিতে হয়। একশো দিনের প্রকল্প বা সরকারি রাস্তার কাজেও প্রচুর মাটি প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা মাটি সরবরাহ করে। ওই মাটিও কিন্তু আগাম জরিমানা দিয়েই কাটা হয়। সব মিলিয়ে কৃষিজমি হোক বা খাল-নদীর পাড়— যথেচ্ছ ভাবে মাটি কাটা চলছে। জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অবশ্য দাবি, অনুমতি না নিয়ে মাটি কাটলে গাড়ি ধরে নির্দিষ্ট নিয়মে জরিমানা আদায় করা হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক তথা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সুমন সৌরভ মহান্তি বলেন, “মাটি বিক্রির কোনও নিয়ম নেই। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন সতর্ক। অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে কোথাও মাটি কাটা হয়, এমন খবর জানা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন