বাগানের ‘দ্বীপে’ শতাধিক কচ্ছপ, প্রাণ বাঁচানোর ব্রত প্রাণনাথের

বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করে আনা কচ্ছপ পরম মমতায় দেখভাল করেন প্রাণনাথবাবু।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৯ ০০:০২
Share:

আপনমনে: দ্বীপে কচ্ছপের দল। (ইনসেটে) প্রাণনাথ শেঠ। নিজস্ব চিত্র

দোতলা বাড়ির পিছনে বাগান। সেখানে রয়েছে আম, জামরুল, লেবু, নারকেল, বাঁশ-সহ নানা জাতের গাছ। ওই গাছের ‘জঙ্গলে’ পরিখা কেটে বানানো হয়েছে ছোট্ট একটি দ্বীপ। সেখানে ঘুরে বেড়াচ্ছে শতাধিক কচ্ছপ।

Advertisement

হলদিয়ার পেট্রোক্যামিক্যালসের পাশে স্কুল শিক্ষক প্রাণনাথ শেঠের বাড়িতে রয়েছে কচ্ছপদের ওই ‘সংরক্ষণশালা’। যেখানে বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করে আনা কচ্ছপ পরম মমতায় দেখভাল করেন প্রাণনাথবাবু। তাঁর পরিবার জানাচ্ছে, প্রাণনাথ একা একা নিজের মতো কথাও বলেন কচ্ছপদের সঙ্গে।

প্রাণনাথ জানাচ্ছেন, খুব ছোট বেলা থেকে বাজারে কচ্ছপ বিক্রি হতে দেখতেন। অনেকের বাড়িতে তা খাওয়াও হতো। বিষয়টি তাঁকে ভাবিয়েছিল। পরে জীববিদ্যার শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবনে প্রবেশ করে তিনি কচ্ছপের গুরুত্ব বোঝাতে তাদের উদ্ধার করে নিজের বাড়ির ‘দ্বীপে’ রাখতে শুরু করেন। বিজ্ঞান মঞ্চের সক্রিয় কর্মী প্রাণনাথ জানিয়েছেন, কচ্ছপ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য খেয়ে বাঁচে। জলাভূমিতে মরা, গলা, পচা, ময়লা জিনিস খেয়ে জলকে পরিষ্কার করে দেয়। মশার লার্ভাও খায় তারা। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে কচ্ছপের ভূমিকা রয়েছে। কচ্ছপ বাঁচানোর পাশাপাশি বিবিন্ন স্কুলে গিয়ে ওই বিষয়গুলি ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে প্রচারও করেন প্রাণনাথ।

Advertisement

জীববিদ্যার এই শিক্ষক বলেন, ‘‘দুর্গাচকে এবং এলাকার বিভিন্ন বাজারেও লুকিয়ে কচ্ছপ বিক্রি হয়। ওদের সংরক্ষণের কথা ভেবেই পড়াশোনা করলাম। তারপর ওদের থাকার মত করে ঘরেই একটা পরিবেশ বানালাম।’’ প্রাণনাথ জানান, পূর্ব মেদিনীপুরে তিল কাছিম, জটা কাছিম, ধুম কাছিম, সোনা কাঠা, কাল হলুদ কাছিম, সবুজ কাছিম, চিত্রা কাছিম পাওয়া যায়। হলদিয়ায় কোথাও কচ্ছপ বিক্রি হলে লোকে তাঁকে খবর দেন। তিনি কখনও বুঝিয়েসুঝিয়ে, আবার কখনও কিনে বাড়ি নিয়ে আসেন। এছাড়া, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরাও অনেক সময় তাঁকে কচ্ছপ উদ্ধার করে এনে দেয়। কেউ ধরলে তাদের বাধা দেয়। এই ভাবেই আট– ১০টা কচ্ছপ থেকে বর্তমানে শতাধিক কচ্ছপ হয়েছে প্রাণনাথের ‘শেল্টারে’।

কিন্তু বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইনে এভাবে বাড়িতে কচ্ছপ রাখা দণ্ডনীয় অপরাধ। ১৯৭২ সালের ওই আইন অনুসারে, কোনও ব্যক্তির সর্বাধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং সাত বছর জেল হতে পারে। তা জেনে একজন শিক্ষক হয়েও আপনি তো আইন ভাঙছেন? এ ব্যাপারে প্রাণনাথ বলেন, ‘‘আমি ওদের রক্ষা করেছি। ওদের বন্দি তো করে রাখিনি। বন দফতর যদি এতে ওদের উদ্ধার করে নিয়ে যায়, তাহলে আমি খুশিই হব। আমি চাই ওরা বেঁচে থাকুক।’’

বাড়িতে এত কচ্ছপ রাখা যায় কি? প্রশ্ন করা হয়েছিল নন্দকুমার রেঞ্জের আধিকারিক প্রকাশ মাইতি। প্রাণনাথের কাজের প্রশংসা করলেও তাঁর সাফ জবাব, ‘‘উনি নিঃসন্দেহে ভাল কাজ করেছেন। কিন্তু আইনত তিনি এটা করতে পারেন না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন