নির্দল কাঁটা সরিয়ে ঘাসফুল ফোটাতে মরিয়া বিদায়ী পুরপ্রধান

লড়াইটা এখানে একদম সেয়ানে সেয়ানে। পুরভোটে তমলুক পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল বনাম নির্দল। কংগ্রেস, বাম বা বিজেপি কেউই এখানে প্রার্থী দেয়নি। ওই ওয়ার্ডে তমলুকের বিদায়ী পুরপ্রধান তথা তৃণমূল প্রার্থী দেবিকা মাইতির লড়াই এ বার নির্দল প্রার্থীর অলক সাঁতরার বিরুদ্ধে।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৮
Share:

ভোট প্রার্থনা। তমলুকে তোলা নিজস্ব চিত্র।

লড়াইটা এখানে একদম সেয়ানে সেয়ানে।

Advertisement

পুরভোটে তমলুক পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল বনাম নির্দল। কংগ্রেস, বাম বা বিজেপি কেউই এখানে প্রার্থী দেয়নি। ওই ওয়ার্ডে তমলুকের বিদায়ী পুরপ্রধান তথা তৃণমূল প্রার্থী দেবিকা মাইতির লড়াই এ বার নির্দল প্রার্থীর অলক সাঁতরার বিরুদ্ধে।

গতবারও দেবিকাদেবীর বিরুদ্ধে এক মাত্র নির্দল প্রার্থী ছিলেন অলকবাবুর স্ত্রী প্রাক্তন কাউন্সিলর বিদ্যুৎপর্ণা সাঁতরা। এ বার দেবিকাদেবীর বিরুদ্ধে সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি অলকবাবুকেই সমর্থন করছে। প্রশ্ন উঠছে, দেবিকাদেবীকে হারাতে কেন বিরোধী দলগুলি নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে? অলকবাবুর দাবি, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবেই লড়াই করছেন। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি যুক্ত নন। তিনি বলেন, ‘‘এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা বিদায়ী পুরপ্রধানকে হারাতেই প্রার্থী হয়েছি। আর এ জন্যই সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপি আমাকে সমর্থন করছে।’’ তাঁর দাবি, তৃণমূলের একাংশ কর্মী-সমর্থকদের সমর্থনও তাঁর সঙ্গে রয়েছে।

Advertisement

যদিও অলকবাবুর দাবি উড়িয়ে দেবিকাদেবীর অভিযোগ, ‘‘অলকবাবু আদতে বামফ্রন্টের প্রার্থী। ২০০৫ সালে পূর্বতন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে অলকবাবুর স্ত্রী বিদ্যুৎপর্ণাদেবী বাম সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন। তৎকালীন বাম পুরবোর্ডকে তিনি সমর্থন করেন।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘গতবার নির্বাচনেও বিদ্যুৎপর্ণাদেবী নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছিলন। আর এ বার বামফ্রন্টের প্রার্থী তালিকায় অলকবাবুর নাম রয়েছে। আর এখানে কংগ্রেস ও বিজেপি’র সংগঠন নেই বললেই চলে। ফলে উনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে নিজেকে দাবি করে এলাকার মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।’’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, পূর্ব মেদিনীপুরের বামেদের সংগঠন এমনিতেই ক্ষয়িষ্ণু। সন্ত্রাসের অভিযোগে এ বার সরকারিভাবে প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করেনি বামেরা। প্রচারও চলছে পতাকা ছাড়াই। পুরভোটে ভাল ফল করতে বাড়ি বাড়ি প্রচারেই জোর দিচ্ছে দলের জেলা নেতৃত্ব।

প্রশ্ন উঠছে, সাংগঠনিক দুর্বলতার জন্যই কী দেবিকাদেবীর বিরুদ্ধে বামেরা প্রার্থী দিতে পারল কেন?

সাংগঠনিক খামতির কথা মানতে অবশ্য নারাজ সিপিএমের স্থানীয় শাখা সম্পাদক সুখেন্দু মাইতি। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘অলকবাবু মানুষের বিপদে ছুটে যান। উনি আমাদের সমর্থন চেয়েছিলেন। এক জন ভাল মানুষ হিসেবেই অলকবাবুকে আমরা সমর্থন করেছি।’’ কিন্তু ওই নির্দল প্রার্থীকে বিজেপিও তো সমর্থন জানিয়েছে? সুখেন্দুবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি কেন অলকবাবুকে সমর্থন করেছে সেটা তাঁদের দলের বিষয়। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’’

দলীয় সূত্রে খবর, ২০০০ সাল থেকে দু’দফায় ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন দেবিকাদেবী। ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের পর ২০১০ সালে ১৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হন দেবিকাদেবী। ২০১০ সালের পুরভোটে মাত্র ২৪ ভোটে জিতে তমলুক পুরসভার প্রথম মহিলা পুরপ্রধান হন দেবিকাদেবী। কিন্তু এ বার লড়াইটা ভিন্ন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, ওই ওয়ার্ডে গত বারের থেকে জয়ের ব্যবধান বাড়ানো নিয়ে কিছুটা হলে চাপে রয়েছে তৃণমূল। এ বার প্রচারে নির্দল প্রার্থীকে টেক্কা দিতে মরিয়া দেবিকাদেবী।

প্রচারে অলকবাবু পূর্বতন ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর থাকার সময় স্ত্রী বিদ্যুৎপর্ণাদেবীর আমলের বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরছেন। একইসঙ্গে, দুর্নীতির অভিযোগেও দেবিকাদেবীকে কাবু করতে চাইছেন তিনি। অলকবাবুর অভিযোগ, ‘‘পুরপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও গত পাঁচ বছরে দেবিকাদেবী এলাকায় কোনও নতুন কাজ করতে পারেননি। আমাদের কাজের উপর তাপ্পি মেরে গিয়েছে।’’ এ প্রসঙ্গে দেবিকাদেবী বলেন, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। গত পাঁচ বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার যে সব কাজ হয়েছে, তাঁর বেশির ভাগই শালগেছিয়া এলাকায়। এরমধ্যে বড় নিকাশি নালা ও রাস্তা তৈরির জন্য বেশি টাকা খরচ করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন