কুড়ুলের কোপে দু’ফাঁক শ্বাসনালী জুড়ল অস্ত্রোপচারে

মঙ্গলবার ভাইপোর হাতে গুরুতর জখম ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া অঞ্চলের ঠাকুরথান গ্রামের পাঁচুবাবু। রাত ৯টা নাগাদ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪৮
Share:

চিকিৎসা: অস্ত্রোপচারের পর সিসিইউ-এ রোগীর সঙ্গে চিকিৎসক সৌরীশ সেন (বাঁ দিকে) ও গৈরিক মাজি। —নিজস্ব চিত্র।

কুড়ুলের কোপে শ্বাসনালী দু’ফাঁক হয়ে গিয়েছিল বছর পঞ্চান্নোর পাঁচু বাগের। বাঁচার আশা ছিল না বললেই চলে। তবু নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে। রেফার করা হয়নি সঙ্কটজনক রোগীকে। বরং ঝুঁকি নিয়েই পাঁচুবাবুর কাটা গলা জোড়া লাগিয়েছেন চিকিৎসকরা।

Advertisement

মঙ্গলবার ভাইপোর হাতে গুরুতর জখম ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়া অঞ্চলের ঠাকুরথান গ্রামের পাঁচুবাবু। রাত ৯টা নাগাদ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রেফার না করে হাসপাতালেই অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন কর্তৃপক্ষ। ১০টার মধ্যে ইএনটি সার্জেন সৌরীশ সেন, জেনারেল সার্জেন গৈরিক মাজি এবং অ্যানাস্থেটিস্ট প্রসূন ঘোষ অস্ত্রোপচার শুরু করেন। দু’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে সঙ্গে ছিলেন নার্স রীতা কুইল্যাও। আর তাঁরাই গড়ে ফেললেন একটা নজির— রেফার না করেও ঝুঁকিপূর্ণ জটিল অস্ত্রোপচার করা যায়।

আরও পড়ুন: চিকিৎসকদের নির্দেশ, ডেঙ্গির বদলে লিখুন...

Advertisement

সে ক্ষেত্রে শুধু সদিচ্ছা নয়, চিকিৎসকেরা বলছেন পরিকাঠামোর উন্নতিটাও অনেক বড় বিষয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বলছেন, আগে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে জটিল অস্ত্রোপচার হত না। কারণ তখন হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) ও ভেন্টিলেশনের সুবিধা ছিল না। বছর চারেক আগে এমনই শ্বাসনালী কাটা এক রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছিল ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে। কিন্তু ভেন্টিলেশন ব্যবস্থার অভাবে সেই রোগীকে কলকাতার এসএসকেএম-এ পাঠানো হয়েছিল।

তবে অস্ত্রোপচারের পর পাঁচুবাবুকে ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটির সিসিইউ-তে রাখা হয়েছে। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে কয়েক মাস তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হবে। চিকিৎসক সৌরীশ সেন ও গৈরিক মাজি জানালেন, ধারালো অস্ত্রে রোগীর গলায় প্রায় চার ইঞ্চি লম্বা ও আড়াই ইঞ্চি গভীর হয়ে কেটে গিয়েছিল। শ্বাসনালীও দু’ফাঁক হয়ে কেটে গিয়েছিল।

গলার কাটা জায়গা জোড়া দেওয়ার আগে গলার একটু নিচের দিকে ফুটো করে ৮ মিলিমিটার ব্যাসের ‘ট্র্যাকিওস্টমি টিউব’ ঢোকানো হয় রোগীর কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চালানোর জন্য। সফল ভাবে অস্ত্রোপচার পর্ব শেষ হয় রাত ১২ টা নাগাদ। ইনএনটি সার্জেন সৌরীশ সেন বলেন, ‘‘রোগী সুস্থ হয়ে উঠলে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসের টিউবটি খুলে শ্বাসনালী পুনর্নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’’

হাসপাতালের সুপার মলয় আদক বলেন, “এই ধরনের অস্ত্রোপচার (‘লো ডাউন ট্রাকিওস্টমি’) করার ক্ষেত্রে খুব ঝুঁকি থাকে। সৌরীশবাবুর নেতৃত্বে সফল ভাবে অস্ত্রোপচার করে রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। এটা আমাদের বড় সাফল্য।”

বুধবার হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে পাঁচুবাবুর স্ত্রী চঞ্চলা বাগ জানান, তাঁরা দিনমজুরি করে সংসার চালান। মঙ্গলবার রাতে ঠাকুরথান গ্রামে তাঁদের বাড়িতে কয়েকজন নিমন্ত্রিতকে মনসা পুজোর ভোগ খাওয়ানো হচ্ছিল। সেই সময় দেওরের ছেলে বছর পঁচিশের বিপ্লব মদ্যপ অবস্থায় এসে পাঁচুবাবুর সঙ্গে ভাগ চাষের পাওনা গণ্ডা ঝামেলা শুরু করে। পাঁচুবাবু রেগে ভাইপোকে চড় কষিয়ে দেন। রাগের মাথায় বিপ্লব কুড়ুল দিয়ে জ্যেঠাকে মাথায় ও গলায় কোপ মারে। সঙ্গে সঙ্গে পাঁচুবাবুকে ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশ্যালিটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ঘটনার পর থেকে বিপ্লব পলাতক। পাঁচুবাবুর সফল অস্ত্রোপচারের পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন পরিজনেরা।

গুরুতর রোগী এলেই রেফার করার প্রবণতা রয়েছে একাংশ চিকিৎসকের। কিছুদিন আগে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জেলার স্বাস্থ্যকর্তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন অযথা রেফার করা হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। ঝাড়গ্রামের সিএমওএইচ অশ্বিনী মাঝি বলেন, “পরিকাঠামোর উন্নতির কারণেই রেফার না করে অত্যাধুনিক জটিল ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন