পুজোর সাত দিন আগেও প্রায় ফাঁকা খড়্গপুর গোলবাজার। শনিবার সন্ধ্যায়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাত তখন ন’টা। পুজোর আগে ভিড়ে ঠাসা খড়্গপুরের গোলবাজার। সকলের সামনেই ঘটে গেল মারাত্মক সেই ঘটনা। বেধড়ক মারধরে জন্মদিনেই প্রাণ গেল তরতাজা এক তরুণের। ক্ষোভের আগুনে পুড়ল একের পর এক দোকান। ঝাঁপ বন্ধ হল বাজারের। শেষে পুলিশি নিরাপত্তার আশ্বাসে চারদিন পরে গোলবাজার খুলেছে বটে। তবে পুজোর মুখেও কেনাকাটায় প্রাণ ফেরেনি।
পুজোর সাত দিন আগেও গোলবাজারে তাই ভিড় নেই। দিনের আলোয় তা-ও কিছু লোকজন আসছেন, কিন্তু সন্ধে নামলেই পাতলা হচ্ছে ভিড়। মূলত নিরাপত্তার কারণেই যে রেলশহরের সব থেকে বড় বাজার থেকে ক্রেতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, তা স্পষ্ট ব্যবসায়ীদের কথায়। গোলবাজারের দোকানি অঙ্কুশ ত্রিবেদী, শ্যামল সাহারা বলছিলেন, “সম্প্রতি গোলবাজারে খুনের পরে নিরাপত্তার অভাবে ক্রেতারা বাজারে আসতে চাইছেন না। তার উপরে পার্কিং-সহ নানা পরিকাঠামোগত সমস্যাও আছে। শহরের মানুষ এখন শপিং মল, কলকাতায় কেনাকাটা করতে চলে যাচ্ছেন। আমাদের লোকসান হচ্ছে।”
ব্রিটিশ জমানায় গড়ে ওঠা গোলবাজার দীর্ঘদিন ধরেই জবরদখলের শিকার। ক্রমে বাজারের রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়েছে, দোকান উঠে এসেছে রাস্তায়। নির্দিষ্ট পার্কিং জোন না থাকায় মোটরবাইক, গাড়ি নিয়ে ক্রেতারা ঢুকে পড়লে জট বাড়ছে। দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় মোটরবাইক, গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় মাঝেমধ্যে অশান্তিও হচ্ছে। এ দিন সকালে দেবলপুরের বাসিন্দা সুনিতা কুমারী গোলবাজারে এসেছিলেন স্কুটি নিয়ে। কিন্তু স্কুটি রাখার জায়গা নেই। বিরক্ত সুনিতাদেবী বলছিলেন, “এই বাজারে একটা স্কুটি রাখারও জায়গা নেই। রাস্তা আটকে সব জামাকাপড়ের দোকান। একটু ঠোকাঠুকি হলেই অশান্তি। নিরাপত্তার অভাবও রয়েছে।’’ রেলকর্মী শান্তনু দত্তেরও মত, “গোলবাজারে নিরাপত্তার অভাবে সাধারণ মানুষ যাচ্ছে না।” পুলিশের অবশ্য দাবি, এখানে নিরাপত্তাজমিত কোনও সমস্যা আপাতত নেই। ওই খুনের ঘটনার পর থেকে গোলবাজারে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। চলছে টহলদারি।
শুধু নিরাপত্তা নয়, রয়েছে অন্য পুরনো এই বাজারে মহিলাদের ব্যবহারের উপোযোগী শৌচালয় পর্যন্ত নেই। এই অবস্থায় ক্রেতারা গোলবাজার ছেড়ে ছুটছেন শহরের নিউ সেটলমেন্টের একমাত্র শপিং মলে। তবে সেখানে শহরের সর্বত্র ব্র্যান্ডেড পোশাকের শোরুম নেই। তাই পাশের শহর মেদিনীপুর বা কলকাতায় ছুটছেন খড়্গপুরের বাসিন্দারা। তবে রেলশহরে এই শপিংমলেও সেই পরিকাঠামোর অভাব। রেল বিদ্যুৎ না দেওয়ায় দিনভর জেনারেটর চলে। তাই শোরুমের ভাড়া অনেক বেশি। তাই একাধিক ব্র্যান্ডের শোরুম বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
মেদিনীপুরের বড়বাজারে আবার যত্রতত্র পার্কিয়ে পথচলাই দায়। নিজস্ব চিত্র।
মেদিনীপুরের অন্যতম প্রধান বাজার বড়বাজার আবার যানজটে নাকাল। বাজারে ঢোকার আগে পুলিশ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা অটো-টোটো-রিকশা আটকে দিচ্ছেন। কিন্তু তাতেও খুব একটা সুরাহা হচ্ছে না। বাজারে ঢোকার মুখে রাসময়রার চক বা মল্লিকবাজারের মতো জায়গা। পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবক থাকলেও বাজারের ভেতরে তারা নেই। ফলে, যে যেখানে পারছে সেখানেই রাখছে সাইকেল, মোটরসাইকেল। দোকানে ঢোকার রাস্তা আটকে যাচ্ছে। তারপর জট পাকানো তো সময়ের অপেক্ষা। স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে বাজার করতে আসা লাল্টু সাহার কথায়, “অন্য বছরের তুলনায় যানজট কমেছে ঠিক। কিন্তু বাজারের ভেতরে নিয়ম মেনে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা জরুরি।’’
ভবিষ্যতে এই সমস্যা কাটাতে বাজারের ভেতরেও স্বেচ্ছাসেবক রাখা হবে বলে জানান ‘কনফেডারেশন অফ পূর্ব অ্যান্ড পশ্চিম মেদিনীপুর চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর শহর সম্পাদক চন্দন রায়। তিনি বলেন, “এ বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী দিনে বাজারের ভেতরেও নির্দিষ্ট লাইন করে মোটর সাইকেল ও সাইকেল রাখার ব্যবস্থা করব।’’ ক্রেতাদের সুবিধার্থে এ বারও এই ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে। পানীয় জল, প্রয়োজনে চিকিৎসকও মিলছে। রয়েছে সুলভ শৌচালয়। বাজারে ঢোকার মুখে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে। বাজারে আসা লোকজনকে এ সব জানাতে মাইকে চলছে প্রচার।