শেখার কি বয়স আছে! স্লেটই সঙ্গী ষাট পেরনো ছাত্রীর

গড়বেতা ১ ব্লকের আমকোপা পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম রেংটা। গ্রামের চুন-সুরকির মাটির এক বাড়িতে লেখাপড়ার অধ্যবসায়ের কাছে হার মেনেছে বয়স। ৬৩ বছরের বৃদ্ধা বিভা ঠাকুর এখনও নাতি নাতনিদের কাছে পড়তে বসে যান। স্লেট, পেন্সিল নিয়ে নিজের নাম, ঠিকানা লেখেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গড়বেতা শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:১৮
Share:

নাতির কাছেই পড়াশোনা। নিজস্ব চিত্র

বন্ধ হয়ে গিয়েছে নাইট স্কুল। বন্ধ হয়নি বৃদ্ধার লেখাপড়া।

Advertisement

গড়বেতা ১ ব্লকের আমকোপা পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম রেংটা। গ্রামের চুন-সুরকির মাটির এক বাড়িতে লেখাপড়ার অধ্যবসায়ের কাছে হার মেনেছে বয়স। ৬৩ বছরের বৃদ্ধা বিভা ঠাকুর এখনও নাতি নাতনিদের কাছে পড়তে বসে যান। স্লেট, পেন্সিল নিয়ে নিজের নাম, ঠিকানা লেখেন। দশম শ্রেণির ছাত্র নাতি বা কলেজ পড়ুয়া নাতনির কাছ থেকে শিখে নেন কীভাবে সই করতে হয়।

অভাবের সংসারে বাবা-মা পড়াতে পারেননি। কিন্তু পড়ার প্রতি আগ্রহটা ছোটে থেকেই ছিল বিভাদেবীর। কিন্তু সংসারের চাপে পড়াশোনার চাপে সে সুযোগ হয়নি। সুযোগ আসে ১৯৯২ সালে। অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় তখন সাক্ষরতা আন্দোলন গতি পাচ্ছে। গ্রামে গঞ্জে খোলা হচ্ছে নাইট স্কুল— ঈশ্বরচন্দ্র জনচেতনতা কেন্দ্র। রেংটা গ্রামের পাশের গ্রাম তেলিজাতে সেইসময় খোলা হয় একটি নাইট স্কুল। তালপাতার চাটাই পেতে হ্যারিকেনের আলোয় সাক্ষর অভিযান শুরু হয় জোরকদমে। প্রথম রাত থেকেই সেই স্কুলের ছাত্রী বিভা ঠাকুর। শুক্রবার দুপুরে নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসে তিনি বললেন, ‘‘তখন আমাদের দিদিমণি ছিলেন গ্রামের বাসন্তী সরকার। আমি একদিনও স্কুল কামাই করতাম না। রাতের রান্না বিকেলেই সেরে চলে যেতাম। সেখানে নামসই থেকে যোগ বিয়োগ শিখে ছিলাম। বানান করে করে পড়তাম।’’ এই স্কুলে পড়ে বিভাদেবী হিসাবপত্র শেখেন। রোজগারের আশায় শাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর দলনেত্রী হন।

Advertisement

বছর কয়েক চলার পর স্তিমিত হয়ে আসে সাক্ষরতা আন্দোলন। বন্ধ হয়ে যায় নাইট স্কুলগুলি। সদ্য সাক্ষর হওয়া মানুষগুলো ভুলতে বসে লেখাপড়া। বন্ধ হয়ে যায় বিভাদেবীর শাড়ির ব্যবসা। কিন্তু বন্ধ হয়নি তাঁর ‘সাক্ষর’ হওয়ার লড়াই। ইচ্ছাশক্তির জোরে নিজের মতো করেই লেখাপড়া চালিয়ে যান তিনি। এরই মধ্যে স্বামী দেবব্রত ঠাকুরকে হারিয়েছেন। ছেলেমেয়ের বিয়ে দেন। নাতি নাতনি হয়। হাজারো ব্যস্ততার মাঝেও থেমে থাকেনা বিভা দেবীর লেখাপড়া। নাতি রাজকুমার বলে, ‘‘ঠাকুমা এখনও আমাদের কাছে শেখে। দিদি ও আমি পড়ার ফাঁকেই স্লেট-পেন্সিলে শিখিয়ে দিই।’’

জেলায় বয়স্ক শিক্ষার সুযোগ আছে কি? পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় এই মুহূর্তের বয়স্ক শিক্ষার বিশেষ কোনও প্রকল্প নেই। তবে বিভিন্ন বিভাগ থেকে কিছু কিছু কর্মসূচি নেওয়া হয়।’’ নাই বা থাকল সরকারি সুযোগ। থামতে রাজি নন বিভাদেবী। আজ, শনিবার বিশ্ব স্বাক্ষরতা দিবস। তবে এতকিছু বোঝেন না বিভাদেবী। তাঁর একটাই বক্তব্য, ‘‘শেখার কী আর বয়স আছে বাবা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন