প্রাণ-হাতে: মরণকুয়ো। নিজস্ব চিত্র
বৃত্তাকার ভাবে একের পর এক কাঠের পাটাতন পাশাপাশি জুড়ে তৈরি হয়েছে বিশাল কূপ। যা প্রায় ২০-২৫ ফুট উঁচু। চারপাশের কাঠের পাটাতনের ওই দেওয়ালের উপর দিয়েই দূরন্ত গতিতে ছুটে চলেছে একাধিক মোটর বাইক ও মারুতি। কূপের উপরের দিকে দর্শকদের জন্য দাঁড়ানোর ব্যবস্থা। যেখানে থেকে ঝুঁকির এই খেলা দেখতে উপচে পড়ে ভিড়। বিভিন্ন মেলায় এই খেলার পরিচিতি ‘মরণকুয়া’ নামে। খেলা দেখাতে গিয়ে, কিংবা খেলা দেখতে গিয়ে দুর্ঘটনার একাধিক ঘটনাও রয়েছে। কিন্তু তারপরেও বিভিন্ন পুজো কিংবা রথ উপলক্ষে মেলায় এই ধরনের খেলা চলতে থাকায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ইতিমধ্যেই হুগলি জেলা প্রশাসন এই খেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। অথচ রথ উপলক্ষে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় মেলায় ‘মরণকুঁয়া’র খেলা চলছে রমরম করে। মহিষাদলে রথের মেলাতেও দেখা গিয়েছে এই খেলা। কোথাও ৩০, কোথাও বা ২০ টাকার বিনিময়ে কয়েক মিনিটের আনন্দ পেতে শয়ে শয়ে ভিড় উপচে পড়ছে ‘মরণকুঁয়া’ র আসরে। যেখানে প্রতিপদে বিপদের সম্ভাবনা। সাধারণত তিন থেকে চারটি বাইক আর দুই থেকে তিনটি মারুতি নিয়ে খেলা দেখানো হয়। প্রাথমিক পর্বে মোটর বাইক এক এক করে কাঠের পাটাতন দিয়ে উপরে ওঠার চেষ্টা করে। ক্রমশ গতি বাড়তে বাড়তে কূপের উপরের দিকে উঠে আসে। ফের গতি কমিয়ে নীচে নামে। এই ভাবেই একাধিকবার চলে ওঠানামার খেলা। কয়েক বছর আগে হুগলি জেলায় এমন খেলা দেখতে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন বহু দর্শক। তারপর ওই জেলা প্রশাসন এই খেলাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। যাঁরা খেলা দেখান তাঁরা ছাড়াও দর্শকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়েই প্রশাসনের নাকের ডগায় কী ভাবে চলছে মরণকুঁয়ার খেলা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।
মহিষাদল রথ মেলা কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা তথা স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তিলক কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেলার আয়োজন করা হলে ওই খেলার লোকজন এসে যোগাযোগ করে। তাই তাদের অনুমতি দেওয়া হয়। মহকুমাশাসক ও পুলিশের কাছেও অনুমতি নিতে হয় ওদের। তাই আমাদের কোনও ঝুঁকি থাকে না।’’ মেলা কমিটিগুলি এমন যুক্তি দিলেও খেলা চলাকালীন কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় কে নেবে সে বিষয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হুগলিতে এই খেলা নিষিদ্ধ হলেও এই জেলায় তা রমরম করে চলায় তা কতটা বৈধ, সে বিষয়েও কার্যত উদাসীন জেলার পুলিশ কর্তারা।
হলদিয়ার এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কী ভাবে খেলা দেখানো হচ্ছে, কী কী নিয়ম মানা হচ্ছে তা জেনে বলতে পারব।’’ একই প্রতিক্রিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হলদিয়া) কাজী সামসুদ্দিন আহমেদের। তাঁর কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। ঝুঁকির খেলা হলেও, নিয়ম কানুন জেনেই বলতে পারব।’’
প্রশাসনের নিয়ম অবশ্য বলছে, সার্কাস কিংবা এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিনোদনের আসর বসাতে গেলে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেন সংশ্লিষ্ট মহকুমাশাসক। কিন্তু সেখানে নিরাপত্তার দিকগুলি যথাযত ভাবে মানা হচ্ছে কিনা তা নিয়ে প্রশাসনের কোনও মাথাব্যথা নেই বলে অভিযোগ।
হলদিয়ার মহকুমা শাসক কুহক ভূষণ বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। ওই ধরনের খেলার কোনও অনুমোদন ছিল না কিনা খতিয়ে দেখছি। তা ছাড়া ওই ধরনের খেলার জন্য কী নিয়ম রয়েছে তা ভাল করে জানতে হবে।’’