Contai

নবীন বরণেও গোষ্ঠী সংঘর্ষ টিএমসিপি’র

শুক্রবারও কাঁথির প্রভাতকুমার কলেজ এবং দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়ে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ সামনে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁথি শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২ ০৭:৪১
Share:

মুগবেড়িয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি এক টিএমসিপি কর্মী। নিজস্ব চিত্র

কলেজের নবীনবরণ অনুষ্ঠান চলাকালীন টিএমসিপি’র দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ধুন্ধুমার ঘটল ভূপতিনগরে। বৃহস্পতিবার রাতে মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়ে এই সংঘর্ষের ঘটনায় চারজন জখম হয়েছেন। যার মধ্যে দু’জন টিএমসিপি কর্মী তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি।

Advertisement

মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়ের নবীনবরণ অনুষ্ঠান ছিল বৃহস্পতিবার। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন জেলা সভাধিপতি উত্তম বারিক, যুব তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই রাত সাড়ে নটা নাগাদ দু’পক্ষের বচসা বেধে যায়। দু’দলই সশস্ত্র হামলায় জড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ, ভগবানপুর-২ ব্লক টিএমসিপি সভাপতি সৌম্যদীপ ষড়ঙ্গী এবং কাঁথি সাংগঠনিক জেলা টিএমসিপি সাধারণ সম্পাদক উদিত নারায়ণ মণ্ডলের নেতৃত্বে হামলা হয়। কলেজের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া শেখ সাত্তার, দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া বিশ্বজিৎ মাইতি এবং ব্লক টিএমসিপি’র সদস্য শান্তনু মাইতিকে বেধড়ক মারধর করা হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁদের তিনজনকে মুগবেড়িয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। পরে সেখানে আহতদের দেখতে যান কলেজের টিএমসিপি’র প্রাক্তন ইউনিট সভাপতি সুকান্ত খাটুয়া। অভিযোগ, সেই সময় মেরে তাঁরও নাক ফাটিয়ে দেওয়া হয়। শান্তনু এবং সুকান্তর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় দু’জনকে তমলুক জেলা সদর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন ধরে মুগবেড়িয়া গঙ্গাধর মহাবিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনের কর্তৃত্ব নিয়ে ব্লক টিএমসিপি সভাপতি সৌম্যদেব এবং কলেজের প্রাক্তন ইউনিট সভাপতি সুকান্ত খাটুয়ার শিবিরের বিরোধ চলছে। একাধিকবার সুকান্ত শিবিরের লোকেদের বিরুদ্ধে কলেজে ঢুকে ভাঙচুর এবং হামলার অভিযোগ রয়েছে। সুকান্তকে টিএমসিপি-র ইউনিট সভাপতির পথ থেকে সরিয়ে দেয় সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব। তারপর একক ভাবেই কলেজের নিয়ন্ত্রণ ছিল সৌম্যদেবের উপরে।

Advertisement

কলেজের স্নাতকোত্তর বিভাগের ছাত্র সুকান্ত বলেন, ‘‘আমরা সকলেই চেয়েছিলাম সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দ্রুত শেষ করতে। কিন্তু জোর করে আমাদের দলের ছাত্র সংগঠনের ব্লক সভাপতি অনুষ্ঠান দীর্ঘক্ষণ ধরে চালিয়ে যাচ্ছিল। সেই অবস্থায় বহিরাগতদের এনে বর্তমান পড়ুয়াদের উপরে হামলা হয়। চারজন জখম হয়েছে। সকলেরই মাথায়, নাকে ও পায়ে গুরুতর চোট রয়েছে। আমি এবং আরেক জন তমলুকে চিকিৎসাধীন। কলেজের এক ছাত্রীর সঙ্গেও খারাপ আচরণ করা হয়েছে।’’

অভিযোগ অস্বীকার করে কাঁথি সাংগঠনিক জেলা টিএমসিপির সাধারণ সম্পাদক উদিত নারায়ণ মণ্ডল বলেন, ‘‘অনুষ্ঠান চলাকালীন কিছু বহিরাগত মদ্যপ অবস্থায় কলেজ চত্বরে ঢুকে নোংরামি করছিল। পড়ুয়ারা তাদের বাইরে বের করে দেয়।’’ ব্লক টিএমসিপির সভাপতি সৌম্যদেবের অভিযোগ, ‘‘শুক্রবার সুকান্তর গোষ্ঠীর ছেলেরা কলেজের সামনে বাস ধরার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা দু’জন পড়ুয়াকে বেধড়ক মারধর করেছে। তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’’ টিএমসিপি’র দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে কলেজ চত্বরে উত্তেজনা ছড়ানোয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে যায় ভূপতিনগর থানার পুলিশ। তবে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কোনও পক্ষই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি বলে পুলিশের দাবি।

এদিকে শুক্রবারও কাঁথির প্রভাতকুমার কলেজ এবং দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়ে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে শাসক দলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ সামনে এসেছে। কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজে নবীন বরণ উপলক্ষে জেলা সভাপতি উত্তম বারিক, পুরসভার চেয়ারম্যান সুবল মান্না প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে ছিলেন না কলেজের পরিচালন কমিটির সভাপতি তথা কাঁথি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি। দলের একাংশ সূত্রে খবর, কিছুদিন ধরে সুপ্রকাশের সঙ্গে ওই কলেজের আর টিএমসিপি-র বর্তমান ইউনিট নেতৃত্বদের মধ্যে নানা বিষয়ে মতবিরোধ সামনে এসেছে। যদিও সুপ্রকাশ এ দিন দাবি করেন, ‘‘কলেজের নবীন বরণে আমন্ত্রিত ছিলাম। তবে কলকাতায় কাজ থাকায় উপস্থিত থাকতে পারিনি।’’ দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয়ে অবশ্য নির্বিঘ্নেই মিটেছে নবীন বরণ অনুষ্ঠান।

নবীন বরণ অনুষ্ঠানে কলেজের শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের গোষ্ঠী সংঘর্ষ নিয়ে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘কলেজের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ছাত্র সংসদের নির্বাচন করছে না রাজ্য সরকার। অথচ সেই ছাত্র সংসদের নাম করে নবীন বরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। আর সেই অনুষ্ঠানে কর্তৃত্ব কার হাতে থাকবে তা নিয়ে তৃণমূলের বিভিন্ন শিবিরের বিরোধ, সংঘর্ষ ঘটছে। সাধারণ পড়ুয়ারা আতঙ্কিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন