এ বার কি সন্ধি! ধমকের পরে জল্পনা তৃণমূলে

বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নেতাদের দাঁড় করিয়ে ভর্ৎসনা করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ বার্তা— মিটিয়ে নিতেই হবে নিজেদের মধ্যে বিরোধ।

Advertisement

  নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম ও মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০১:২৩
Share:

বক্তা: তৃণমূলের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র।

নেত্রীর কাছে বকুনি খেয়েছেন নেতারা। কর্মীরা বলছেন, এবার যদি হুঁশ ফেরে তবেই মঙ্গল।

Advertisement

ধমকের পর বৈঠকের তোড়জোড় জেলা তৃণমূলে। দলীয় সূত্রে খবর, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে কাল, রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের বর্ধিত বৈঠক হবে মেদিনীপুরে। থাকবেন দলের বিধায়কেরা, ব্লক সভাপতিরা।

বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নেতাদের দাঁড় করিয়ে ভর্ৎসনা করেছেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সাফ বার্তা— মিটিয়ে নিতেই হবে নিজেদের মধ্যে বিরোধ। নেত্রীর কড়া মনোভাবে খুশি তৃণমূলের নিচুস্তরের কর্মীরা। তাঁদের আশা, এবার হয়ত গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের রোগ কিছুটা হলেও সারতে পারে। কারণ, তা না হলে যে নেতারা পদ হারাতে পারেন। ইতিমধ্যে নেত্রী সরিয়ে দিয়েছেন, বিবদমান দুই নেতা কেশিয়াড়ির ব্লক সভাপতি জগদীশ দাস এবং কিসান ও ক্ষেতমজুর সংগঠনের খড়্গপুর মহকুমার সভাপতি ফটিক গিরিকে।

Advertisement

কেশিয়াড়িতে শুরু। এরপর কোথায়? জল্পনা শুরু হয়েছে তৃণমূলের অন্দরে। দাঁতনের বিধায়ক বিক্রম প্রধান এবং জেলা পরিষদের বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরিকে ‘ঝগড়া’ মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। নেত্রীর নির্দেশ শুনে কী বলছেন তাঁরা? বিধায়কের বক্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে কোনও গোলমাল নেই। বিগত দিনে আমার যে ভূমিকা ছিল তার হেরফের হবে না।’’ আর শৈবালবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাকে কী নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জানি না। পিছনের দিকে বসেছিলাম। শুনতে পাইনি।’’ শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো নেত্রীর ধমক খেয়েছেন। তাঁর উদ্দেশে নেত্রীর বার্তা, “আগে নিজের ব্লকটা সামলা।” শ্রীকান্তর নিজের এলাকা ভীমপুরে ভোটে ভরাডুবি হয়েছে তৃণমূলের। সেখানে এখন বিজেপির রমরমা। কীভাবে সামলাবেন নিজের এলাকা? শ্রীকান্ত বললেন, ‘‘টুকটাক কিছু এলাকায় ফল খারাপ হয়েছে। সব ঠিক হয়ে যাবে। দিদি যখন যা বলেছেন তাই করেছি। আগামী দিনেও করব।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলার তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতিকে ‘স্ট্রং’ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন নেত্রী। কী ভাবে আরও শক্তিশালী হবেন? অজিতবাবু বলছেন, ‘‘নেত্রীর নির্দেশ শিরোধার্য।’’

তৃণমূল সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম জেলায় পুরনোদের সরিয়ে দিয়ে একেবারে নতুন মুখদের সামনের সারিতে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঝাড়গ্রামে কংগ্রেস ও অন্য দলের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছেন জেলা নেতৃত্বের একাংশ। এই প্রেক্ষিতে ঝাড়গ্রাম জেলা ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গলমহলে বেশ কিছু নেতা-নেত্রীর ডানা ছাঁটা হতে পারে বলে বলে শাসকদলের অন্দরে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।

তবে পুরনোদের একেবারে বসিয়ে দিলে অন্য সমস্যাও রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিজেপির দলভারী হওয়া সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তা হলে? তৃণমূল সূত্রের খবর, নেত্রী এমন ব্যবস্থা করতে পারেন যাতে সাপও মরল, লাঠিও ভাঙল না। অর্থাৎ বারবার সতর্ক করার পরেও যে নেতা কথা শুনবেন না তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে দলে রাখা হতে পারে। তৃণমূলকর্মীদের একাংশ বলছেন, ‘‘শিয়রে বিপদ। তাই এবার বিবাদ ভুলে সন্ধি করতে পারেন নেতারা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন