প্রতীকী ছবি।
প্রচার চলছে প্রচারের মতো। তার পরেও গত এক মাসে শুধু ঘাটাল মহকুমাতেই ১২ জন নাবালিকার বিয়ের খবর এসেছে প্রশাসনের কাছে। বন্ধ করা গিয়েছে সবক’টি বিয়েই। বেসরকারি মতে নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা আরও অনেক বেশি।
নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করতে কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে চলছে লাগাতার প্রচারও। এরপরেও নাবালিকা বিয়ে চলতে থাকায় উদ্বেগে প্রশাসনিক কর্তারা। নাবালিকা বিয়ের প্রবণতা বন্ধ করতে এ বার স্কুল গুলিকে আরও নিবিড় ভাবে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যাম পাত্র জানান, এ বার স্কুল পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের অঙ্গীকার পত্রে সই করানোর চিন্তাভাবনা নেওয়া হচ্ছে। তাতে বলা থাকবে ১৮ বছরের আগে কোনও ভাবেই নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হবে না। অঙ্গীকার পত্রে যেমন ছাত্রীর সাক্ষর থাকবে, তেমনই সম্মতি থাকবে অভিভাবকদেরও।
প্রশাসন সূত্রে খবর, মেয়েদের স্কুল ছুট কমানো ও নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্যই ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কন্যাশ্রী প্রকল্পটি চালু করেছিলেন। তবে এই প্রকল্প চালুর পাঁচ বছর পরেও বাল্য বিবাহ কমার বদলে বাড়ছে কেন? জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের সাফ কথা, “প্রচার আরও বাড়াতে হবে। সঙ্গে এ বার সরাসরি মামলার পথেই এগোতে হবে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কন্যাশ্রী প্রকল্পে অষ্টম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়ারা বছরে ৭৫০ টাকা করে পান। আর উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরেও যদি কোনও মেয়ে বিয়ে না করে কলেজে ভর্তি হয়, তখন তাঁর পড়াশোনার খরচের জন্য একাকালীন ২৫ হাজার করে দেওয়া হয়। যে পরিবারের বাৎসরিক আয় এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত, সেই সব পরিবারের মেয়েরাই এই প্রকল্পের আওতায় আসতে পারে।
নাবালিকা বিয়ে বন্ধের জন্য একযোগে প্রচার চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন। চাইল্ড লাইনও পিছিয়ে নেই। পুরোহিত থেকে নাপিতদের নিয়ে শিবির, স্কুলে স্কুলে প্রচারও হচ্ছে। এ বার ঘরে ঘরে প্রচারের সিদ্ধান্তও নিয়েছে প্রশাসন। ঘাটালের মহকুমাশাসক পিনাকিরঞ্জন প্রধান দাবি করছেন, “আগের চেয়ে নাবালিকা বিয়ের সংখ্যা অনেকটাই কমানো গিয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি। আমাদের লক্ষ্য যে কোনও প্রকারে এই কুপ্রথাকে পুরোপুরি বন্ধ করা। তার একটাই উপায় ঘরে ঘরে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।”
তৃণমূল শিক্ষক সংগঠনের এক কর্তা তথা বরুণা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “নাবালিকা বিয়ে রুখতে সবচেয়ে জরুরি হল আন্তরিকতা। তাতে স্কুলকে যেমন এগোতে হবে, তেমনই অভিভাবকেরও সন্তানদের ভালমন্দ বুঝতে হবে। আমরাও সবরকম ভাবে পাশে আছি।”