ব্লক অফিস ভাঙচুরে কংগ্রেস কর্মীদের এ বার জেল হেফাজত

গত ১৮ অগস্ট কংগ্রেসের ডাকা বাংলা বন্‌ধের দিন সবংয়ের ব্লক অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পাঁচজন কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরের দিন ধৃতদের মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হলে তিনজনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৫ ০০:১২
Share:

মেদিনীপুর আদালত চত্বরে ধৃত কংগ্রেস কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র।

গত ১৮ অগস্ট কংগ্রেসের ডাকা বাংলা বন্‌ধের দিন সবংয়ের ব্লক অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পাঁচজন কংগ্রেস কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরের দিন ধৃতদের মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হলে তিনজনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। বাকি দু’জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষে ধৃত স্বপন মাইতি, নিমাই মান্না এবং জয়দেব মহাপাত্রকে শনিবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হয়। তিনজনেরই চোদ্দো দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়।

Advertisement

ধৃত কংগ্রেস কর্মীদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে এ দিন মেদিনীপুর আদালতে এসেছিলেন সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, সবংয়ের ব্লক কংগ্রেস সভাপতি অমল পণ্ডা, জেলা কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি স্বপন দুবে প্রমুখ। মানসবাবু বলেন, “একটা কাচ ভেঙেছে। তার জন্য খুনের চেষ্টার মামলা দেওয়া হয়েছে। ভাবা যায়?” সবংয়ের বিধায়কের কথায়, “যে খুন হয়েছে তার খুনীকে না ধরে পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে কে ছাত্র পরিষদ করে, কারন ছাত্র পরিষদকে গ্রেফতার করতে হবে। প্রায় ২০ জন ছাত্র পরিষদ কর্মীর বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছে। মেদিনীপুরে তুলে আনা হচ্ছে। দৈহিক- মানসিক অত্যাচার করা হচ্ছে।” মানসবাবু বলেন, “এই পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেই আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে হচ্ছে। হঠকারি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয় বলেই আমি মনে করি।” ২৮ অগস্ট সবংয়ে স্মরণসভার পরে মেদিনীপুরে গণ আন্দোলন হবে বলেও জানিয়ে দেন সবংয়ের বিধায়ক। কবে থেকে গণ আন্দোলন শুরু হবে, তা অবশ্য জেলা এবং প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত হবে।

দলের এক সূত্রে খবর, মেদিনীপুরে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচি করতে পারে কংগ্রেস। এদিন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষকেও বিঁধেন মানসবাবু। তাঁর কথায়, “এই জেলার পুলিশ সুপার মুখ্যমন্ত্রীকে মা বলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, মানে মা বলেছেন, এখন কন্যা কি করে তাঁর মায়ের নির্দেশ অমান্য করবেন? তাই কন্যা মায়ের নির্দেশ পালন করতে ছাত্র পরিষদের অন্তর্দ্বন্দ্বের তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে নেমে পড়েছেন। কৃষ্ণপ্রসাদকে মারার ছবিটা পুলিশ দেখাচ্ছে না কেন? তাহলে তো পুলিশকে এত পরিশ্রম করতে হয় না।” সবংয়ের বিধায়ক বলেন, “কন্যা হিসেবে মাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যস্ত জেলার পুলিশ সুপার। আমরা আদালতের আশ্রয় নিয়েছি। বিচার চাইছি। মেদিনীপুরের সবাই বলেন, এখানকার ডিএম- ও এসপি, এএসপি- ও এসপি, জেলা পরিষদও এসপি, তৃণমূলও এসপি, ক্ষমতাও এসপি, অত্যাচারও এসপি! যে সব কলেজ কর্মচারীদের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে, একদিন প্রমাণিত হবে যে তাঁদের দৈহিক- মানসিক নির্যাতন করেই আদালতে পাঠানো হয়েছে। হয়তো আজ নয়, একদিন না একদিন হবেই। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম। আর কতদিন মেদিনীপুরের মানুষ এ সব সহ্য করবেন? এর জবাব মেদিনীপুরের মানুষ দেবেই।” সবংয়ের বিধায়কের প্রশ্ন, “মুখ্যমন্ত্রী কি তৃণমূলের মুখ্যমন্ত্রী? বাংলার মানুষের, মেদিনীপুরের মানুষের মুখ্যমন্ত্রী নন? তা হলে ছাত্র খুনের বিচার হবে না কেন?”

Advertisement

ব্লক অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় ধৃত সবংয়ের কংগ্রেস ব্লক সাধারণ সম্পাদক স্বপন মাইত-সহ পাঁচজনের সঙ্গে দেখা করতে এ দিন জেলায় আসেন প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী। এ দিন অমিতাভবাবুর সঙ্গে ছিলেন রাজ্য যুব কংগ্রেসের সাধারন সম্পাদক সুমন পাল ও মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন প্রথমে তাঁরা পৌঁছন ডেবরা থানায়। সেখানেই থানার লক-আপে পুলিশ হেফাজতে থাকা স্বপন মাইতির সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন অভিযুক্তদের কৌঁসুলির সঙ্গেও। পরে তাঁরা যান মেদিনীপুর জেলা আদালতে। ডেবরায় স্বপন মাইতিদের সঙ্গে দেখা করার পরে অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, “স্বপনের সঙ্গে আমার পূর্ব পরিচিতি রয়েছে। বন্‌ধের দিনে একটা বিডিও অফিসে ভাঙচুরের ঘটনায় কেন পুলিশ হেফাজতে ওঁদের নেওয়া হয়েছে বুঝতে পারছি না। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নির্দেশে তাই ওঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। অধীরবাবু সবংয়ের ঘটনা মেনে নিতে পারেননি। রাজ্যব্যাপী এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেছেন। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন