শৌচালয়ে পিছিয়ে জঙ্গলমহল

ঘরে ঘরে শৌচাগার তৈরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে জঙ্গলমহল!চলতি অর্থ বছর শেষের মুখে এমন সমীক্ষা-রিপোর্টে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।প্রশাসন সূত্রের খবর, কিছুদিনের মধ্যেই জেলা সফরে আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৭ ০১:২৩
Share:

ঘরে ঘরে শৌচাগার তৈরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে জঙ্গলমহল!

Advertisement

চলতি অর্থ বছর শেষের মুখে এমন সমীক্ষা-রিপোর্টে চূড়ান্ত অস্বস্তিতে পড়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রের খবর, কিছুদিনের মধ্যেই জেলা সফরে আসতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঝাড়গ্রামে উন্নয়ন সংক্রান্ত পর্যালোচনা বৈঠক করার কথা তাঁর। অথচ তাঁর সাধের জঙ্গলমহলে মিশন নির্মল বাংলা কর্মসূচির আওতায় ঘরে ঘরে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া তো দূর। কয়েকটি ব্লকে শৌচাগার তৈরির কাজকর্ম শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। অনেক ক্ষেত্রেই গরিব পরিবারগুলি শৌচাগার তৈরি বাবদ ৯০০ টাকা দিতে রাজি হচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠছে। প্রশাসনিক মহলের একাংশের অবশ্য সাফাই, শৌচাগার তৈরির জন্য সব ব্লকগুলিকে সমান হারে বরাদ্দ না দেওয়ায় প্রকল্প রূপায়ণে সমস্যা হচ্ছে।

Advertisement

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে প্রতিটি শৌচাগার তৈরি করতে খরচ হয় দশ হাজার ৯০০ টাকা। এ জন্য সরকারি প্রকল্পে দশ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়। উপভোক্তাকে দিতে হয় ৯০০ টাকা। ২০১৪ সাল থেকে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষ পর্যন্ত জেলার ২৯টি ব্লকে ৬,০৯,৫০৯ টি শৌচাগার বিহীন পরিবার চিহ্নিত করা হয়েছিল। চলতি মার্চের ১৬ তারিখের সমীক্ষা তথ্য অনুযায়ী গত তিন বছরে জেলায় ৩,৬০,৪৩৫ টি পরিবারে শৌচাগার তৈরি করা গিয়েছে। এর মধ্যে চলতি অর্থ বছরে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার শৌচাগার তৈরি হয়েছে (চলতি অর্থ বছরে শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লক্ষ ৬১ হাজার)। এখনও ২,৪৯,০৭৪টি পরিবারে শৌচাগার তৈরি বাকি রয়েছে।

আরও পড়ুন: ঐতিহ্যের ক্যাম্পাসে প্লাস্টিক বন্ধের পরিকল্পনা

লালগড় ব্লকে অবশ্য ৭৯% শৌচাগার তৈরি হয়েছে। অথচ এই ব্লকের আঁধারিয়া পঞ্চায়েতের উদ্ধবপুর গ্রামের মাহালি পাড়ার বাসিন্দারা শৌচাগার তৈরির টাকা দেননি বলে শৌচাগার তৈরির কাজ মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খড়্গপুর-১, কেশপুর, সবংয়ের মতো ব্লকগুলিতেও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক শৌচাগারই তৈরি হয়নি।

নজরে শৌচালয়


লক্ষ্যমাত্রা : ৬,০৯,৫০৯ টি


হয়েছে: ৩,৬০,৪৩৫ টি

এগিয়ে

গড়বেতা-২ (৯৬%), দাসপুর-২ (৯৫%), দাসপুর-১ (৯২%)

পিছিয়ে

বেলিয়াবেড়া (৪০%), জামবনি (৩৮%), বেলপাহাড়ি (২৯%)

সমস্যাটা কোথায়?

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, জেলা সদর লাগোয়া ব্লকগুলিতে ‘স্যানিটারি মার্ট’ সংস্থাকে দিয়ে শৌচাগার তৈরি করানো হচ্ছে। ফলে, ওই সব ব্লকে দ্রুত প্রকল্প রূপায়ণ হচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার ব্লকগুলিতে পঞ্চায়েতস্তরে ছোট ছোট ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। টাকা না-পেয়ে ঠিকাদাররা কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন। পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষজনকে সচেতন করার কাজটাও ঠিকমতো হচ্ছে না। বাড়িতে শৌচাগার হলেও ব্যবহার করছেন না বেলপাহাড়ির লাগদু টুডু, লালগড়ের চরণ কিস্কু, মালতী মাহাতোরা। জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহের আশ্বাস, “দ্রুত লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনের সর্বস্তরকে আরও সক্রিয় হতে বলা হয়েছে।”

প্রকল্প রূপায়ণের জন্য ঘোষণা আর বাস্তবায়নের মধ্যে বিস্তর ফারাক কীভাবে ঘুচবে সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন