রাতারাতি লাল রং বদলে ঐতিহ্য ‘মাটি’

রং বদল! লাল নয়, ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিস ভবনে পড়েছে তামাটে মাটি-রঙের প্রলেপ। মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরের অন্য ভবনগুলি অবশ্য নীল-সাদা রং করা হয়েছে। সোমবার গিয়ে দেখা গেল জোর কদমে রং হচ্ছে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৭ ০০:১৩
Share:

বদল: লালের পরিবর্তে এসডিও অফিসের নতুন রং। নিজস্ব চিত্র

রং বদল! লাল নয়, ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিস ভবনে পড়েছে তামাটে মাটি-রঙের প্রলেপ।

Advertisement

মহকুমাশাসকের অফিস চত্বরের অন্য ভবনগুলি অবশ্য নীল-সাদা রং করা হয়েছে। সোমবার গিয়ে দেখা গেল জোর কদমে রং হচ্ছে। পূর্ত দফতরের এক আধিকারিক জানালেন, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের নির্দেশেই এই বদল।

আগামী ৪ এপ্রিল ঝাড়গ্রামে এসে নতুন জেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিন থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হবে জেলাশাসকের কার্যালয়। ঝাড়গ্রামের এসডিও অফিসের হেরিটেজ ভবনটি জেলাশাসকের কার্যালয়ে বদলে যাচ্ছে। উদ্বোধনের আগে মুখ্যমন্ত্রী ওই ভবনটি পরিদর্শন করতে পারেন বলে খবর।

Advertisement

ইংরেজ আমলে তৈরি হওয়া ঝাড়গ্রাম এসডিও অফিস-ভবনটিকে বছর দেড়েক আগে সংস্কার করে আগের পুরনো চেহারায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বছর খানেক আগে হেরিটেজ ভবনের বাইরে চিরাচরিত টেরাকোটা লাল রং করা হয়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ওই অফিস চত্বরে আসতে পারেন জানার পরে তড়িঘড়ি রবিবার থেকে টেরাকোটা লাল রঙের উপর সাদা রঙের প্রলেপ দিয়ে নতুন করে তামাটে মাটি রং করা হয়েছে।১৯০১ সালে মেদিনীপুরের এক ইংরেজ কালেক্টরের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আগে ঝাড়গ্রামের বেশিরভাগ এলাকা ছিল জঙ্গলে ঘেরা। ১৯১০ সালে ইংরেজ সরকারের ব্যবসার স্বার্থে খড়্গপুর থেকে ঝাড়গ্রাম হয়ে কালিমাটি (অধূনা টাটানগর) পর্যন্ত রেললাইন পাতার কাজ শুরু হয়। ঝাড়গ্রামে তৈরি হয় রেল স্টেশন। ধীরে ধীরে বন কেটে বসত তৈরির কাজ শুরু হয়। পরবর্তীকালে বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে শঙ্কিত হয়ে ওঠে ইংরেজ সরকার। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ও শাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজতে ১৯২২ সালের নভেম্বরে ঝাড়গ্রামকে মহকুমা ঘোষণা করা হয়। সরকারি নথি অনুযায়ী, মূল ভবনটির কাজ তারও আগে শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রথম মহকুমাশাসক নিযুক্ত হন ইটি কোটস্‌। ব্রিটিশ সরকারের আমলে ও স্বাধীনতার পরে সব মিলিয়ে গত ৯৫ বছরে মোট ৬৯ জন মহকুমাশাসক এখানে কাজ করেছেন।

জেলা পরিষদের মূল প্রশাসনিক হেরিটেজ ভবনটির রং এখনও লাল রয়েছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, ঝাড়গ্রামের হেরিটেজ ভবনটির চিরাচরিত লাল রং কেন এ ভাবে বদলে ফেলা হল। মেদিনীপুরের লোকসংস্কৃতি ও পুরাতত্ত্ব গবেষক মধুপ দে বলেন, “ইতিহাসের স্বার্থেই হেরিটেজ ভবনটির ঐতিহ্যবাহী চিরাচরিত রং বজায় রাখা উচিত ছিল।”

রং বদল নিয়ে প্রশাসনিক কর্তারা অবশ্য মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন