মইয়ে উঠে নাম লিখে চলেন ঝুনুবালা

বছর কুড়ি আগে রেলের খালাসি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ঝুনুবালাদেবী। ধীরে ধীরে চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের গুণে এখন রেলের এক জন সফল পেইন্টার তিনি। প্রমোশন পেয়ে তিনি এখন রেলের গিধনি সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার (ওয়ার্কস) অফিসের গ্রুপ-সি কর্মী।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:১১
Share:

ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশনে মইয়ে উঠে লেখার কাজ করছেন ঝুনুবালা। নিজস্ব চিত্র

খেমাশুলি, কলাইকুণ্ডা, সর্ডিহা, বাঁশতলা, ঝাড়গ্রাম, খাটখুরা, গিধনি, কানিমহুলি, চাকুলিয়া, কোকপাড়া, ধলভূমগড়, ঘাটশিলা, গালুডি, রাখামাইনস্‌— এর মধ্যে কোনও না কোনও স্টেশন চত্বরে প্রতি দিনই দেখা যায় ঝুনুবালা সিংহকে। রঙের কৌটো আর তুলি নিয়ে স্টিলের মইয়ে চড়ে এক মনে কাজ করেন তিনি।

Advertisement

ছবিটা চেনা। মইয়ে চড়ে নামফলক লিখে চলেছেন ঝুনুবালা সিংহ। চল্লিশ ছুঁইছুঁই এই আদিবাসী মহিলার তুলির টানের লেখা অক্ষরগুলি ছাপার হরফকেও হার মানায়। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজিতে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর-টাটা শাখার ১৪টি স্টেশনের যাবতীয় নামফলক লেখেন রেলকর্মী ঝুনুবালাদেবী।

বছর কুড়ি আগে রেলের খালাসি হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন ঝুনুবালাদেবী। ধীরে ধীরে চেষ্টা ও অধ্যবসায়ের গুণে এখন রেলের এক জন সফল পেইন্টার তিনি। প্রমোশন পেয়ে তিনি এখন রেলের গিধনি সিনিয়র সেকশন ইঞ্জিনিয়ার (ওয়ার্কস) অফিসের গ্রুপ-সি কর্মী। তবে তাঁর পদটি হল ‘গ্রেড ওয়ান পেইন্টার’। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আরও কয়েক জন মহিলা পেইন্টার থাকলেও তাঁরা মইয়ে চড়ে কাজ করেন না। খড়্গপুর ডিভিশনের এক রেল কর্তা জানান, হাতের লেখার গুণে ঝুনুবালাদেবী রেল প্রশাসনে প্রশংসিত। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষের কথায়, “পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ঝুনুবালাদেবীর এগিয়ে যাওয়া উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত ও প্রেরণা।”

Advertisement

ঝাড়গ্রাম রেল স্টেশনের টিকিট ঘরের নামফলক লেখার ফাঁকে ঝুনুবালাদেবী জানান, তাঁর আদিবাড়ি ঝাড়খণ্ডের ধলভূমগড়ের চৈরা গ্রামে। অভাবী আদিবাসী পরিবারের এই কন্যার পড়াশোনা দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৯৯৮ সালে রেলে খালাসির চাকরি পান গিধনিতে। রেল প্রশাসনের নানা ছোটখাটো কাজের পাশাপাশি রেলের পেইন্টারদের রঙের ডিবে এগিয়ে দেওয়া এবং তুলি পরিষ্কার করার কাজও করতে হতো তাঁকে। পেইন্টারদের দেখে দেখেই নিজের চেষ্টায় লেখা রপ্ত করে ফেলেন তিনি। ঝুনুবালাদেবীর কথায়, “ভাল আলপনা দিতে পারি। কাঁথায় নক্সা সেলাইও ভাল করতে পারি। তাই কয়েক বছরের মধ্যেই স্পষ্ট অক্ষর লেখা আয়ত্ত করে নিয়েছিলাম। সাহস করে এক বার নেম বোর্ড লিখে দেখাই সাহেবদের। তার পরই আমাকে এই কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়।” ২০১০ সালে পেইন্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন ঝুনুবালাদেবী। তিনি যে স্টেশনে কাজ করেন, সেখানকার যাত্রীরাই বিস্মিত হয়ে তাঁর কাজ দেখেন। কেউ আলাপ করেন, কেউ বা অভিনন্দন জানান।

গিধনি রেল কোয়ার্টারে থাকেন ঝুনুবালাদেবী। স্বামী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী। রোজ সকালে রান্নার কাজ সেরে বেরিয়ে পড়েন ঝুনুবালাদেবী। বিভাগীয় নির্দেশ অনুযায়ী রঙের কৌটো আর তুলি নিয়ে পৌঁছে যান নির্দিষ্ট স্টেশনে। টিকিট কাউন্টার ও প্ল্যাটফর্মের নাম ফলক লিখতে থাকেন। রেল কোয়ার্টারের দেওয়ালে নম্বর, আবাসিক কর্মী ও আধিকারিকদের নামও লিখতে হয়। এ ভাবেই ১৪টি রেল স্টেশন ও চত্বরের কাজ করতে হয়। তাঁর কথায়, “পারব না বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। চেষ্টা ও একাগ্রতা থাকলে আমরাও অসাধ্য সাধন করতে পারি। নিজের জীবন দিয়ে সেটা বুঝেছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন