বাতিল টাকাও সচল পটের মেলায়

কলকাতা থেকে দূরত্ব মাত্রই ১৫০ কিলোমিটার। প্রত্যন্ত সেই গ্রামের মেলাতেও বিকিকিনি এ বার ক্রেডিট আর ডেবিট কার্ডে। নোট বাতিলের চোটে তড়িঘড়িই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আয়োজকেরা। শুধু তাই নয়, মেলার স্টলগুলিতে পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোটও চলবে!

Advertisement

কিংশুক আইচ

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৪৩
Share:

বাতিল নোটেই বিকিকিনি। — নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা থেকে দূরত্ব মাত্রই ১৫০ কিলোমিটার। প্রত্যন্ত সেই গ্রামের মেলাতেও বিকিকিনি এ বার ক্রেডিট আর ডেবিট কার্ডে। নোট বাতিলের চোটে তড়িঘড়িই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আয়োজকেরা। শুধু তাই নয়, মেলার স্টলগুলিতে পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোটও চলবে!

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়াতে শুক্রবার শুরু হয়েছে পটের মেলা পটমায়া। এ বার সপ্তম বর্ষ। মেলার উদ্বোধন করেন জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। গ্রামের ৮৬টি পটশিল্পী পরিবারই মেলায় যোগ দিয়েছেন। নিজের বাড়ির সামনেই পটের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তাঁরা। গত ছ’বছর ধরে মেলা আয়োজনে তেমন সমস্যা ছিল না। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে রাতারাতি পাঁচশো আর হাজার টাকার নোট বাতিলের ঘোষণায় এ বার ফাঁপরে পড়েছিলেন আয়োজকেরা। শহর থেকে এই মেলায় যাঁরা কেনাকাটা করতে আসেন, তাঁরা তো বড় নোট নিয়েই আসেন। তাহলে উপায়! মেলার সম্পাদক মন্টু চিত্রকর বলেন, ‘‘শেষ মুহূর্তে ঠিক হয়েছে ক্রেডিট আর ডেবিট কার্ডের যন্ত্র বসানো হবে। সেই সঙ্গে শিল্পীরা ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোটও নেবেন।’’ সেই মতো নূপুর চিত্রকর তাঁর স্টলের সামনে লিখে দিয়েছেন— ‘৫০০, ১০০০ টাকার নোট চলবে’।

বাতিল নোটে সমস্যা হবে না?

Advertisement

মেলার সম্পাদক মন্টুবাবুর জবাব, ‘‘কার্ডেই তো কেনাকাটা হবে। তার বাইরে যে ক’জন পাঁচশো-হাজারের নোট দেবেন সেগুলো আমরা ব্যাঙ্কে জমা করে দেব। আশা করি খুব সমস্যা হবে না।’’ মনু, স্নেহলতা, চন্দন, পুতুল চিত্রকররাও বলছেন, ‘‘কার্ডের মেশিন তো থাকছেই। আর আর কেউ বড় নোট নিয়ে এলে আমরা নিয়ে নেব।’’

রাজ্যের ১০টি জেলায় গ্রামীণ হস্তশিল্পের যে কেন্দ্র গড়ে উঠছে, তার একটি হচ্ছে নয়াতে। সেটি পটচিত্রের কেন্দ্র। সহযোগিতায় রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প, বস্ত্র, খাদি দফতর, ইউনেস্কো। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বাংলা নাটক ডট কম রয়েছে এই কেন্দ্র তৈরির দায়িত্বে। সেই প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবেই এই মেলা। আয়োজক পটুয়াদের সংগঠন ‘চিত্রতরু’। চলবে রবিবার পর্যন্ত। থাকছে পটচিত্রের কর্মশালা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। আসার কথা সুইৎজারল্যান্ডের একটি ব্যান্ডের। সব মিলিয়ে নয়াতে এখন উৎসবের সাজ। পটের ছবির সঙ্গেই থাকছে পট আঁকা নানা সামগ্রী। যেমন টি-শার্ট, শাড়ি, ঘর সাজানোর সরঞ্জাম, ছাতা ইত্যাদি। সে সবের টানেই সল্টলেক থেকে চলে এসেছেন সুনীপা বিশ্বাস, বরানগর থেকে অমিত চৌধুরী, বসিরহাট থেকে শ্যামলী সেন, চন্দন কুমার দেব, সবং থেকে রবীন্দ্রনাথ ভৌমিকরা। সুনীপার প্রথম পটের মেলায় আসা। বললেন, ‘‘প্রথমে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এত সুন্দর সব জিনিস, কিন্তু কিনব কী করে! এখানে যে কার্ড চলবে ভাবতেই পারিনি।’’ নয়াতে তাই দিব্যি চলল কেনাকাটা। কে বলবে দেশ জুড়ে নোট নিয়ে হাহাকার! এই গ্রাম থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে জামনার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনেও তো লম্বা লাইন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন