মশা মরে না, তবু শুধু ধোঁয়া

গতবারের থেকে শিক্ষা নিয়ে বছরভর সচেতনতায় জোর

এ বার আগেভাগে সতর্ক প্রশাসন। পুরসভা, রেল, স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি প্রশাসনের টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক হয়েছে। ঠিক হয়েছে, শহরে মশা নিধনে পদক্ষেপ করবে পুরসভা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৯
Share:

মশা মারতে ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে খড্গপুরের বুলবুলচটিতে। রবিবার। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

বিকেল সাড়ে পাঁচটা। হঠাৎ বাড়ির পাশের রাস্তায় ‘গোঁ...’ আওয়াজ। চারপাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী। মশা ঠেকাতে ধোঁয়া দিচ্ছে পুরসভা। তড়িঘড়ি জানলা বন্ধের চেষ্টা করেও লাভ হল না। ধোঁয়ার সঙ্গে বাইরের মশা বাড়িতে ঢুকে পড়ল।

Advertisement

গত বছর খড়্গপুর শহরে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত হওয়ায় এ বার আগেভাগে সতর্ক প্রশাসন। পুরসভা, রেল, স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি প্রশাসনের টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠক হয়েছে। ঠিক হয়েছে, শহরে মশা নিধনে পদক্ষেপ করবে পুরসভা। সেই মতো প্রতিটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভার পক্ষ থেকে বাড়তি তিনজন শ্রমিক দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু ডেঙ্গি রোখা মানে কি শুধুই ধোঁয়া দেওয়া? এই কামান দেগে আদৌ কি লাভ হয়? প্রশ্নগুলো কিন্তু উঠছে।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেঙ্গি মোকাবিলায় ধোঁয়া নিষিদ্ধ নয়। তবে বাড়ির বাইরে ধোঁয়া দেওয়ার পক্ষপাতি নয় স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, ধোঁয়া দিলে মশার আঁতুড়ঘর ধ্বংস হয় না। মশা ধোঁয়ার সঙ্গে অন্যত্র সরে যায়। তাই বাড়ির বাইরে ধোঁয়া দিলে মশা বাড়ির ভিতরে নিরাপদ আশ্রয়ে ঢুকে পড়ছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “ধোঁয়ায় মশা মরে না। সরে যায়। আমরা সব সময় বলছি ধোঁয়া দিতে হলে বাড়ির ভিতরেও দিতে হবে। এটাই নিয়ম। না হলে বাড়ির ভিতরে মশা ঢুকে পড়বে। পুরসভাকে নিয়ে বৈঠকে এ কথা বলাও হয়েছে।”

প্রশ্ন তাই শহরবাসীর মনেও। ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দার বাসিন্দা কলেজ শিক্ষিকা সোমালি নন্দী বলেন, “বাড়ির চারদিকে সুইমিং পুল, পুকুর, ফাঁকা জমিতে আবর্জনা পড়ে থাকে। সেখানে মশার আঁতুড়ঘর। পুরসভা শুধু বড় রাস্তায় ধোঁয়া দিয়ে দায় সারছে।” একই সুরে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মালঞ্চর বাসিন্দা পাপিয়া সেনেরও বক্তব্য, “মশা মারতে তেল স্প্রে হচ্ছে না। আর রাস্তায় ধোঁয়া দিলে মশা বাড়িতে ঢুকে পড়ছে।”

এ বছর আগেভাগেই সতর্ক হয়ে বৈঠকে বসেছিল টাস্কফোর্স কমিটি। ঠিক হয়েছে, প্রতিটি এলাকায় ডেঙ্গি মোকাবিলায় মশা মারার তেল স্প্রে, নিয়মিত নিকাশি নালা ও আবর্জনা পরিষ্কার, সচেতনতায় ফ্লেক্স টাঙানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুরসভাকে। তবে আপাতত শুধুমাত্র ধোঁয়া দেওয়া ছাড়া কিছুই হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

শুধু ধোঁয়া দিচ্ছেন কেন? ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কল্যাণী ঘোষের জবাব, “মশা মারার জন্য ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। তবে তেল স্প্রেও করছি। সব ছবি ফেসবুকে দিয়েছি।” খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারও বলছেন, “স্বাস্থ্য দফতরের নির্দেশ মেনেই ধোঁয়া, তেল স্প্রে করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতর ধোঁয়া দেওয়ার মেশিন কিনতে টাকা দিচ্ছে। আর বাড়ির ভিতরে ধোঁয়া দেওয়ার নির্দেশ আমার জানা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন