প্রতীকী ছবি।
দু’টাকা কিলো দরে চাল দিয়ে খিদে মেটানো যায়। কিন্তু শুধু ভাতে কি জীবনধারণ সম্ভব! প্রশ্নটা নয়াগ্রামের যুবক রতন রাজের।
নতুন জেলা ঝাড়গ্রামের প্রথম বর্ষপূর্তি আজ, আজ, ৪ এপ্রিল। তার ঠিক আগে নয়াগ্রামের রতনই যেন ঝাড়গ্রামবাসীর মনের কথা বলে ফেললেন। তিনি বললেন, “এলাকায় কোনও শিল্প নেই। সারা বছর একশো দিনের কাজ মেলে না। সংসার চালাতে তাই মুম্বইয়ের হোটেলে পরিচারকের কাজ করছি। বছরে এক বার বাড়ি আসি।”
গত বছর আজকের দিনেই ঝাড়গ্রাম জেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অতীতের এক অবহেলিত জঙ্গলখণ্ড নতুন জেলার রূপ পেয়েছিল। এই এক বছরে আড়ে-বহরে, চেহারার চাকচিক্যে বেড়েছে জেলাশহর। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সরকারি দফতর। ঝাড়গ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় চালুর প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের জন্য জমি দেখা হয়েছে। উন্নয়নের প্রচার-ভারেও ঝাড়গ্রাম অন্য জেলার থেকে অনেকটাই এগিয়ে।
প্রকল্পের বরাদ্দে সেই এগিয়ে থাকার আভাস মেলে। রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এখনও পর্যন্ত জঙ্গলমহলের উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবর্ষে শুধু একশো দিনের কাজের জন্য জেলার বরাদ্দ ধার্য হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। সেই টাকায় চোখে পড়ার মতো উন্নয়নের কাজও হচ্ছে। একের পর এক তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। হয়েছে ইংরেজি মাধ্যম মডেল স্কুল, কিসান বাজার, আইটিআই, পলিটেকনিক, বেশ কয়েকটি নতুন সরকারি কলেজ। আদিবাসীদের একলব্য স্কুলের পরিচালন ভার তুলে দেওয়া হয়েছে রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে।
ঝাড়গ্রামের মনিকা রায়, গোপীবল্লভপুরের স্বপন রুইদাস, নয়াগ্রামের তপন শী-রা বলছেন, ‘‘দেড় দশক আগে অনাহার ক্লিষ্ট আমলাশোলের ঝাড়গ্রাম কিংবা মাওবাদী সন্ত্রাসে অবরুদ্ধ ঝাড়গ্রামের সঙ্গে নতুন জেলার মিল খোঁজা অর্থহীন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে জঙ্গলমহলে শান্তি ফিরেছে। অনেক কাজও হয়েছে।’’
তবে কি নতুন জেলার মানুষ পুরোদস্তুর খুশি?
নানা প্রান্তের মানুষের সঙ্গে কথা বলে অবশ্য ক্ষোভের স্বরও শোনা গেল। মডেল স্কুলগুলি চলছে হাতে গোনা কিছু অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষকদের দিয়ে। পরিকাঠামো না থাকায় পড়ুয়াও মিলছে না। ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে কিসানবাজারটি এখনও চালু করা যায়নি। শহরের আনাজ ব্যবসায়ীরা সেখানে যেতে নারাজ। ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতাল সুপার স্পেশ্যালিটিতে উন্নীত হয়েছে। নয়াগ্রাম ও গোপীবল্লভপুরে হয়েছে আরও দু’টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হয়েছে।
একাংশ চিকিত্সক ও কর্মী সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন বটে। কিন্তু উপযুক্ত সংখ্যক চিকিত্সক, নার্স ও পরিকাঠামো না থাকায় রোগ ও রোগীর ‘দাওয়াই’ এখনও সেই ‘রেফার’। আর এ সব কারণেই উন্নয়নের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আদিবাসী-মূলবাসীর একাংশ।
নির্বাচনী বিধির গেরোয় সরকারিভাবে জেলার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান এ বার হচ্ছে না। মহকুমাশাসক (সদর) নকুলচন্দ্র মাহাতো বলেন, “নির্বাচন মিটলে বড় আকারে বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠান হবে।” তবে আজ, বুধবার ঝাড়গ্রাম শহরের কয়েকটি এলাকা আলোয় সাজানো হবে।