সমালোচনায় বিরোধীরা

তৃণমূলের মিছিলে কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা

ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম থেকেই প্রকৃত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র পরিষদ (সিপি) কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে খুনের ঘটনার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগেও সরব হয়েছেন নিহতের পরিজনেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৫৭
Share:

নিহত ছাত্রের পরিবারকে নিয়ে প্রচার মিছিল তৃণমূল প্রার্থীর।

ছেলের মৃত্যুর ঘটনায় প্রথম থেকেই প্রকৃত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। সবং সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র পরিষদ (সিপি) কর্মী কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে খুনের ঘটনার তদন্তে গাফিলতির অভিযোগেও সরব হয়েছেন নিহতের পরিজনেরা। সবংয়ের তৃণমূল প্রার্থী নির্মল ঘোষের মিছিলে বুধবার নিহত ছাত্রের পরিজনেদেরই হাঁটতে দেখা গেল।

Advertisement

এ দিন বিকেলে সবংয়ের বেনেদিঘি থেকে বসন্তপুর হাইস্কুল পর্যন্ত মিছিল করে তৃণমূল। মিছিলের পুরোভাগেই তৃণমূল প্রার্থী নির্মলবাবুর সঙ্গে হাঁটতে দেখা যায় কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা ভানুভূষণ জানাকে। মিছিলে ছিলেন নিহত ছাত্রের মেজদা চন্দন জানা, মেজ বৌদি সবিতা জানাও। দাঁতরদা বাটিটাকি গ্রামের বাড়ি থেকে বেনেদিঘিতে এসে তাঁরা মিছিলে যোগ দেন। যদিও তেমাথানিতে মিছিলের মাঝপথ থেকেই তাঁরা চলে যান। এলাকায় সিপিএম সমর্থক বলেই পরিচিত কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ির লোকেরা। তাহলে হঠাৎ তৃণমূলের মিছিলে কেন? ভানুভূষণবাবু বলছেন, ‘‘ছেলেকে তৃণমূলের লোকেরা খুন করেছে বলে মানস ভুঁইয়ারা আমাদের বলেছিল। এখন বুঝতে পারছি মানস ভুঁইয়ারা আমাদের ভুল বুঝিয়েছিল। তাই এই মিছিলে এসেছি।” এর বেশি কিছু আর বলতে চাননি তিনি।

কৃষ্ণপ্রসাদ হত্যার ঘটনায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগে প্রথম থেকেই সরব মানসবাবু। এ দিনের পর মানসবাবুর বক্তব্য, ‘‘এ সবই ওদের ছক। আমি কোনও মন্তব্য করব না।” যদিও এ সব অভিযোগ মানতে নারাজ নির্মলবাবু। তিনি বলছেন, ‘‘মানস ভুঁইয়ারা ওই ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি করেছে, সেটা কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবারের লোকেরা বুঝতে পেরেছে। আমরা ওঁদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তাই কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবার আমাদের সঙ্গে এসেছে।” বিরোধী দলের এক নেতার কথায়, ‘‘কামদুনি কাণ্ডেও এ ভাবেই নির্যাতিতার পরিবারের লোকেদের চাকরি দেওয়া হয়েছিল। এ বার একইরকম ছক কষে এগোতে চাইছে শাসকদল।’’

Advertisement

গত ৭ অগস্ট সবং কলেজে কৃষ্ণপ্রসাদকে খুনের অভিযোগ ওঠে। অভিযোগের তির ছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)-র দিকে। ঘটনার পর তিন জন টিএমসিপি কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে চার জন সিপি কর্মীকেও ধরে পুলিশ। ধৃতদের তালিকায় ছিল ঘটনার অভিযোগকারী সবং কলেজের সিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়েরও নাম। ধৃতেরা সকলেই বর্তমানে জেল হেফাজতে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর ঘটনার চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। চার্জশিটে ২১ জনের নাম ছিল। তার মধ্যে ১৯ জনই হল সিপি কর্মী।

ঘটনার পরে মানসবাবু ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতারা কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা করেন। যদিও প্রথম দিকে নিহত ছাত্রের বাড়িতে কোনও তৃণমূল নেতাকে দেখা যায়নি। ঘটনা কিছুটা থিতিয়ে যেতে কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ি যান তৎকালীন টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি। তিনি নিহতের দাদাকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন বলেও খবর।

দলীয় সূত্রে খবর, কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ি না যাওয়ার জন্য গত নভেম্বরে কলকাতায় এক বৈঠকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ধমকও খান দলের জেলা নেতারা। তারপরেই তড়িঘড়ি তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়, জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ- সহ দলের পাঁচ জন নেতা ওই নিহত ছাত্রের বাড়িতে যান।

এক তৃণমূল নেতার কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী সাফ বলে দিয়েছিলেন, যে ভাবেই হোক কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা সেই মতো ওঁদের কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। গত ডিসেম্বর মাসে কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ি গিয়ে ১০ হাজার টাকাও দিয়ে আসি। এখন ওঁরা আমাদের প্রতি আস্থা রেখেছে।” টাকা নেওয়ার কথা অবশ্য স্বীকার করছেন কৃষ্ণপ্রসাদের সেজদা হরিপদ জানা। ফোনে যোগাযোগ করা হলে হরিপদবাবু বলেন, ‘‘মাস চারেক আগে যখন তৃণমূল নেতারা বাড়িতে এসেছিল তখন আমরা প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের কথা বলেছিলাম। ওঁরা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল। সে দিন আমি ওই ১০ হাজার নিতে চাইনি। তবে ওঁরা টাকাটা জোর করে দিয়ে গিয়েছিল।”

তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, তারপর থেকেই কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ির লোকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেছে দলের লোকেরা। দলের পক্ষ থেকে নিহত ছাত্রের পরিবারের ছেলেদের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। ভোটের আর তাঁদের আরও সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয় বলেও অভিযোগ। সেই ডাকে সাড়া দিয়েই এ দিনের মিছিলে তাঁরা হাঁটলেন কি না, সে বিষয়ে অবশ্য কৃষ্ণপ্রসাদের বাড়ির কেউই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

যদিও এ বিষয়ে সবংয়ের নেতা তথা দলের জেলা কমিটির সদস্য অমলেশ বসুর কথায়, ‘‘কৃষ্ণপ্রসাদকে খুনের ঘটনার পর আমরা ওঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। যদিও হঠাৎ তৃণমূলের মিছিলে ওঁদের যাওয়ার পিছনে কোনও নৈতিক যুক্তি নেই। মনে হচ্ছে, তৃণমূলের চাপের মুখে ওঁরা নতিস্বীকার করেছে।’’ নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন