পরবের মরসুমে হাত তাই ফাঁকা

তিন মাসের মজুরি কই, জমছে ক্ষোভ

জঙ্গলমহল উৎসবের সূচনা করতে আজ, পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরাবরই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তাঁর সাধের জঙ্গলমহল হাসছে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৪৫
Share:

জব কার্ড দেখাচ্ছেন শ্রমিকরা। নিজস্ব চিত্র।

জঙ্গলমহল উৎসবের সূচনা করতে আজ, পশ্চিম মেদিনীপুরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরাবরই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, তাঁর সাধের জঙ্গলমহল হাসছে। অথচ ঝাড়খণ্ড, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার সীমানা ঘেঁষা পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি গ্রামের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবারের মুখে হাসি নেই। তাঁদের অভিযোগ, তিন মাসের একশো দিনের কাজের মজুরি তাঁরা পাননি। অথচ আর মাত্র ১১ দিন পর শুরু জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের প্রধান উৎসব মকর। উৎসবের আগে হাতে টাকা না থাকায় মন ভাল নেই বেলপাহাড়ির বাসিন্দাদের।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর-এই তিন মাসে একশো দিনের প্রকল্পে মজুরি বাবদ ১ কোটি ৬৩ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে। আগে কেন্দ্রের পাঠানো টাকা রাজ্যের মাধ্যমে জেলা ও ব্লকস্তর হয়ে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক বা ডাকঘর অ্যাকাউন্টে জমা পড়ত। কিন্তু গত নভেম্বরে কেন্দ্রীয় সরকার একশো দিনের প্রকল্পে সরাসরি উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মজুরি দেওয়ার নতুন নিয়ম চালু করেছে। রাজ্য প্রশাসনের অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকদের মজুরি কেন্দ্রের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

এই আবহে আজ, মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামের কুমুদকুমারী স্কুল মাঠে শুরু হচ্ছে জঙ্গলমহল উৎসব। বেলপাহাড়ির সোহাগী মুর্মু, মীরা আহির, কাজল সরেনদের প্রশ্ন, ‘‘উৎসবের এমন এলাহি আয়োজন হচ্ছে, তাহলে আমাদের মজুরি কেন মেটাচ্ছে না প্রশাসন?’’ বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টচার্যের অভিযোগ, “কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের টানাপোড়েনের জেরে একশো দিনের প্রকল্পে কাজ করেও বকেয়া মজুরি পাচ্ছেন না দরিদ্ররা। প্রশাসনও এ বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছে না।” তিনি জানান, এক একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে গড়ে ২৫-৩০ লক্ষ টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে। বেলপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৩৬ লক্ষ টাকা, বাঁশপাহাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে ২৭ লক্ষ টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে। মকর পরবের আগে বকেয়া মজুরি না মেটানো হলে অনশনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সুব্রতবাবু।

Advertisement

বিধবা দিনমজুর সোহাগী মুর্মু বলেন, “কাজ করেও টাকা পেলাম না। মকর পরব চলে এল। কী করে ভাল থাকব!” ফুলচাঁদ মুর্মু, কাজল সরেন-রা বলেন, “পেটে গামছা বেঁধে কী আর উৎসবে মেতে ওঠা যায়।” এলাকায় এখন ধান কাটার কাজও নেই। এই পরিস্থিতিতে টাকার অভাবে চরম সমস্যায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। বেলপাহাড়ির বিডিও সন্তু তরফদারের দাবি, ‘‘রাজ্য ও কেন্দ্র তহবিলের জটিলতায় গত তিন মাসের বকেয়া কাজের টাকা আসেনি। সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে এখন নতুন কাজের মজুরি নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন