বেলদার গ্রামে লক্ষ্মী প্রতিমা। — নিজস্ব চিত্র।
গ্রামে দুর্গাপুজোর চল নেই। সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজোতেই শারদোৎসবে মাতেন নারায়ণগড় ব্লকের বেলদার প্রত্যন্ত মান্না গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দারা।
প্রথা মেনে শনিবার কোজাগরী পূর্ণিমায় ধনলক্ষ্মীর আরাধনার আয়োজন করা হয়েছিল মান্না পঞ্চায়েতের রসুলপুর, আমদা, মনোহরপুর-সহ বিভিন্ন গ্রামে। বেলদা থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে রসুলপুরে ৩০ বছর ধরে সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজো করে আসছে স্থানীয় ‘হেল্পস্টার ক্লাব’। আড়াই ফুটের মণ্ডপ গড়ে কচিকাঁচারাই শুরু করেছিল এই পুজো। এখন অবশ্য জাঁকই আলাদা। ৩০ জন ক্লাব সদস্যের ১২ জনই শিক্ষক। তাঁদের চাঁদার টাকাতেই সোনালি রথের আদলে ৫৫ ফুট উঁচু মণ্ডপ হয়েছে এ বার। এগরার শিল্পী তাপস রানার হাতে গড়া ১২ ফুটের ধনলক্ষ্মী মূর্তিতে রয়েছে অভিনবত্ব। দেবী পালকিতে বসে। পুজোর বাজেট ১ এক লক্ষ ১০ হাজার টাকা। পুজো উপলক্ষে রবিবার থেকে তিনদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতাও চলবে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে নক আউট ফুটবল প্রতিযোগিতা। হবে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় শিবির। পুজো কমিটির কর্তা অচিন্ত্য প্রামাণিক, সুদীপ প্রামাণিকরা বলেন, “লক্ষ্মীপুজোই গ্রামে উৎসবের মেজাজ নিয়ে আসে। প্রতিটি বাড়িতে অতিথি আসেন।”
মনোহরপুর ‘বিবেকানন্দ তরুণ সঙ্ঘে’র লক্ষ্মীপুজো শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে। মাঝে বেশ কিছু বছর ধরে পুজো বন্ধ থাকার পরে গত ১২ বছর ধরে ফের পুজো হচ্ছে। এ বার গাঁদা, কামিনী পাতা, বেলুন, আবির, পদ্ম, শিউলি ফুল দিয়ে গোটা মণ্ডপ চত্বর সাজানো হয়েছে। ৬ ফুটের প্রতিমা রথে আসীন। পুজো উপলক্ষে নানা সামাজিক কর্মসূচিও রয়েছে। আর নির্মল বাংলার বার্তায় খুদেদের জন্য থাকছে অঙ্কন প্রতিযোগিতা। থাকছে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাও। ক্লাবের সভাপতি অভিনব মহাপাত্র বলেন, “গ্রামে দুর্গাপুজো হয় না। তাই লক্ষ্মীপুজোয় সকলে আনন্দে মেতে উঠি।’’
দুর্গোৎসবের আলো জ্বলে না বেলদা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মান্না পঞ্চায়েতের আমদা গ্রামেও। এই গ্রামের ‘নিউ তরুণ সঙ্ঘ’ তাই ২০০৯ সাল থেকে বারোয়ারি লক্ষ্মীপুজো করছে। এ বার সপ্তম বর্ষে মণ্ডপ হয়েছে মন্দিরের আদলে। পাঁচ ফুটের প্রতিমা রয়েছে পদ্মফুলের উপরে। পুজোর বাজেট ৬০ হাজার টাকা। আলোর সাজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অঙ্কন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা— আয়োজনে খামতি নেই। পুজোর পাঁচদিন পরে হবে ক্রিকেট খেলা। উৎসবে সামিল হতে গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আত্মীয়স্বজনরা এসেছেন। রসলপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে আসা জাহালদার শিক্ষক সঞ্জয় মান্না, খড়্গপুরের সুতপা রায়রা বলেন, “প্রতিবছরই লক্ষ্মীপুজোর দিনটা এখানে কাটাই। গোটা গ্রামে উৎসবের এই রোশনাই দারুণ লাগে।’’