কালীপুজোর রাতে প্রদীপ ভাসিয়ে ডাকা হয় দেবীকে

প্রায় দু’শো বছরের পুরনো পঞ্চমুণ্ডি আসনের উপরে রয়েছে লালগড়ের দেবী ভবতারিণীর মন্দির। ঐতিহ্যের এই মন্দিরে দীপান্বিতা কালীপুজোয় ষোড়শোপচারে দেবীর বিশেষ আরাধনা হয়।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লালগড় শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৮
Share:

লালগড়ের ভবতারিণী মূর্তি। — দেবরাজ ঘোষ।

প্রায় দু’শো বছরের পুরনো পঞ্চমুণ্ডি আসনের উপরে রয়েছে লালগড়ের দেবী ভবতারিণীর মন্দির। ঐতিহ্যের এই মন্দিরে দীপান্বিতা কালীপুজোয় ষোড়শোপচারে দেবীর বিশেষ আরাধনা হয়। অমাবস্যার রাতে ঘটে জল ভরার সময় দিঘিতে প্রজ্জ্বলিত প্রদীপ ভাসিয়ে দেবীকে আহ্বান করা হয়। নৈবেদ্যে দেওয়া হয় ফল, মিষ্টি, লুচি ও নিরামিষ তরকারি। পরদিন দুপুরে দেবীকে অন্নভোগে খিচুড়ি, পায়েস ও পঞ্চব্যঞ্জন নিবেদন করা হয়।

Advertisement

জনশ্রুতি, দু’শো বছর আগে লালগড়ের ওই পঞ্চমুণ্ডি আসনে ভৈরবীরূপা কালীর প্রথম আরাধনা শুরু করেছিলেন লালগড়ের তৎকালীন রাজা গঙ্গানারায়ণ সাহসরায়। স্থানীয় রাজার বাঁধ দিঘির পাড়ে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ করেন তিনি। আমৃত্যু সেখানে কালীপুজো করে গিয়েছিলেন গঙ্গানারায়ণ। তাঁর রোপণ করা একটি প্রাচীন হরিতকি গাছ এখনও সেখানে রয়েছে। গঙ্গানারায়ণের মৃত্যুর পরে অবশ্য পঞ্চমুণ্ডির আসনে কালীপুজো বন্ধ হয়ে যায়।

গঙ্গানারায়ণের মৃত্যুর দেড়শো বছর পরে ১৯৮২ সালে স্থানীয় চিকিৎসক উমাশঙ্কর রায়ের উদ্যোগে ফের ওই পঞ্চমুণ্ডি আসনে দেবী ভরতারিণীর নিত্যপুজো শুরু হয়। লালগড় রাজ পরিবারের উত্তরসূরিদের দূরসম্পর্কের আত্মীয় উমাশঙ্করবাবু নিজেই ভবতারিণী মন্দিরের সেবাইত ও পূজক। ১৯৮২ সালে মাটির মন্দিরে অধিষ্ঠিত দেবী ভবতারিণীর প্রতিমাটিও ছিল মাটির। বছর দশেক আগে ২০০৬ সালে (১৪১৩ বঙ্গাব্দের ৪ চৈত্র) স্থায়ী মন্দির তৈরি করে সিমেন্টের দেবী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সিমেন্টের প্রতিমাটি তৈরি করেছেন আনন্দপুরের শিল্পী সমর রায়। শোনা যায়, প্রতিমাটি তৈরির সময় প্রায় তিন মাস সমরবাবু কোনও আমিষ খাবার স্পর্শ করেননি।

Advertisement

উমাশঙ্করবাবু জানালেন, প্রতি অমাবস্যায় দেবীকে খিচুড়ি ও পঞ্চব্যঞ্জন নিবেদন করা হয়। বলিদানের প্রথা নেই। চৈত্র অমাবস্যায় প্রতিষ্ঠা বাষির্কীর রাতে ও কার্তিক মাসের অমাবস্যায় দীপান্বিতা কালীপুজোয় ষোড়শোপচারে দেবীর বিশেষ পুজো হয়। এলাকার অন্যতম দর্শনীয় এই প্রাচীন জায়গাটি দেখার জন্য দূরদূরান্তের বহু দর্শনার্থী আসেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন