দুর্ভোগের আশঙ্কা

একলপ্তে প্রচুর ছোট গাড়ির পারমিট

একলপ্তে প্রচুর যাত্রিবাহী ছোট গাড়ির (ম্যাক্সি-ক্যাব) পারমিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে আবেদনপত্রও আহ্বান করা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৫ ০০:৫৮
Share:

রাস্তার হাল ফেরেনি। নতুন করে ছোট গাড়ির পারমিট দেওয়ায় ভোগান্তি বাড়ার সম্ভাবনা। মেদিনীপুরে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

একলপ্তে প্রচুর যাত্রিবাহী ছোট গাড়ির (ম্যাক্সি-ক্যাব) পারমিট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ইচ্ছুকদের কাছ থেকে আবেদনপত্রও আহ্বান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, গ্রামীণ যাত্রীদের সুবিধার্থে এই পদক্ষেপ। কারণ, এই ছোট গাড়িগুলো চলবে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনায় নির্মিত রাস্তা দিয়ে। কিন্তু জেলার অনেক রাস্তাই সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে। খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। ওই সব রাস্তায় মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনাও ঘটছে। এই অবস্থায় একলপ্তে প্রচুর গাড়ি পথে নামলে দুর্ভোগ বাড়বে বলেই আশঙ্কা বিভিন্ন মহলে।

Advertisement

জেলায় আরটিও বোর্ড রয়েছে। তিন সদস্যের এই বোর্ডে রয়েছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা পরিবহণ আধিকারিক অনিমেষ সিংহ রায় এবং পরিবহণ দফতরে সরকার মনোনীত সদস্য প্রদ্যোত্‌ ঘোষ। সম্প্রতি এই বোর্ডের বৈঠকেই যাত্রিবাহী ছোট গাড়ির পারমিট দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলার পরিবহণ আধিকারিক (আরটিও) অনিমেষ সিংহ রায় বলেন, ‘‘শর্তসাপেক্ষে যাত্রিবাহী ছোট গাড়ির পারমিট দেওয়া হবে। এর ফলে, গ্রামীণ যাত্রীদের সুবিধে হবে।’’ সেই সঙ্গে কয়েকশো বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে বলেও জানিয়েছে প্রশাসন। পরিবহণ দফতরের সরকার মনোনীত সদস্য প্রদ্যোত্‌ ঘোষের দাবি, রাজ্য সরকার এলাকার সার্বিক উন্নয়নে সব রকম চেষ্টা করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রসার তারই একটি। গ্রামেগঞ্জে এমন অনেক এলাকা রয়েছে, যেখানে বাস চলে না। অথচ, ওই সব এলাকার প্রচুর মানুষ নানা কাজে প্রায়শই ব্লক সদরে আসেন। নতুন করে আরও বেশ কিছু যাত্রিবাহী ছোট গাড়ি নামলে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন।’’ বেহাল রাস্তায় দুর্ভোগ বাড়বে না তো? প্রদ্যোত্‌বাবুর জবাব, ‘‘রাস্তার হাল ফিরছে।’’ জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শৈবাল গিরিরও বক্তব্য, ‘‘ইতিমধ্যে বেশ কিছু রাস্তা সংস্কার করা হয়েছে। কিছু রাস্তা শীঘ্রই সংস্কার হবে। আরও কিছু রাস্তা সংস্কার করা জরুরি। এর তালিকাও রয়েছে।’’

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, গাড়ির পারমিট দেওয়ার ক্ষেত্রে পাঁচটি শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ১) রুটের মোট দৈর্ঘ ৩০ কিলোমিটারের বেশি হবে না। ২) রুটটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ হবে। ৩) রুট জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে হবে না। শুধুমাত্র নির্দিষ্ট জায়গায় জাতীয় সড়ক অতিক্রম করতে পারবে। ৪) রুটটি বর্তমান বাস রুটের উপর হতে পারে। ৫) রুটটি রাজ্য সড়ককে সর্বাধিক ৫ কিলোমিটার অতিক্রম করতে পারবে।

Advertisement

কেন নতুন গাড়ির সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হল না? জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে গাড়ির সংখ্যা বেঁধে দেওয়ার প্রয়োজনই নেই। কারণ, আবেদন করলেই যে পারমিট মিলবে, এমনটা নয়। সব দিক খতিয়ে দেখে তবেই পারমিট দেওয়া হবে।

জেলার অনেক রাস্তাই বেহাল। বহু জায়গায় পিচের আস্তরণ উঠে ছোট- বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। বর্ষায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। ঝুঁকি নিয়েই পথে বেরোচ্ছেন বাসিন্দারা। সবং, পিংলা, কেশপুর, গড়বেতা, গোয়ালতোড়-সহ বেশ কিছু এলাকার গ্রামীণ রাস্তার হাল খুব খারাপ। জেলা পরিষদের এক কর্তাও মানছেন, ‘‘বেশ কিছু রাস্তার সংস্কার প্রয়োজন। বর্ষার পর পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হতে পারে। আমরা মোরাম ফেলে অস্থায়ী ভাবে কিছু গ্রামীণ রাস্তা মেরামতের চেষ্টা করছি।’’ এই অবস্থায় নতুন করে এক ঝাঁক ছোট গাড়ি পথে নামলে দুর্ভোগ বাড়বে বই কমবে না।

গাঁগঞ্জে যাত্রিবাহী ছোট গাড়ির দৌরাত্ম্য নতুন নয়। প্রায় সব গাড়িই বাড়তি যাত্রী তোলে। যেখানে ১২ জন বসার কথা, সেখানে ১৫-১৬ জন যাত্রী না হলে স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ছাড়েই না। ম্যাক্সিক্যাবে সর্বাধিক ১২ জন যাত্রী বসতে পারে। চালককে নিয়ে ১৩ জন। এ ক্ষেত্রে কতটা নিয়ম মানা হবে, প্রশ্ন থাকছে। অনেক গাড়ি বেপোরোয়া ভাবে চলাচল করে। সংকীর্ণ রাস্তার দু’ধারে বেআইনি দখলের জেরে যানজটের সমস্যাও রয়েছে। পরিবহণ দফতরের অবশ্য আশ্বাস, নিয়ম না মেনে গাড়ি চালালে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। ছোট গাড়ির দৌরাত্ম্য বন্ধেও নজরদারি বাড়ানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন