ঘরছাড়াদের ঠাঁই দিতে নাকাল বাম

রাজ্যে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিয়ে নিল। অথচ রাজনৈতিক হিংসা থামার লক্ষণ নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের ছবিটা অন্তত তাই।সিপিএমের অভিযোগ, শুক্রবারও দলের কার্যালয় দখল, অগ্নিসংযোগ, লুঠ, দলের কর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০১:২৭
Share:

রাজ্যে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নিয়ে নিল। অথচ রাজনৈতিক হিংসা থামার লক্ষণ নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের ছবিটা অন্তত তাই।

Advertisement

সিপিএমের অভিযোগ, শুক্রবারও দলের কার্যালয় দখল, অগ্নিসংযোগ, লুঠ, দলের কর্মীদের মারধরের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। এই সন্ত্রাসে ইতিমধ্যে প্রচুর বাম কর্মী-সমর্থখ ঘরছাড়া হয়েছেন। যেহেতু একের পর এক দলের কার্যালয় বেদখল কিংবা ভাঙচুর হয়ে গিয়েছে, তাই ঘরছাড়া কর্মীদের আশ্রয় দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন নেতৃত্ব। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায় বলেন, ‘‘ফলপ্রকাশের পর থেকে হিংসা চলছে। প্রচুর মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। দলের অফিসগুলোয় এসে আশ্রয় নেওয়ার মতো জায়গা আগের মতো আর নেই। বেশ কিছু দলের অফিস বেদখল করা হয়েছে। তাই এ দিক-ও দিক করেই ঘরছাড়া কর্মীদের থাকতে হচ্ছে।’’ ফলপ্রকাশের পর থেকেই ঘরছাড়া মেদিনীপুরের সিপিএম কর্মী শেখ সেরাফত, মোসাব্বের হোসেনরা। তাঁদের বক্তব্য, “কী ভাবে যে দিন কাটছে বলে বোঝাতে পারব না।’’ শাসক দল অবশ্য সন্ত্রাসের অভিযোগ মানতে নারাজ। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের দাবি, “ফলপ্রকাশের পরে জেলায় বড় ঘটনা ঘটেনি। সামান্য কিছু ঘটনা হয়তো ঘটেছে। এ সবও আর ঘটবে না।”

পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘরছাড়া বাম কর্মীর সংখ্যা ঠিক কত?

Advertisement

বাম নেতৃত্বের দাবি, সংখ্যাটা ২,৪০৩ জন। এর মধ্যে ঘাটাল, দাসপুর, চন্দ্রকোনায় ঘরছাড়ার সংখ্যা তুলনায় বেশি। তা ছাড়া, ৩০৬ জন কর্মী তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও অভিযোগ। এর মধ্যে ৫২ জন মহিলা, ৭ জন নাবালক। সিপিএমের এক সূত্রের দাবি, সব মিলিয়ে ৪৬৯টি বাড়িতে হামলা হয়েছে, ৩৮১টি বাড়িতে লুঠপাট চালানো হয়েছে, ১৭টি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। দোকান বন্ধ, চাষবাস বন্ধ, জমি দখলের ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ। কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। সিপিএমের আরও অভিযোগ, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী ইউনিয়নের ঘরেও তাণ্ডব চালানো হয়েছে। সেই সঙ্গে একের পর এক দলীয় কার্যালয়ে হামলা তো চলছেই। বৃহস্পতিবার রাতেও মেদিনীপুর শহরে সিপিএমের একটি শাখা অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বাম শরিক এবং জোট সঙ্গী কংগ্রেসও আক্রান্ত। জেলায় সিপিআইয়ের ৭টি কার্যালয় এবং কংগ্রেসের ২টি কার্যালয়ে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। বাম নেতৃত্ব আরও জানাচ্ছেন, জেলার কোন এলাকায় কী কী হিংসার ঘটনা ঘটেছে, তা পুলিশ-প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে পুলিশ-প্রশাসন তৎপর হয়নি। জেলার পুলিশ সুপার ভাদনা বরুণ চন্দ্রশেখ অবশ্য বলছেন, ‘‘যেখানে যা পদক্ষেপ করার করা হয়েছে।’’

বামেদের দাবি, হানাহানি সব থেকে বেশি ঘটেছে ঘাটালে। ঘাটালের বরদা, কুঠিঘাট, ইড়পালা, বিদ্যাসাগর, রাধানগর, কোতুলপুর, খাসবাড়, সুলতানপুর, হেমন্তপুর, কনকপুর প্রভৃতি এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে তৃণমূলের বাহিনী। কেশপুর, বেলদা, নারায়ণগড়, দাঁতনেও একের পর এক অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। আগামীতে এই পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছে বিরোধী- শিবির। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা বলেন, ‘‘এই অশান্তির দায় শাসক দল এড়াতে পারে না। গণতন্ত্র বিপন্ন।’’ কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায়ের আবার প্রশ্ন, “নির্বাচনে তৃণমূল বিপুল জয় পেয়েছে। তা-ও এই অশান্তি কেন?’’

কেন অশান্তিতে দাঁড়ি টানা যাচ্ছে না? সদুত্তর এড়িয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় বলেন, “সব এলাকাতেই শান্তি রয়েছে। তৃণমূল সব সময় শান্তির পক্ষে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন