প্রযুক্তির হাত ধরে লিটল ম্যাগের দিন বদল

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে লিটল ম্যাগাজিনগুলোও। রঙিন ডিজিটাল প্রচ্ছদ থেকে আরও বেশি বিষয় নির্ভর লেখা, অনেক বেশি আধুনিক হচ্ছে সাময়িকীগুলো।

Advertisement

বরুণ দে

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৩৫
Share:

মেলার স্টলে ঝাঁ চকচকে সাময়িকী। ছবি :সৌমেশ্বর মণ্ডল।

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে লিটল ম্যাগাজিনগুলোও। রঙিন ডিজিটাল প্রচ্ছদ থেকে আরও বেশি বিষয় নির্ভর লেখা, অনেক বেশি আধুনিক হচ্ছে সাময়িকীগুলো।

Advertisement

শনিবার থেকে শুরু হওয়া মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন মেলায় সেই দিন বদলেরই ছোঁয়া। মেলার এ বার অষ্টম বর্ষ। মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন অ্যাকাডেমির উদ্যোগে জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মেলা চলবে আজ, রবিবার পর্যন্ত।

একটা সময় লিটল ম্যাগগুলি মূলত আবেগ নির্ভর হত, তেমন পরিকল্পনা থাকত না। মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন আকাদেমির সম্পাদক ঋত্বিক ত্রিপাঠী বলছেন, ‘‘প্রযুক্তি থেকে আমরা কেউই দূরে থাকতে পারি না। নতুন নতুন প্রযুক্তির জন্যই ম্যাগাজিনগুলো আরও ঝকঝকে হচ্ছে।’’ ঋত্বিকের মতে, আবেগ থাকবেই। তবে এখন সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লিটল ম্যাগাজিনগুলো সংরক্ষণযোগ্য হতে চাইছে। তাই বহু সংখ্যাই হচ্ছে বিষয় নির্ভর। বছরের নানা সময়ে বিশেষ বিশেষ সংখ্যাও প্রকাশ হচ্ছে। লিটল ম্যাগাজিনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সঞ্জীব ভট্টাচার্য, বিশ্ব বন্দ্যোপাধ্যায়রাও মানছেন, “আগের থেকে লিটল ম্যাগাজিনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। ঝকঝকে ছাপা, নজরকাড়া প্রচ্ছদ হচ্ছে। ভিতরে অলঙ্করণ থাকছে।’’

Advertisement

চিত্র প্রদর্শনী থেকে মুক্ত ক্যানভাস, শিল্প আড্ডা, নিজস্ব পত্রিকার সুখ-দুঃখের কথা, কবিতা পাঠ, আলোচনাসভা, অণুগল্প পাঠ, ছড়া পাঠ— দু’দিনের লিটল ম্যাগ মেলায় থাকছে নানা কর্মসূচি। এ দিন দুপুরে শহরে এক পদযাত্রা হয়। পদযাত্রায় সামিল হন কবি, সাহিত্যিক, সম্পাদক, শিল্পী, শিশু- কিশোর এবং বিশিষ্টরা। পদযাত্রা শেষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। মেলার মূল মঞ্চের নামকরণ করা হয়েছে প্রয়াত সমীরণ মজুমদারের নামে। উদ্বোধক ছিলেন কথা-সাহিত্যিক অমর মিত্র। প্রয়াত কবি বীতশোক ভট্টাচার্য স্মৃতি সম্মান প্রদান করা হয় প্রাবন্ধিক হরিপদ মণ্ডলকে। প্রয়াত প্রাবন্ধিক অনিমেষকান্তি পাল স্মৃতি সম্মান দেওয়া হয় কবি-প্রাবন্ধিক প্রফুল্ল পালকে। প্রয়াত কবি অমর ষড়ঙ্গী স্মৃতি সম্মান পান কবি অঞ্জন দাস।

দুই মেদিনীপুর থেকে তিনশোরও বেশি সাময়িকী প্রকাশিত হয়। সব অবশ্য সমান জনপ্রিয় নয়। এ দিন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে লিটল ম্যাগাজিনের প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্তও বলছিলেন, ‘‘সব পত্রিকা যে পূর্ণতা পায় তা নয়। তবে সকলের মধ্যে একটা প্রয়াস থাকে। নতুন পত্রিকা, নতুন ভাবনা, নতুন চেষ্টার জায়গা এই মেলা। বাণিজ্যিক-প্রাতিষ্ঠানিক পত্রিকার বিপরীতে লিটল ম্যাগাজিনের যে অভিযাত্রা, তা অসামান্য, অসাধারণ।’’ মেলা কমিটির সম্পাদক সুব্রত দাস জানালে, লিটল ম্যাগাজিনের প্রচার-প্রসারে মেদিনীপুর লিটল ম্যাগাজিন আকাদেমি নানান ভূমিকা নিয়ে থাকে। সেই সব কর্মসূচির অন্যতম এই মেলা। দুই মেদিনীপুরের কবি-সম্পাদক-লেখকদের মিলনস্থল এই মেলা প্রাঙ্গণ। বিশিষ্ট পত্রিকা সম্পাদকেরা আলোচনায় তাঁদের পত্রিকা প্রকাশের নানা সমস্যা জানাবেন। আর আলোচনাতেই হয়তো উঠে আসবে সমাধানের কোনও সূত্র।

মেলার স্টলে ঠাঁই পাওয়া এক-এক লিটল ম্যাগ এক-এক রকম। কয়েকটিতে বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলোকে অনুকরণের কিছুটা প্রয়াস থাকে। কয়েকটিতে জেলার সাহিত্য-সংস্কৃতির একাল- সেকালের কথা তুলে ধরা হয়। জেলার সম্ভাবনাময় লেখকদের সঙ্গে প্রখ্যাত লেখকদের লেখা সংগ্রহ করেও ছাপা হয়। কয়েকটি লিটল ম্যাগাজিন আবার গুরুত্ব দেয় ছোটদের লেখাকে। থাকে ছড়া-কবিতা-অণুগল্প। এই সব সাময়িকীর হাত ধরে অনেক সম্ভাবনাময় লেখক উঠে আসেন। লিটল ম্যাগের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অভিনন্দন মুখোপাধ্যায়, গৌতম মাহাতোরা বলছেন, ‘‘ছোট পত্রিকার সঙ্গে জড়িয়ে থাকার আনন্দই আলাদা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন