ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে ক্ষোভ

দেব-দর্শন পাঁচ বছরেও হয়নি, নালিশ কমিটির

ঘাটালের মানুষকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে ১৯৭৯ সালে তৎকালীন বাম সরকারের সেচ দফতর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মঞ্জুর করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৯ ০১:৩১
Share:

ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়িত হলে বদলাবে এই ছবি। —ফাইল চিত্র।

নির্বাচন এলেই ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানকে হাতিয়ার করে প্রচারে ঝড় তোলে সব রাজনৈতিক দল। কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রণে কতদিনে তা কার্যকর হবে তা জানেন না কেউই।

Advertisement

ঘাটালের মানুষকে বন্যার হাত থেকে বাঁচাতে ১৯৭৯ সালে তৎকালীন বাম সরকারের সেচ দফতর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান মঞ্জুর করে। ১৯৮২ সালে তৎকালীন সেচমন্ত্রী প্রভাস রায় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের উদ্বোধন করতে ঘাটালে আসেন। বহু প্রতীক্ষিত বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আশায় ঘাটালের মানুষ মন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন রুপোর কোদাল। সেই কোদাল দিয়ে মন্ত্রী প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এলাকায় তৈরি হয়েছিল সেচ দফতরের অফিস ও বাংলো। কিন্তু তারপরই ছন্দপতন ঘটে। অর্থাভাবে বন্ধ হয়ে যায় প্রকল্প। ২০০১ সালে তৈরি হয় ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটি নামে অরাজনৈতিক একটি সংগঠন। ২০১৪ সালে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ নির্বাচিত হন অভিনেতা দেব। সাংসদ হওয়ার পর ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণ সংগ্রাম কমিটির তরফে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার দেখা করার চেষ্টা করেন কমিটির সদস্যরা। কিন্তু অভিযোগ, ব্যস্ত সূচীর দোহাই দিয়ে কমিটির সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি সাংসদকে।

২০১৫ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় জল সম্পদমন্ত্রী উমা ভারতীর সঙ্গে দেখা করে কমিটি। কমিটির দাবি, ওই সাক্ষাতের পর কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রীর উদ্যোগে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানকে গঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের আওতায় আনার কথা ঘোষণা করা হয়। এরপর প্রকল্পটি ধাপে ধাপে গঙ্গা বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশন, কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রকের টেকনিক্যাল কমিটি, মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটির ছাড়পত্র পায়। তবে এই মুহূর্তে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ফাইল অর্থ মন্ত্রকের ছাড়পত্রের অপেক্ষায়। ২০১৬ সালের অগস্ট মাসে সাংসদ দেব ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে সংসদে বাংলায় বক্তৃতা করেন। ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সঞ্জীব কুমার বালিয়ান দেবের প্রশ্নের উত্তরে জানান, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে রাজ্যের কাছে বিস্তারিত তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রকের পরবর্তী বৈঠকে ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

Advertisement

এই ঘোষণার পর কমিটির সদস্যরা ডেবরার একটি অনুষ্ঠানে দেবের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে দেখা করতে যান। অভিযোগ, সেবারও ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে সাংসদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ কমিটির সদস্যরা।

আসন্ন নির্বাচনে ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রেল ফের ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের অস্ত্রে শান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। কিন্তু কতদিনে মিলবে প্রকল্পের বরাদ্দ তার সুলুক সন্ধান নেই কারও কাছেই। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র নায়ক বলেন, ‘‘আমরা ১৮ বছর ধরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান নিয়ে আন্দোলন করছি। সাংসদ পাশে দাঁড়ালে এই বিষয়ে কেন্দ্রের ওপর একটা জোরাল চাপ তৈরি করা যেত। কিন্তু পাঁচ বছরে আমরাই যদি সাংসদের দেখা না পাই, তা হলে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনে কী ভাবে কাছে পাবেন তারকা সাংসদকে?’’

কমিটির অভিযোগকে নস্যাৎ করে সাংসদ প্রতিনিধি অলোক আচার্য বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও কমিটির নাম শুনিনি। ওঁরা এখনও দেখা করতে চাইলে আমি প্রাক্তন সাংসদ তথা ঘাটাল কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী দেবের সঙ্গে ওঁদের দেখা করিয়ে দিতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন