গড়ে সন্ত্রস্ত শাসকই, বন্ধ অফিস

ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে গড়বেতা বিধানসভা। সেখানেই রয়েছে আমলাশুলি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বোলবান্দি গ্রাম সংসদ।

Advertisement

দেবাঞ্জনা ভট্টাচার্য

গড়বেতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৯ ০০:১০
Share:

বন্ধ পড়ে বোলবান্দির তৃণমূল কার্যালয়। —নিজস্ব চিত্র।

গনগনে দুপুরে নিঝুম এক টিনের ছাউনির ঘর। দরজা ভাঙা। ভেতরে তছনছ কাগজপত্র। রং চটা দেওয়ালে মলিন ঘাসফুল।

Advertisement

শাসকের যে গড়ে গত কয়েক বছর ভোটে তেমন দাঁত ফোটাতে পারেনি বিরোধীরা, যে মাটিতে জেতার স্বপ্ন এই লোকসভায় বিজেপি-ও করছে না, সেই গড়বেতায় ভোটের ভরা মরসুমে এই দশা এক তৃণমূল কার্যালয়ের! আশপাশে বিজেপি ও সিপিএম প্রার্থীর নাম চোখে পড়লেও, ঘাসফুলের তেমন দেওয়াল লিখন নেই। মাঝে মাঝে শুধু উড়ছে ইতিউতি গোঁজা তৃণমূলের পতাকা।

ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে পড়ে গড়বেতা বিধানসভা। সেখানেই রয়েছে আমলাশুলি পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বোলবান্দি গ্রাম সংসদ। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে আমলাশুলির দখল নিয়েছে বিজেপি। বোলবান্দিতেও পদ্ম ফুটেছে। অভিযোগ, তারপরই গেরুয়া সন্ত্রাসে তছনছ হয়েছে তৃণমূলের এই পার্টি অফিস। ভাঙচুরের পরে আগুনও দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকে পার্টি অফিস আর চালু হয়নি। ভোটের দু’সপ্তাহ আগেও নয়।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বাম আমলে সন্ত্রাসের অভিযোগে এক সুতোয় গাঁথা ছিল কেশপুর আর গড়বেতা। সুশান্ত ঘোষ, তপন-সুকুরদের দাপটের সেই পর্বেই গড়বেতা সাক্ষী থেকেছে ছোটো আঙারিয়া কাণ্ডের। পালাবদলের পরে তৃণমূলের ‘গড়’ হয়ে উঠেছে গোটা তল্লাট। স্থানীয় বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘এ বারের লোকসভা ভোটে আমরা ৮০-৮৫ হাজারের লিড দেব।’’ বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলার সভাপতি সুখময় শতপথীও মানছেন, ‘‘গড়বেতায় আমরা পিছিয়েই থাকব।’’

এমন অঙ্ক যে তল্লাটে, সেখানে কেন পার্টি অফিস বন্ধ পড়ে?

তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি, বোলবান্দির দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্যামসুন্দর শতপথীর জবাব, ‘‘সামান্য ক্ষমতা পেয়েই বিজেপি যে সন্ত্রাস চালিয়েছে, তা এলাকার মানুষ নিজের চোখেই দেখেছেন। আমরা চেষ্টা করছি। ক’দিন আগে বোলবান্দিতে মিছিলও হয়েছে।’’ এক ধাপ এগিয়ে প্রত্যয়ী বিধায়ক আশিস। তিনি বলছেন, ‘‘১২ মে ভোটের আগেই আমরা ওই পার্টি অফিস খুলতে পারব।’’

হামলার অভিযোগ উড়িয়ে জনরোষের তত্ত্ব দিচ্ছে বিজেপি। দলের গোয়ালতোড় উত্তর মণ্ডলের সভাপতি উজ্জ্বল হাটুই দাবি করলেন, পঞ্চায়েতে বোলবান্দিতে তাঁরা জেতার পরে এলাকায় মিছিল করেছিল তৃণমূল। সেই মিছিল থেকে মদ্যপ কর্মী-সমর্থকেরা গ্রামের মহিলাদের কটূক্তি করে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে মার খান স্থানীয় এক বিজেপি নেতা। উজ্জ্বলের কথায়, ‘‘গ্রামের ছেলের উপর এই আক্রমণ মানতে পারেনি এলাকাবাসী। তারই জের গিয়ে পড়েছে তৃণমূলের পার্টি অফিসে।’’ এই বিজেপি নেতার আরও ব্যাখ্যা, ‘‘আমরা তো এখানে মাত্র একটা পঞ্চায়েতে জিতেছি। অথচ রাজ্যপাট যাদের, গড়বেতা বিধানসভা যাদের, তারা যদি ভোটের সময় পার্টি অফিস খুলতে পারে না, বুঝতে হবে মানুষ তাদের সঙ্গে নেই।’’

বস্তুত, ২০১১ সালের পরে একে একে যখন গড়বেতার বিভিন্ন সিপিএম কার্যালয়ের ঝাঁপ বন্ধ হচ্ছে, তখনও লাল-পার্টি সন্ত্রাসের অভিযোগই তুলেছিল। আর জনসমর্থন না থাকার পাল্টা তত্ত্ব দিয়েছিল তৃণমূল। সন্ত্রাসের কথা এখনও আওড়াচ্ছেন বাম আমলে গড়বেতার দাপুটে শিক্ষক-নেতা তপন ঘোষ। এ বার ভোটে সিপিএমের গড়বেতা বিধানসভার নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক তপন ফোনে বললেন, ‘‘আমাদের গোটা পঞ্চাশেক পার্টি অফিস রং পাল্টে নিজেদের করে নিয়েছে তৃণমূল। ভোটের সময় প্রচারটুকুও করতে দিচ্ছে না।’’

বোলবান্দিতে তো বিজেপি-র বিরুদ্ধে এই একই অভিযোগ করছে তৃণমূল? এ বার তপনের জবাব, ‘‘বিজেপি তো আরও খতরনাক!’’

আর ক্ষমতার নানা রং দেখা বোলবান্দি বলছে, ‘যে আসে লঙ্কায়, সেই হয় রাবণ!’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন