খড়্গপুরের মালঞ্চতে দলীয় নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধনে দিলীপ ঘোষ। সোমবার।ছবি: দেবরাজ ঘোষ
ভোটে জিততে কর্মীরাই যে তাঁর ভরসা, কোনও রাখডাক না রেখেই তা জানিয়ে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। ভরা কর্মিসভায় সাফ বললেন, ‘‘আপনারা যদি বলেন জিতব, তাহলে আমি লড়ব। না হলে বলব, আমি লড়ছি না।’’
খড়্গপুর সদর থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন দিলীপ। এ বার তিনি মেদিনীপুর লোকসভায় পদ্ম প্রার্থী। ভোটের প্রস্তুতিতেই সোমবার মেদিনীপুর শহরের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে কর্মিসভার আয়োজন করেছিল বিজেপি। সভায় ছিলেন মেদিনীপুর বিধানসভা এলাকার কর্মীরা। সেখানে গোড়াতেই দিলীপ বলেন, ‘‘নির্বাচন প্রস্তুতির জন্য প্রথম কর্মিসভা। কর্মীদের উপর ভরসা করে বিজেপি জিতেছে এবং জিতবে।’’ কর্মীদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, ‘‘কি লড়ব না লড়ব না?’’ কর্মীরা সমস্বরে বলে ওঠেন, ‘‘লড়ুন, জিতব।’’ তারপরেও বিজেপি প্রার্থীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘মনোনয়ন জমা দিতে এখনও দেরি রয়েছে। পরবর্তী বৈঠকে দেখব, আপনারা কতটা সিরিয়াস। তারপরই ভেবে দেখব, মনোনয়ন দেব কি না।’’
২০১৬ সালে কংগ্রেসের ১০ বারের জয়ী প্রবীণ বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পাল অর্থাৎ রেলশহরের অবিসম্বাদী চাচাকে হারিয়ে বিধানসভায় যান দিলীপ। এ বারও তাঁর প্রতিপক্ষ দীর্ঘদিনের রাজনীতিক তৃণমূলের মানস ভুঁইয়া। লড়াই যে শক্ত, এ দিনের কর্মিসভায় দিলীপের বক্তব্যে বারবার তার ইঙ্গিত মিলেছে। কতকটা ‘হেডস্যার’-এর ভঙ্গিতে দলের কর্মীদের সেই কঠিন লড়াইয়ের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। কখনও বুঝিয়েছেন, এরপর দেরি করে এলে আর ঢুকতে দেওয়া হবে না। কখনও সহজ-সরল ভাষায় জানিয়েছেন, এই নির্বাচনে কর্মীদের ঠিক কী করণীয়।
এ দিন কর্মিসভা শুরু পরই দিলীপের চোখ চলে যায় সভাঘরের গেটের দিকে। দেখেন, কর্মীরা তখনও ঢুকছেন। সুর চড়ান দিলীপ, ‘‘যেভাবে অনেকে এখনও কর্মিসভায় আসছেন, বিজেপির সভা কিন্তু এ ভাবে হয় না। দশটায় ডাকা হয়েছে, এখন সওয়া বারোটা বেজে গিয়েছে। এখনও কিছু কর্মী আসছেন। হতে পারেন, তাঁরা নতুন নতুন এসেছেন। কেউ সিপিএম, কেউ তৃণমূল, কেউ কংগ্রেস থেকে। সেই সংস্কার ভুলতে পারেননি। দ্রুত ভুলতে হবে। দশটা মানে একটা, এটা কিন্তু বিজেপি নয়।’’ কর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি করতে হলে প্রথমে সময় মানতে হবে। না হলে বিজেপিতে টিকতে পারবেন না। একদিন কমিটি থেকে বাদ পড়ে গিয়ে কান্নাকাটি করবেন। তখন কিছু করার থাকবে না।’’
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কর্মিসভায় কতজন খাতা-কলম নিয়ে এসেছেন সেই খোঁজও নেন দিলীপ। দেখা যায়, মাত্র ২০ শতাংশ কর্মীর কাছে খাতা-কলম রয়েছে। দিলীপ বলেন, ‘‘এটা হলে চলবে না। পরেরবার কর্মী বৈঠকে এলে ছোট নোটবুক, কলম, খাতা, ডায়েরি নিয়ে আসবেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘অমিত শাহ পশ্চিমবাংলা থেকে ২৩টি আসন চেয়েছেন। ২৩টি আসন জিততে হলে মেদিনীপুর আসনও জিততে হবে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সারা পশ্চিমবাংলার কর্মীরা মেদিনীপুরে আসতে চাইছেন। দলের রাজ্য সভাপতিকে জেতাতে চাইছেন। আমি তাঁদের হ্যাঁ বলিনি। কারণ, হ্যাঁ বললে মনে হবে, মেদিনীপুরের কর্মীদের উপরে আমার ভরসা নেই।’’ দিলীপের প্রশ্ন, ‘‘আমি কি তাঁদেরকে ডাকব? না আপনারা জিতিয়ে দেবেন?’’ কর্মীরা জানান, জিতিয়ে দেব। পরের মুহূর্তে দিলীপকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমিও বলেছি, মেদিনীপুরের কর্মীরা জিততে জানে। আপনাদের উপর ভরসা রেখেছি আমি।’’ মেদিনীপুর বিধানসভা থেকে যতটা বেশি সম্ভব ‘লিড’ নিতে হবে বলেও এ দিনের কর্মিসভায় জানিয়ে দেন দিলীপ। বেলা একটার দিকে মঞ্চ ছাড়েন তিনি। কর্মিসভা পরিচালনা করছিলেন বিজেপির জেলা সম্পাদক অরূপ দাস। সভা শেষে তাঁর মন্তব্য, ‘‘সভাটা বেশ ভালই হল। অনেক কিছু শিখলাম।’’
এ দিন খড়্গপুর শহরেও বেশ কয়েকটি কর্মসূচি ছিল দিলীপের। সকালে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে হেঁটে প্রচার চালান তিনি। দুপুরে মালঞ্চতে নির্বাচনী কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন তিনি। প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী মানস ভুঁইয়াকে বিঁধে দিলীপ বলেন, “এই বয়সে ছুটে ফালতু কষ্ট করছেন মানসবাবু। তাঁর সামনে নেতারা কলার ধরে টানাটানি করছে। কয়েকটা নেতাকে বসিয়ে ভেবেছিল বোধ হয় তৃণমূল এক হয়ে গেল। কিন্তু হবে না। আগে নিজের বাড়ি সামলাক। আমরা মেদিনীপুর সামলে নেব।”