হিসেবের কাটাছেঁড়ায় ব্যস্ত তৃণমূল

পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও  কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র ও ঘাটাল লোকসভার মধ্যে থাকা পশ্চিম পাঁশকুড়া এবং মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা এগরা বিধানসভা মিলিয়ে জেলায় গড়ে ভোট পড়েছে প্রায় ৮৫. ১০ শতাংশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৯ ০০:৩১
Share:

তালাবন্ধ কোলাঘাটের পদমপুরের স্থায়ী ধান ক্রয়কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র।

জেলায় ভোটগ্রহণ পর্ব শেষ। আগামী ২৩মে নির্ধারিত হবে জেলার দু’টি লোকসভা কেন্দ্রের ১৯ জন প্রার্থীর ভাগ্য। তার আগে শুরু হয়েছে সম্ভাব্য ভোট প্রাপ্তির হিসেব নিয়ে শাসক ও বিরোধী শিবিরের চুলচেরা বিশ্লেষণ।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র ও ঘাটাল লোকসভার মধ্যে থাকা পশ্চিম পাঁশকুড়া এবং মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা এগরা বিধানসভা মিলিয়ে জেলায় গড়ে ভোট পড়েছে প্রায় ৮৫. ১০ শতাংশ। যদিও ভোটের এই হার ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ কম। সেবার জেলায় গড়ে ভোট পড়েছিল ৮৮. ৬৪ শতাংশ। আর এতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের অন্দরে। পাঁচ বছর আগে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী জিতেছিলেন প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটের ব্যবধানে। হেরেছিলেন সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলি। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে শুভেন্দুবাবু সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে উপ-নির্বাচন হয়। সেই উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারী সিপিএমের মন্দিরা পন্ডাকে প্রায় পাঁচ লক্ষ ভোটে হারিয়ে জয়ী হন। উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী অম্বুজ মহান্তি প্রায় ২ লক্ষ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন।

এবার লোকসভার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দুর বিরুদ্ধে সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলি। বিজেপি প্রার্থী হয়েছেন সিদ্ধার্থ নস্কর। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলের নিরিখে জেলার রাজনৈতিক সমীকরণে বদল ঘটেছে। সিপিএমকে পিছনে ফেলে জেলায় প্রধান বিরোধী হিসেবে উত্থান হয়েছে বিজেপির। লোকসভা ভোটের প্রচারে জেলায় এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যুযুধান দুই শিবিরের সভা ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ বেড়েছে। ভোটের ফল নিয়ে দুই শিবিরই জেতার দাবিতে অনঢ়। প্রচারে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব গত লোকসভা উপনির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেছেন। দলীয় সূত্রের খবর, জেলার ২২৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রায় সবকটিতেই ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। এ জন্য পঞ্চায়েত প্রধান সহ দলের স্থানীয় নেতাদের কাছে অঞ্চল ভিত্তিক বিরোধীদের চেয়ে ভোটপ্রাপ্তির ব্যবধান বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। যার জন্য স্থানীয় নেতাদের দাবিমত জেলা ও রাজ্য নেতারা ছাড়াও তারকাদের এনে জেলায় প্রচার চালায় শাসক দল।

Advertisement

তবে এত সবের পরেও রবিবার, ভোটগ্রহণের পর ভোট পড়ার হার কম হওয়ায় উদ্বেগ শাসক শিবিরে। সেই সঙ্গে আশঙ্কা করা হচ্ছে অন্তর্ঘাতের। দলীয় সূত্রে খবর, ভোটপ্রাপ্তি নিয়ে অঞ্চল ভিত্তিক রিপোর্ট জেলা সভাপতির কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় দলে গোষ্ঠীকোন্দলের জেরে ভোটের সময় নেতাদের ভূমিকা কেমন ছিল তা নিয়েও পর্যালোচনা করবেন জেলা নেতৃত্ব।

খেজুরি, রামনগর, নন্দকুমার, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক, কোলাঘাট, পাঁশকুড়া এলাকায় দলে অন্তর্কলহ নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠেছে। ভোট বাক্সে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কিনা জেলা নেতৃত্ব এখম তা খতিয়ে দেখতে ব্যস্ত। তৃণমূল জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘গতবারের চেয়ে এবার লোকসভা ভোটে জেলায় ২-৩ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। ভিন‌্ রাজ্যে কাজের সূত্রে থাকা ভোটারদের একাংশ নানা কারণে ভোট দিতে আসতে পারেননি। তাই ভোট পড়ার হার কিছুটা কমেছে বলে মনে হচ্ছে। তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিত।’’

ভোট পর্যালোচনা নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘অঞ্চলভিত্তিক রিপোর্ট জমা নেওয়া হচ্ছে। ফল ঘোষণার পরেই ওই রিপোর্ট পর্যালোচনা ও দলের পদাধিকারীদের ভূমিকা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন