রওনা। ভোটকেন্দ্রের পথে ভোটকর্মীরা। হলদিয়ার বাসুদেবপুরে।
গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ থেকে পুরসভায় নিরঙ্কুশ আধিপত্য। জেলার অধিকাংশ বিধায়ক ও দুই সাংসদও তাঁদের দলের। তৃণমূলের এমন শক্তঘাটি পূর্ব মেদিনীপুরে মাথা তুলেছে কেন্দ্রের শাসক বিজেপি।
গত বছর পঞ্চায়েত ভোটেই বিজেপির সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির আভাস মিলেছিল। বামেদের সরিয়ে অনেক আসনেই দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপি। লোকসভার ভোটে জেলার প্রচারে এসে খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ বিদেপির বহু নেতাই না করে বিঁধেছেন জেলায় তৃণমূলের কান্ডারী অধিকারী পরিবারকে। তাই তমলুক ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রের লড়াই যে কার্যত অধিকারীদের গড় রক্ষার লড়াই, মানছেন শাসক দলের নেতারা।
১২ বছর আগে নন্দীগ্রামে জমি রক্ষার আন্দোলন জেলায় বামেদের ভিত নাড়িয়ে দেয়। উত্থান হয়েছিল তৃণমূলের। জেলা পরিষদ, অধিকাংশ পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতির দখল নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরে চালকের আসনে বসেছিল তৃণমূল। পরের বছর লোকসভা ভোটে তৎকালীন জেলার দোর্দণ্ডপ্রতাপ সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে তমলুক কেন্দ্রে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী। কাঁথি কেন্দ্রে জেতেন শিশির অধিকারী। ২০১১য় রাজ্যে পালাবদলে জেলার ১৬টি বিধানসভায় জয় হয় শাসক দলের। জয়ের ধারা অব্যহত থাকে পরের লোকসভা ভোটেও। তমলুক কেন্দ্রের শুভেন্দু অধিকারী সিপিএম প্রার্থী ইব্রাহিম আলিকে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোটে হারিয়ে ফের জয়ী হয়। কাঁথিতে ফের জয়ী হন শিশির অধিকারী। কিন্তু তাল কাটে গত বিধানসভা ভোটে। তমলুক লোকসভার মধ্যে থাকা সাত বিধানসভার মধ্যে তমলুক, হলদিয়া ও পূর্ব পাঁশকুড়ায় জয়ী হয় বামফ্রন্ট।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বিধানসভা ভোটের ছ’মাস পরেই উপ-নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী হন শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী। সিপিএম প্রার্থী মন্দিরা পান্ডাকে প্রায় ৫ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন দিব্যেন্দু। সাত বিধানসভাতেই এগিয়ে থাকে তৃণমূল। এবার লোকসভা ভোটে ফের প্রার্থী দিব্যেন্দু। প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে রয়েছেন সিপিএমের ইব্রাহিম। তবে এবার লোকসভা ভোটে তৃণমূলকে টক্কর দিতে কোমর বেঁধেছে বিজেপি। কীর্তনশিল্পী সিদ্ধার্থ নস্করকে প্রার্থী করে লড়ছে বিজেপি। আর এই কেন্দ্রে এবার কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠ। ফলে লড়াই জমে উঠেছে। অন্যদিকে কাঁথি লোকসভায় এবারও প্রার্থী শিশির অধিকারী। তাঁর বিরুদ্ধে লড়ছেন বামফ্রন্ট প্রার্থী পরিতোষ পট্টানায়েক, বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস সামন্ত। দু’জনেই এবার প্রথম লোকসভা ভোটের ময়দানে।
নিরাপত্তায়: কাঁথির ভোটে হাজির কলকাতার পুলিশ। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা কাঁথির প্রার্থী শিশির অধিকারীর দাবি, ‘‘জেলার দুটি কেন্দ্রেই বিপুল ভোটে জিতব। প্রধানমন্ত্রী প্রচারে আসতেই পারেন। এখানকার মানুষ ওদের সমর্থন করবে না।’’ বিজেপির তমলুক জেলা সভাপতি প্রদীপ দাস বলেন, ‘‘তৃণমূলকে প্রত্যাখান করে মানুষ বিজেপিকে সমর্থন করতে তৈরি। তৃণমূল সন্ত্রাস করে তা দমন করতে চাইছে। ভোটে তৃণমূল জবাব পাবেই।’’