সুপার স্পেশ্যালিটি, কলেজ না পাওয়ায় ক্ষোভ

লিড কমে যাওয়াই চিন্তা শাসকের

লোকসভার যুদ্ধে জরুরি বিধানসভার অঙ্ক। সেই সমীকরণেই আনন্দবাজার পৌঁছে গিয়েছে জনতার দরবারে। তিন বছর আগের ভোটের পরে কী পেয়েছেন মানুষ, সাংসদ নির্বাচনের আগেই বা কী ভাবছেন তাঁরা, রইল বিধানসভাওয়াড়ি পর্যালোচনা। লোকসভার যুদ্ধে জরুরি বিধানসভার অঙ্ক। সেই সমীকরণেই আনন্দবাজার পৌঁছে গিয়েছে জনতার দরবারে। তিন বছর আগের ভোটের পরে কী পেয়েছেন মানুষ, সাংসদ নির্বাচনের আগেই বা কী ভাবছেন তাঁরা, রইল বিধানসভাওয়াড়ি পর্যালোচনা।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০২:৫০
Share:

বেহাল: চণ্ডীপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নিজস্ব চিত্র

নাতিকে বিড়াল কামড়ে দেওয়ায় জলাতঙ্কের প্রতিষেধক নিতে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছেন চণ্ডীপুরের চাকনান গ্রামের বৃদ্ধ শ্রীকান্ত প্রধান। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বহির্বিভাগে রোগীর ভিড় থাকায় বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করছিলেন। বহির্বিভাগে ঘরের মাথায় টিনের ছাউনিতে রোদের তাপে প্রচণ্ড গরমে দু’জনেই ঘামছিলেন। বহির্বিভাগে অপেক্ষমাণ রোগীদের অনেকেই জানালেন, গ্রামের উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাকা ছাদ রয়েছে। অথচ ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এখনও টিনের চাল। ছবিটা চণ্ডীপুরের এড়াশাল ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।

Advertisement

তমলুক জেলা হাসপাতাল থেকে ৩০ কিলোমিটার ও নন্দীগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে এই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভগবানপুর, নন্দীগ্রাম- ২, খেজুরি-১ ব্লকের রোগীরাও আসেন। রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৩০ শয্যা বাড়িয়ে ৪২ করা হয়েছে। ফলে ঠাঁই নাই অবস্থা। গড়ে প্রতিদিন ৫০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। ভোটের প্রসঙ্গ তুলতেই চণ্ডীপুরের গড়গ্রামের বাসিন্দা উত্তম জানার ক্ষোভ, ‘‘কত জায়গায় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হল। কিন্তু এখানে হল না। চণ্ডীপুরের কি কোনও গুরুত্ব নেই।’’

দিঘা-নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়ক এবং নন্দীগ্রামগামী সড়কের সংযোগস্থলে চণ্ডীপুর বাজার জেলার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র। এলাকায় বহুতলের ভিড়ে নগরায়নের ছোঁয়া। স্বাস্থ্য, শিক্ষা-সহ উন্নয়নের দাবি, পাল্টা অভিযোগ নিয়ে ভোটের প্রচারে তরজা নেমেছে শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজে বাজারের দোকানদারদের একাংশকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে। যা চাপা ক্ষোভ যেমন রয়েছে, তেমনই এখানে দীর্ঘদিনের যানজট সমস্যা মেটার আশাও দেখছেন বাসিন্দারা। এলাকার বেহাল নিকাশি, ছাত্রছাত্রীদের জন্য ডিগ্রি কলেজ না থাকায় উচ্চ-শিক্ষার অসুবিধা নিয়ে সরব হয়েছে বামেরা। যদিও তৃণমূল বিধায়ক অমিয়কান্তি ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেই গ্রামের প্রায় সব রাস্তা পাকা হয়েছে। পানীয় জলের জন্য প্রচুর সাব-মার্সিবল পাম্প বসেছে। নন্দীগ্রাম জলপ্রকল্পের আওতায় রয়েছে চণ্ডীপুর। ফলে আগামীদিনে পানীয় জলের জোগান আরও বাড়বে। চণ্ডীপুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে ১০০ শয্যার করা ও মহিলা ডিগ্রি কলেজ তৈরির পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে।’’

Advertisement

সিপিএম নেতা ও চণ্ডীপুর বিধানসভা নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়ক মঙ্গলেন্দু প্রধানের অভিযোগ, ‘‘এলাকার নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল, ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিকাঠামোয় খামতি রয়েছে, ছেলে-মেয়েদের পড়ার কলেজ নেই। এলাকার উন্নয়নে সাংসদ তহবিলের কাজ কোথায়? পঞ্চায়েতের কাজে দলবাজি ও দুর্নীতি হচ্ছে।’’ চণ্ডীপুর ব্লক ও পাশের ভগবানপুর-১ ব্লকের ছটি পঞ্চায়েত নিয়ে চণ্ডীপুর বিধানসভা রয়েছে কাঁথি লোকসভার মধ্যে। ২০১৪-র লোকসভা ভোটে বিধানসভায় প্রায় ২০ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী। এরপর ২০১৬-র বিধানসভার ভোটে তৃণমূল প্রার্থী অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য জেতেন প্রায় দশ হাজার ভোটে। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হয় তৃণমূল। যদিও রাজনৈতিক মহলের মতে, চণ্ডীপুরে বামেদের আগে শক্তিশালী সংগঠন থাকলেও গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে অনেক বুথেই তৃণমূলকে টক্কর দিয়েছে বিজেপি। অমিয়কান্তিবাবুর দাবি, ‘‘শিশিরবাবুর প্রশাসনিক দক্ষতা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক তাঁকে অনেক এগিয়ে দিয়েছে। সাংসদ তহবিলের অর্থে চণ্ডীপুর বাজারে বাইপাস সড়ক, একাধিক পাকা সেতু, স্কুলের পরিকাঠামো উন্নয়নে প্রচুর কাজ হয়েছে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের অর্থে একাধিক বাজার, পথবাতি এবং ৬ টি পাকা রাস্তা হয়েছে। তাই শিশিরবাবুর জয় নিয়ে আমরা নিশ্চিত।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বিরুদ্ধে বামফ্রন্ট প্রার্থী তথা সিপিএমের যুব নেতা পরিতোষ পট্টানায়েককে প্রবীণের সঙ্গে নবীনের লড়াই হিসাবে তুলে ধরে আশার আলো দেখছেন স্থানীয় বাম নেতা-কর্মীরা। বিজেপি প্রার্থী দেবাশিস সামন্তের পরিচিতি চিকিৎসক হিসেবে। তবে পরিচিত মুখের বদলে তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে দলে ক্ষোভ রয়েছে। যদিও বিজেপির কাঁথি জেলা সভাপতি তপন মাইতির দাবি, ‘‘চিকিৎসক হিসাবে দেবাশিসবাবুর পরিচিতির জন্য ভোটের প্রচারে সুবিধা হয়েছে। চণ্ডীপুর সহ গোটা লোকসভা এলাকায় তৃণমূল কোনও উন্নয়ন করেনি। মানুষ তাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে রায় দেওয়ার জন্য তৈরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন