ধৃতেরা তমলুক জেলা আদালতে। শুক্র বার। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।
ফের জাতীয় সড়কে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য। এ বার চলন্ত গাড়িতে খেলনা পিস্তল দেখিয়ে লুঠের অভিযোগ উঠল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার থানা এলাকায়।
বুধবার রাতে তমলুকের নেতাজিনগর টোলপ্লাজার কাছে সন্দীপ মাইতি নামে এক ভাড়া গাড়ির আরোহীকে মারধর করে ল্যাপটপ, মোবাইল, এটিএম কার্ড ও নগদ পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। খেজুরির লাখি গ্রামেবাসিন্দা সন্দীপবাবুকে দুষ্কৃতীরা মাঝ রাস্তায় ফেলে দিয়ে যায়। পুলিশ অবশ্যওই গাড়ির চালক-সহ তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে খোয়া যাওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করেছে। মিলেছে নকল পিস্তলটিও। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘যেহেতু খেলনা আগ্নেয়াস্ত্রকে আসলের মতো ব্যবহার করে দুষ্কৃতীরা লুঠপাট করে, তাই অস্ত্র আইনেই মামলা চলবে।
সন্দীপবাবু বীরভূমের নলহাটি-২ ব্লক অফিসের কর্মী। সেখানেই থাকেন। গত বুধবার রাত প্রায় ১২টা নাগাদ মেচেদা স্টেশনে নেমে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে কোলাঘাটের দিক আসা ওই ভাড়ার গাড়িতে তিনি ওঠেন খেজুরির হেঁড়িয়া যাওয়ার জন্য। ৫০ টাকা ভাড়া ঠিক হয়। সন্দীপবাবু বলেন, ‘‘গাড়িটি হলদিয়ার দিকে যাচ্ছিল। কম টাকায় য়েতে রাজি হয়ে যায়। আরও তিনজন যাত্রী ছিল, ফলে সন্দেহ হয়নি। কিন্তু মাঝরাস্তা ওই সহযাত্রীরাই ভোল বদলাল। পিস্তলের বাঁট দিয়ে মেরে সব কেড়ে নিল।’’
জাতীয় সড়কে সারারাত থাকে পুলিশি টহল, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের নজরদারিও চলে। তারপরেও কী করে দুষ্কৃতীরা এমন কাণ্ড ঘটাতে পারে, সেই প্রশ্ন উঠছে। চলতি বছরের গোড়ায় হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কেই মহিষাদল থানার কাপাসএড়্যায় দুষ্কৃতী ধরতে গিয়ে খুন হন এক পুলিশকর্মী। তারপর চলেছে ধরপাকড়। কিন্তু পরিস্থিতি বদলায়নি।
সন্দীপবাবু অভিযোগ করেন, টোলপ্লাজা পেরোতেই আগ্নেয়াস্ত্র বার করে দুষ্কৃতীরা। প্রাণে মারার হুমকি দেয়। তারপর পাঁচ হাজার টাকা ও জিনিসপত্র কেড়ে নেয় বাখরাবাদের কাছে চলন্ত গাড়ি থেকে তাঁকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রক্তাক্ত সন্দীপবাবু কোনওমতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের একটি টহলদারি গাড়িকে হাত দেখিয়ে থামান। সেই গাড়িতেই নন্দকুমার থানায় পৌঁছন। পুলিশই ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্দীপবাবুর চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।
পরে টোলপ্লাজার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গাড়িটিকে চিহ্নিত করে পুলিশ। গাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করে বৃহস্পতিবার রাতে গাড়ির চালক নিশ্চিন্তবসান গ্রামের সঞ্জয় দাস ওরফে দেবুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তমলুক থানার উত্তর সোনামুই গ্রামের সৈয়দ ইকবাল, তমলুক শহরের শঙ্করআড়ার বাসিন্দা বিমল সামন্তকে ধরা হয়। শুক্রবার তমলুক আদালতের বিচারক প্রত্যেককে পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। ইকবালের কাছ থেকেই উদ্ধার হয়েছে লুঠের মাল ও নকল পিস্তল। ধৃত সঞ্জয় দাসের বিরুদ্ধে এর আগেও এটিএম ভেঙে টাকা লুঠের অভিযোগ রয়েছে। সে বেশ কিছুদিন জেল হেফাজতে থাকার পর জামিনে ছাড়া পায়। অপর এক দুষ্কৃতীকে ধরতে তল্লাশি চলছে।
অন্য একটি ঘটনায় ময়না-তমলুক রাজ্যে সড়কে প্রায় একই ভাবে লুঠ করা হয়েছে একটি মাছ বোঝাই গাড়িও। শুক্রবার ভোররাতে ময়না থেকে তমলুকের দিকে আসছিল গাড়িটি। অভিযোগ, শ্রীরামপুরের কাছে ওই গাড়িটি আটকে চালকের কাছ থেকে এক হাজার টাকা লুঠ করে দুই দুষ্কৃতী। ঘটনায় জড়িত অভিযোগে শেখ জয়নাল, শেখ রাজু নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বাড়ি ময়নার গড়সাফাত এলাকায়। তাদের কাছ থেকেও একটি খেলনা পিস্তল উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই দু’জনের বিরুদ্ধেও নানা দুষ্কর্মের অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।