Migratory Labourer

আশ্বাস নয়, চাই কর্মসংস্থানের সুযোগ

অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, একমাত্র ‘মেগা প্রজেক্ট’ রূপায়ণ ছাড়া বহু সংখ্যক মানুষকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ দেওয়া সম্ভব নয়।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত , বরুণ দে

ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:৪৬
Share:

ভিন রাজ্যে পাড়ি পরিযায়ী শ্রমিকদের। —ছবি : সংগৃহীত

কাজের অভাবে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরের গ্রামীণ এলাকার একাংশ বাসিন্দা এখন ভিন রাজ্যমুখী। নতুন কাজের প্রকল্প ‘খেলা হবে’ কি পারবে এলাকায় তাঁদের কাজ দিতে? এই প্রশ্নই এখন ঘোরাফেরা করছে দুই জেলায়।

Advertisement

বিরোধীদের দাবি, তৃণমূল সরকার এই দুই জেলায় কর্মসংস্থানের জায়গা তৈরির চেষ্টা সেভাবে করেনি। অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, একমাত্র ‘মেগা প্রজেক্ট’ রূপায়ণ ছাড়া বহু সংখ্যক মানুষকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ দেওয়া সম্ভব নয়। এই দুই জেলায় যা এখনও সেভাবে হয়নি। যদিও তার সুযোগ রয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলার ক্ষেত্রে পর্যটনশিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কথা তো মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলে থাকেন। তবে পর্যটন ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, বাস্তবে তার রূপায়ণ সেভাবে নেই। বেলপাহাড়ির গাডরাসিনি পাহাড় থেকে খাঁদারানি ঝিল পর্যন্ত ‘রোপওয়ে’ করার বিষয়ে প্রশাসনিকস্তরে প্রাথমিক ভাবনা চিন্তা হয়েছিল। তারপর কিছুই হয়নি। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সিকিমে রাজ্য সরকার সরকারি উদ্যোগে পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে ‘মেগা প্রজেক্ট’ তৈরি করার ফলে বহু মানুষ সেখানে ভিড় করেন। সরকারি অনুদান পেয়ে ঝাড়গ্রাম জেলায় ১০৩টি বেসরকারি হোম স্টে চালু হয়েছে। সেখানে পর্যটকরা যাচ্ছেনও। কিন্তু সেখানে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ কোথায়?

সিপিএমের ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকার বলেন, ‘‘গুটি কয়েক স্পঞ্জ আয়রন কারখানা ছাড়া জেলায় বড় শিল্প নেই। ১০-১২টি চাল কল রয়েছে। সেগুলিতেও ধান থেকে চাল তৈরির কাজ অনিয়মিত। গত ১২ বছরে মুখ্যমন্ত্রী কোনও শিল্পের উদ্বোধন করছেন এমন ছবি দেখিনি। এবার লোকসভা ভোটের বৈতরণী পার হতেই খেলা হবে প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ ঝাড়গ্রাম জেলার প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সুব্রত ভট্টাচার্যেরও দাবি, ‘‘এলাকায় কাজ নেই। তাই দলে দলে যুবকরা ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজে যাচ্ছেন। পথশ্রী, রাস্তাশ্রী প্রকল্পে জবকার্ডের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষদের কাজ দেওয়ার বিষয়টি বিরাট ভাঁওতা ছিল। খেলা হবে-ও তেমনই ভাঁওতা।’’ বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সহ সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাজ দেওয়া মানে তো নিজের দলের লোকজনকে পাঁচশো-হাজার টাকার খয়রাতি বিলি। বৃহৎ আকারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা এই রাজ্য সরকারের পক্ষে কখনই সম্ভব নয়।’’

Advertisement

করোনা কালে ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাতেও প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছিলেন। ওই সময় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেও তাঁদের কাজের বন্দোবস্ত সেভাবে হয়নি। এদিকে একশো দিনের কাজ করেও মজুরি পাননি অনেকে। নয়াগ্রাম ব্লকের বালিগেড়িয়া অঞ্চলের মুড়াখুঁটায় দেড় বছর আগে একশো দিনের প্রকল্পে পুকুর খননের কাজ করেও মজুরি পাননি দাসো হেমব্রম, পঞ্চানন হেমব্রমরা। তাঁদের কথায়, ‘‘এলাকার দেড়শো জনের মজুরি বকেয়া রয়েছে। কাজ না থাকায় কেউ কেউ ঠিকাদারের অধীনে ভিন্ রাজ্যে রাজের সন্ধানে গিয়েছেন।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরেও ছবিটা একই রকম। জানা যাচ্ছে, এই জেলায় ‘এমপ্লয়মেন্ট ব্যাঙ্কে’ নথিভুক্ত কর্মপ্রার্থীর সংখ্যাটা এখন প্রায় দেড় লক্ষ। এরমধ্যে মাত্র তিন হাজার জন বেকার ভাতা পান। এই জেলাতেও নতুন করে বড় শিল্পের দেখা নেই। চালু কিছু মাঝারি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এক সময় ঠিক ছিল, শালবনিতে জিন্দল গোষ্ঠীর ইস্পাত কারখানা হবে। সেটাও হয়নি। বিরোধীরা বলছেন, এখানেও কাজ বা পারিশ্রমিক যথেষ্ট না থাকার কারণে বহু মানুষকে পরিযায়ী শ্রমিক হতে হয়েছে। তৃণমূলের মদতপুষ্ট সিন্ডিকেটের দাপটে ছোট শিল্পপতিরা কারখানার ঝাঁপ বন্ধ করছেন। বিজেপির মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা মুখপাত্র অরূপ দাসের কটাক্ষ, ‘‘নতুন লগ্নি টানা তো দূরঅস্ত্, তোলাবাজির দাপটে সঙ্কটে অনেক চালু শিল্পও।’’

প্রশাসনের অবশ্য দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরে নতুন করে আরও শিল্পতালুক হচ্ছে। নতুন করে ১১টি ব্লকের ১১টি জায়গার জমি চিহ্নিত হয়েছে। তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলছেন, ‘‘জেলায় বিভিন্ন শিল্পেই বিনিয়োগ আসছে। পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। বাম আমলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এখন নতুন নতুন কারখানা তৈরি হচ্ছে। অনেক বেকার যুবক-যুবতীর সহজ ঋণের ব্যবস্থা হয়েছে। কারিগরি দক্ষতার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।’’

নতুন প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছে। আশ্বাসও মিলছে। তা বাস্তবেও রূপায়িত হোক, চাইছেন কর্মপ্রার্থীরা। (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন