প্রতীকী ছবি।
কয়েক মাস পরে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে গ্রামীণ এলাকায় গরিবদের জন্য পাকা বাড়ি তৈরি ও রাস্তা পাকা করার কাজে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তমলুকে জেলা প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে জেলা পরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির পদাধিকারীদের মমতা নির্দেশ দেন, দ্রুত কাজ সেরে ফেলতে হবে। আর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্প ও গ্রামীণ রাস্তার উন্নতির কাজে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে গ্রামের গরিব মানুষের পাকাবাড়ি তৈরির গুরুত্বের কথা বোঝাতে মমতা বলেন, ‘‘’বাংলার বাড়ি প্রকল্পে উপভোক্তাদের টাকা সোজা তাদের ব্যাঙ্ক আকাউন্টে চলে যায়। এতে লোকে হাতে টাকা পেয়ে বাড়ি করবে। বাড়ি পেয়ে লোকে আশীর্বাদ করবে। মানুষ আপনাকে ভোট দিয়েছেন আপনার কাছে কাজ পাবে বলে। এটাই ভোট পলিটিক্স।’’ প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরেই পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের তরফে তৎপরতা শুরু হয়েছে এই দুই ক্ষেত্রে বকেয়া কাজ শেষ করতে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, জেলার সমস্ত পঞ্চায়েতকেই বলা হয়েছে তাদের ‘রিজার্ভ ফাণ্ড’ থেকে দ্রুত ওই দুই প্রকল্পের কাজ শেষ করার উপর জোর দিতে। আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি তৈরির বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করার পাশাপাশি ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে কাজে গতি আনতে বলা হয়েছে। ২০১২ সালের সমীক্ষার ভিত্তিতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় আবাস যোজনায় ২০১৯-’২০ আর্থিক বছরে ৮৭ হাজার, ২০২০-’২১ আর্থিক বছরে ৮৮ হাজার পাকাবাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। তবে ২০২০ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজের গতি কমে গিয়েছিল। করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর ফের ওই কাজে গতি আসার পরে গত বছর নভেম্বর মাসে ২০১৯-’২০, ২০২০-’২১ ও ২০২১-’২২ আর্থিক বছর মিলিয়ে আবাস যোজনায় জেলায় তৈরি হওয়া মোট ১ লক্ষ ৯২ হাজার পাকাবাড়ির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছিল। আবাস যোজনার উপভোক্তা তালিকার বাইরে থাকা গরিব মানুষদের পাকাবাড়ি তৈরির জন্য ‘আবাস প্লাস’ যোজনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ২০১৮ সালে সমীক্ষার ভিত্তিতে ওই প্রকল্পের উপভোক্তা তালিকা তৈরির কাজ হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রকল্পে পাকাবাড়ি তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি।
জেলাপ্রশাসন সূত্রের খবর, আবাস যোজনায় পাকাবাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে প্রতিটি পঞ্চায়েতকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর আবাস প্লাস যোজনার ক্ষেত্রে উপভোক্তা তালিকায় থাকা পরিবার ছাড়া আরও যে সব গরিব পরিবার রয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে সমীক্ষা চলছে। ওই তালিকায় গরিবদের ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে পাকাবাড়ি তৈরির জন্য অর্থ সাহায্য করা হবে।
‘আবাস প্লাস’ যোজনায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে গরিবদের পাকাবাড়ি তৈরির জন্য পঞ্চায়েতের হাতে থাকা রিজার্ভ ফাণ্ড, জেলাপরিষদের বরাদ্দ ও ‘বিধায়ক এলাকা উন্নয়ন তহবিল’ থেকে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। এজন্য জেলার সব পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় আবাস যোজনায় পাকাবাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ। বাকি কাজও শীঘ্রই সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। ‘আবাস প্লাস যোজনা’র উপভোক্তা তালিকা প্রায় পাঁচ বছর হয়ে যাওয়ায় ফের সমীক্ষা করে তালিকা তৈরির কাজ চলছে। বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ওইসব পরিবারের পাকাবাড়ি তৈরির জন্য পঞ্চায়েতগুলিকে ‘রিজার্ভ ফাণ্ড’ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।’’