এ বার চেয়ারম্যান

পশ্চিমাঞ্চল পর্ষদে ফিরছেন সুকুমার

মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন দলের একাংশের বিক্ষোভে। ফের সেই পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদেই ফিরলেন সুকুমার হাঁসদা। তবে এ বার আর মন্ত্রী নন, চেয়ারম্যান।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:৩৭
Share:

মন্ত্রিত্ব হারিয়েছিলেন দলের একাংশের বিক্ষোভে। ফের সেই পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদেই ফিরলেন সুকুমার হাঁসদা। তবে এ বার আর মন্ত্রী নন, চেয়ারম্যান।

Advertisement

জানা গিয়েছে, ঝাড়গ্রামের তৃণমূল বিধায়ক সুকুমারবাবুকে পর্ষদ চেয়ারম্যান করার নির্দেশ বুধবার দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতদিন পদাধিকার বলে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রীই সামলাতেন পর্ষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব। কিন্তু এ বার মন্ত্রী রইলেন শান্তিরাম মাহাতো, আর চেয়ারম্যান সুকুমারবাবু।

তবে দুই পদের জেরে বিভাগীয় কাজে সমস্যার আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। কারণ, এ ক্ষেত্রে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদ এবং পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের কাজের মূল কথাই হল সমন্বয়। পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম ও বর্ধমান জেলার ৭৪টি ব্লকের উন্নয়ন সংক্রান্ত বিশেষ কাজকর্ম এই পর্ষদ ও দফতরের মাধ্যমে হয়। পর্ষদ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতর থেকে কাজের অনুমোদন ও বরাদ্দ দেওয়া হয়। দায়িত্ব ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় এই কাজ সুষ্ঠু ভাবে হবে কিনা, সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে প্রশাসনের অন্দরেই।

Advertisement

পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়নমন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সুকুমারবাবুকে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলে উন্নয়ন-কাজ আরও সুষ্ঠু ভাবে করা যাবে।” চেয়ারম্যান পদটি আলাদা হওয়ার ফলে প্রশাসনিক জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়ে শান্তিরামবাবু বলেন, “কিছু ফাইলে চেয়ারম্যান সই করবেন। কিছু ফাইলে মন্ত্রী হিসেবে আমি সই করব। কোনও সমস্যা হবে না।” আর সুকুমারবাবু বলছেন, “মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন। উন্নয়নের জন্য সব সময় মন্ত্রীকে সহযোগিতা করব।”

২০১১ সালে তৎকালীন ঝাড়গ্রাম মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক পদে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে দাঁড়ান সুকুমারবাবু। ঝাড়গ্রাম থেকে প্রথমবার জিতেই পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী হন তিনি। তবে প্রথম তৃণমূল সরকারের শেষের দিকে দলের মধ্যেই সুকুমারবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনেকে জানান, মন্ত্রী হয়ে উন্নয়নের প্রশ্নে তিনি সবাইকে সমান ভাবে দেখছেন না। পশ্চিমাঞ্চলের অন্য জেলাগুলির তুলনায় নিজের জেলা, বিশেষত ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকাকে তিনি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন বলেও অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে ২০১৫ সালে সুকুমারবাবুকে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়ে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী করেন মমতা। আর শান্তিরামবাবুকে পশ্চিমাঞ্চলের মন্ত্রী করা হয়।

তবে এ বার ঝাড়গ্রাম থেকে জিতলেও সুকুমারবাবুকে আর মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেননি মমতা। তাহলে কেন আবার তাঁকেই পর্ষদ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হল?

তৃণমূল সূত্রের খবর, মন্ত্রী শান্তিরামবাবুর কাজকর্মে মুখ্যমন্ত্রী সন্তুষ্ট। তাও পর্ষদ চেয়ারম্যান হিসাবে সুকুমারবাবুকে মনোনয়নের পিছনে ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের অঙ্কই কাজ করেছে বলে দলের একাংশ মনে করছে। কারণ, সুকুমারবাবু মন্ত্রিত্ব হারানোর পরে অনুগামীদের মধ্যে যথেষ্ট ক্ষোভ ছিল। তা ছাড়া, জঙ্গলমহলের সীমানাবর্তী ঝাড়খণ্ডে মাওবাদীরাও সক্রিয় হচ্ছে বলে খবর। এই পরিস্থিতিতে সুকুমারবাবুর পরামর্শ-প্রস্তাব অনুযায়ী উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও রূপায়ণের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে আদিবাসী ভাবাবেগ এবং জঙ্গলমহলে নিচুতলায় সংগঠন জোরদার করার বিষয়টিই কাজ করেছে বলে তৃণমূল সূত্রের ব্যাখ্যা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন