ঘর নেই, খোলা আকাশের নীচেই চলছে অঙ্গনওয়াড়ি

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে শবর ও আদিবাসী সম্প্রদায় অধ্যুষিত কুঁড়াশোল গ্রামে ১২০টি পরিবারের বাস। বাসিন্দাদের সিংহভাগ দিনমজুর ও প্রান্তিক চাষি। গ্রামে প্রাথমিক স্কুল নেই।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০৭:২০
Share:

দিনের পর দিন এ ভাবেই খোলা আকাশের নীচে চলছে প্রসূতি ও শিশুদের রান্না। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব বাড়ি নেই। জোগাড় করা যায়নি ভাড়াবাড়িও। জঙ্গলঘেরা মাঠের এক কোণে ঝোপঝাড়ের মধ্যে বসেই চলছে শিশুদের পাঠ। গ্রীষ্ম-বর্ষায় হামেশাই মাঠের গর্ত থেকে বেরিয়ে পড়ে সাপ। তাই পড়তে বসেও বেশ ভয়েই থাকে বাচ্চারা। খোলা আকাশের নীচে দীর্ঘদিন এ ভাবেই চলছে ঝাড়গ্রাম ব্লকের আগুইবনি পঞ্চায়েতের কুঁড়াশোল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র।

Advertisement

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে শবর ও আদিবাসী সম্প্রদায় অধ্যুষিত কুঁড়াশোল গ্রামে ১২০টি পরিবারের বাস। বাসিন্দাদের সিংহভাগ দিনমজুর ও প্রান্তিক চাষি। গ্রামে প্রাথমিক স্কুল নেই। কাছে একটি শিশুশিক্ষাকেন্দ্র (এসএসকে) রয়েছে। কিন্তু এসএসকে কর্তৃপক্ষ তাদের অপরিসর জায়গায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চালাতে দিতে রাজি হননি। ২০০৭ সালে বন বিভাগের অস্থায়ী অ্যাসবেস্টসের ছাউনিতে কুঁড়াশোল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রটি চালু হয়। ছাউনিটি ভেঙে যাওয়ায় বছর পাঁচেক খোলা আকাশের তলায় জঙ্গল লাগোয়া মাঠেই চলছে এই কেন্দ্র।

শুধু কুঁড়াশোল নয়, ঝাড়গ্রাম জেলার ৮টি ব্লকের ২,৪১৭টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৪১টি কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন নেই। ভবন নেই, এমন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি সাধারণত কোনও প্রাথমিক স্কুল অথবা ক্লাব ঘরে বা গৃহস্থের বারান্দায় চলে। কিন্তু কুঁড়াশোলের এর কোনওটাই জোটেনি।

Advertisement

বাম জমানায় কুঁড়াশোল অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘর তৈরির জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু জমির সমস্যায় ঘর তৈরি করা যায়নি। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরেও সমস্যা মেটেনি। ওই কেন্দ্রের কর্মী লিলিরানি সিংহ ও সহায়িকা উমা মান্নার দাবি, “তাঁরা নিয়মিত প্রশাসনের কাছে আবেদন করে চলেছেন। গ্রামবাসীরাও প্রশাসনিক মহলে লিখিত দরখাস্ত দিয়েছেন। কিন্তু কিছুই হয়নি।”

অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খুদে পড়ুয়া শ্রাবণী হেমব্রম, সুকুমার সরেন-রা জানায়, শুঁয়োপোকার ভয়ে বেশিক্ষণ বসা যায় না। পড়া তো দূর অস্ত। মা সুমিতা হাঁসদা, কাকলি মাহাতোদেরও প্রশ্ন, ‘‘জঙ্গলমহলে এত উন্নয়ন হচ্ছে। অথচ সরকার শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের একটা ঘর করে দিতে পারছে না?”

আগুইবনি পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য জগদীশ মাহাতো বলেন, “গ্রামবাসীরা অস্থায়ী ছাউনি নয়, চান স্থায়ী ভবন। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি।” জেলা প্রকল্প আধিকারিক স্বর্ণেন্দু মণ্ডল বলছেন, “সবে দায়িত্বে এসেছি। যে কেন্দ্রগুলির জায়গা নিয়ে সমস্যা হচ্ছে, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেগুলির ভবন তৈরির জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে।” ভবন না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রটি অন্য কোনও জায়গায় চালানোর ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন