স্বাস্থ্যবিধি শিকেয়, চুপ প্রশাসন

নার্সিংহোমের পিছু ছাড়েনি বহু অনিয়ম

বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে অব্যবস্থায় রাশ টানতে নয়া স্বাস্থ্যবিধি চালু করেছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি পাশ হয়েছে নতুন আইনও। তারপরেও অবশ্য ঘাটালের নার্সিংহোমগুলির ভোল বদলায়নি।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৭ ০১:৩২
Share:

বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমে অব্যবস্থায় রাশ টানতে নয়া স্বাস্থ্যবিধি চালু করেছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি পাশ হয়েছে নতুন আইনও। তারপরেও অবশ্য ঘাটালের নার্সিংহোমগুলির ভোল বদলায়নি। পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে অনেক নার্সিংহোম। আর অভিযানের কথা বলেই দায় সারছে প্রশাসন।

Advertisement

ঘাটালের অধিকাংশ নার্সিংহোমে অনিয়মটাই নিয়ম। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি পাঁচটি শয্যা পিছু একজন নার্স রাখার কথা থাকলেও অধিকাংশ নার্সিংহোমে তা নেই বলে অভিযোগ। নেই পর্যাপ্ত আরএমও-ও। তৈরি হয়নি স্বাস্থ্যসম্মত অপারেশন থিয়েটার (ওটি)। নেই পযার্প্ত কর্মী। শুধু তাই নয়, অনেক নার্সিংহোমে যত্রতত্র ডাঁই হয়ে পড়ে থাকে ওষুধ, গজ, তুলো, ব্যন্ডেজের মতো দাহ্যবস্তু।

নার্সিংহোমগুলিতে শিকেয় নিরাপত্তা। অনেক নার্সিংহোমেই বিদ্যুতের লাইন ঠিক নেই। অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র থাকলেও অনেকেই এর ব্যবহার জানেন না। সরু গলির মধ্যে গজিয়ে উঠেছে অনেক নার্সিংহোম। কোনও কারণে আগুন লাগলে জায়গা নেই দমকল ঢোকারও।

Advertisement

সমস্যার কথা মানছেন জেলা স্বাস্থ্য ভবনের এক আধিকারিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্তার দাবি, “হাতে গোনা কয়েকটি বাদ দিলে ঘাটালের কোনও নার্সিংহোমই চালু থাকার কথা নয়। নতুন স্বাস্থ্য আইনে সবক’টি নার্সিংহোমই বন্ধ হয়ে যাবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আসলে আমাদেরও উদ্যোগের অভাব রয়েছে। আর নার্সিংহোম মালিকদেরও হুঁশ নেই।”

সম্প্রতি ঘাটাল ও দাসপুরের নার্সিংহোমে দুই রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। নার্সিংহোমে গলদের কথা স্বীকার করছেন ঘাটাল শহরের একাধিক নার্সিংহোম মালিকও। এক নার্সিংহোম মালিকের দাবি, “ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট এখানে আগেও মানা হত না। আর দু’বার বৈঠক হলেও এখনও নতুন স্বাস্থ্য আইন বিষয়টি ঠিক কী, তা অনেক নার্সিংহোম মালিক জানেনই না। ফলে সব কিছু আগের মতোই চলছে।”

এক ধাপ এগিয়ে দাসপুরের এক নার্সিংহোম মালিক অভিযোগ করছেন, “নতুন স্বাস্থ্য আইন মানতে হবে বলার পরেও এখনও তো ঘুষ নিয়েই লাইসেন্স দেওয়া চলছে। সর্ষের মধ্যেই যেখানে ভূত, সেখানে আমাদের দোষ কথায়?” যদিও নার্সিংহোম মালিক সংগঠনের পক্ষে সুব্রত রায় বলছেন, “আমরা নিয়ম মেনেই নার্সিংহোম চালাচ্ছি। প্রশাসন পরির্দশনে এসে দেখুক।”

পরিদর্শন শুরুর কথা বলছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য দফতর ও জেলা প্রশাসনের যৌথ পরিদর্শন শুরু হবে। নিয়মের গলদ থাকলেই নার্সিংহোমগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে।” দ্রুত জেলা জুড়ে পরিদর্শন শুরু করার কথা বলছেন জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনাও।

আদতে পরিদর্শনের পরেও নার্সিংহোমগুলির ভোল বদলায় কি না, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন