Kurmi Community

কুড়মি আন্দোলনে বাতিল ৮৪টি ট্রেন

আদিবাসী কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে ‘রেল টেকা, ডহর ছেঁকা’ কর্মসূচিতে অনির্দিষ্টকালের এই অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:০৭
Share:

রেল অবরোধের জের। ফাঁকা ঝাড়গ্রাম স্টেশন। নিজস্ব চিত্র

চব্বিশ ঘন্টা আগেই ‘ঘাঘর ঘেরা’ কর্মসূচিতে শুরু হয়েছিল জাতীয় সড়ক অবরোধ। দাবি পূরণ না হওয়ায় পূর্ব নির্ধারিত ‘রেল টেকা, ডহর ছেঁকা’ কর্মসূচিতে জাতীয় সড়কের পাশাপাশি রেল অবরোধে নেমেছিল কুড়মিরা। ঝুঁকি না নিয়ে আগাম বহু ট্রেন বাতিল ও গতিপথ বদলের সিদ্ধান্ত জানিয়েছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ। সময় যত এগিয়েছে বেড়েছে ট্রেন বাতিলের সংখ্যা। সমঝোতায় ছুটলেন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার। তবে গলল না বরফ। পরিস্থিতি আঁচ করে এ বার একযোগে ৮৪টি ট্রেন বাতিল করল দক্ষিণ-পূর্ব রেল!

Advertisement

বুধবার থেকে খড়্গপুর গ্রামীণের খেমাশুলিতে জাতীয় সড়ক অবরোধের সঙ্গে শুরু হয়েছে রেল অবরোধ। আদিবাসী কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে ‘রেল টেকা, ডহর ছেঁকা’ কর্মসূচিতে অনির্দিষ্টকালের এই অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। যদিও তার আগেই গত ১এপ্রিল থেকে কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের পক্ষ থেকে ‘ঘাঘর ঘেরা’ কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। মঙ্গলবার সেই কর্মসূচিতেই খেমাশুলিতে অনির্দিষ্টকালের জাতীয় সড়ক অবরোধ শুরু হয়। সঙ্গে ছিল কুড়মিদের আরও তিনটি সংগঠন। এ দিন তার উপরে আদিবাসী কুড়মি সমাজের অবরোধ কর্মসূচি শুরু হতে এই আন্দোলন অন্য মাত্রা পেয়েছে। কুড়মিদের দাবি, কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পক্ষ থেকে পরিমার্জিত সিআরআই রিপোর্ট পাঠাতে হবে। গত সেপ্টেম্বরে এই দাবিতে খেমাশুলিতে টানা ছ’দিন রেল ও জাতীয় সড়ক অবরোধের পরে আশ্বাস দিয়েছিল রাজ্য। তবে রাজ্য এখনও পরিমার্জিত রিপোর্ট না পাঠানোয় এই পৃথকভাবে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ঘটনায় মুম্বই-কলকাতা ৬নম্বর জাতীয় সড়কে আটকে পড়েছে বহু লরি। যদিও প্রশাসনিক তৎপরতায় ঘুরপথে নয়াগ্রাম, ধেড়ুয়া হয়ে যান চলাচল করছে। তবে প্রভাব পড়েছে রেলে। এ রাজ্য থেকে মুম্বই যাওয়ার মূল রেলপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। খড়্গপুর রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কমার্শিয়াল ম্যানেজার রাজেশ কুমার বলেন, “এটা তো একেবারে রাজ্যের বিষয়। অথচ রাজ্য মোকাবিলা করতে না পারায় রেল অবরোধ করেছে কুড়মিরা। যাত্রীরা যাতে অসুবিধায় না পড়ে তাই আমরা ঘুরপথে ও যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করে কিছু ট্রেন চালাচ্ছি। এর বাইরে ট্রেন বাতিল করতে হচ্ছে।”

পরিস্থিতি আঁচ করে এ দিনই ফের রেলের পক্ষ থেকে নতুন করে ট্রেন বাতিলের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তালিকা অনুযায়ী আজ, বৃহস্পতিবারের জন্য হাওড়া-পুনে, হাওড়া-জগদ্দলপুর, হাওড়া-আহমেদাবাদ, হাওড়া-পুনে দুরন্ত, ভুবনেশ্বর-নয়াদিল্লি রাজধানী, লোকমান্য তিলক-শালিমার এক্সপ্রেস-সহ ৮৪টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও ৪টি ট্রেন ঘুরপথে ও ৭টি ট্রেনের যাত্রাপথ আদ্রায় সংক্ষিপ্ত করে চালানোর কথা রেল জানিয়েছে। এ দিন বহু ট্রেন ঘুরপথে চালানো হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগ মোকাবিলা করা যায়নি। দূর-দূরান্ত থেকে খড়্গপুর স্টেশনে দূরপাল্লার ট্রেন ধরতে এসে ভোগান্তির মুখে পড়েছেন যাত্রীরা। দাঁতনের পলাশ জানা বলেন, “ভোর ৫টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম রাউরকেল্লা যাব বলে। কিন্তু এখানে এসে শুনলাম ইস্পাত বাতিল। এর পরে বিকেলে গীতাঞ্জলী এক্সপ্রেস ছাড়া গতি নেই। সেটাও চলবে কিনা নিশ্চিত নয়।”

Advertisement

এমন ঘটনায় বিড়ম্বনায় পড়েছে জেলা প্রশাসন। রফাসূত্র বের করতে এ দিন খেমাশুলির অদূরে কলাইকুণ্ডা পুলিশ ফাঁড়িতে পৌঁছে কুড়মি নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী ও জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার। আলোচনায় যোগ দেন আদিবাসী কুড়মি সমাজের জেলা সভাপতি কমলেশ মাহাতো ও কুড়মি সমাজ পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য নেতা রাজেশ মাহাতো। তবে আলোচনা শেষে দু’জনেই জানিয়ে দেন যতক্ষণ না পর্যন্ত রাজ্য পরিমার্জিত সিআরআই রিপোর্ট কেন্দ্রের কাছে পাঠাচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত অবরোধ চলবে।

আলোচনা শেষে বিষয়টি নিয়ে জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরী বলেন, “আমরা ওঁদের কী দাবি আছে সেটা জেনেছি। সঙ্গে যেহেতু অবরোধের জেরে বহু মানুষ, রেলযাত্রী সমস্যায় পড়েছে তাই ওঁদের অবরোধ তোলার জন্য অনুরোধও করেছি। ওঁরা নিজেদের দাবি জানিয়েছে। সেটা নিয়ে আমাদের প্রশাসনিকস্তরে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন