বুড়ো বাড়ির ভয়/১

ভাঙল বুঝি! প্রাণ হাতেই কেনাকাটা

বর্ষা নেমেছে। আলগা হচ্ছে হাড় জিরজিরে বাড়ির পলেস্তারা। দুই জেলার একাধিক ব্যস্ত এলাকাতেই রয়েছে কয়েকশো বছরের পুরনো  সব বাড়ি, বাজার। শুধু বাড়ি ভেঙে বিপত্তির ভয় নয়, ঘিঞ্জি বসতিতে অ্যাম্বুল্যান্স, দমকল ঢুকতেও হ্যাপার অন্ত নেই। বুড়ো বাড়ির বাসিন্দারা কী বলছেন, কী ভাবছে পুরসভা— খোঁজে  আনন্দবাজার। বর্ষা নেমেছে। আলগা হচ্ছে হাড় জিরজিরে বাড়ির পলেস্তারা। দুই জেলার একাধিক ব্যস্ত এলাকাতেই রয়েছে কয়েকশো বছরের পুরনো  সব বাড়ি, বাজার। শুধু বাড়ি ভেঙে বিপত্তির ভয় নয়, ঘিঞ্জি বসতিতে অ্যাম্বুল্যান্স, দমকল ঢুকতেও হ্যাপার অন্ত নেই। বুড়ো বাড়ির বাসিন্দারা কী বলছেন, কী ভাবছে পুরসভা— খোঁজে  আনন্দবাজার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৮ ০১:৩৩
Share:

বিপজ্জনক: ভাঙাচোরা বাড়িতে সারসার দোকান। ঘাটালের কুঠিবাজারে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা

বর্ষা এলেই বাড়ে হৃদ্‌স্পন্দন। এই বুঝি ভেঙে পড়ল ছাদের কার্নিস। খসে পড়ল পলেস্তরা।

Advertisement

উপায় নেই। কোনও কিছু কিনতে গেলে ঢুকতেই হবে ঘাটালের ‘বড়বাজার’ হিসাবে পরিচিত কুঠিবাজারে। কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন এই বাজারে প্রাণ হাতে করেই চলছে বিকিকিনি। সাত বছর আগে বাজারের মূল ভবনকে বিপজ্জনক ঘোষণা করেছে পুরসভা। কিন্তু ওই পর্যন্তই।

চাঙ়়ড় ভেঙে পড়ছে হামেশাই। ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেই মানছেন, কপাল ভাল, তাই হয়ত বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটছে না। কুঠিবাজারের নীচে ব্যবসা করেন সঞ্জয় পাল। তিনি বলছেন, ‘‘রুটি-রুজির প্রশ্ন। তাই প্রাণ হাতে করেই আসতে হয়। প্রতি মুহূর্তই আতঙ্কে থাকি।’’ কুঠিবাজারের মধ্যেই রয়েছে পোস্তবাজার, হাঁড়ি বাজার, পান বাজার, কালীবাজার প্রভৃতি। ওই সব বাজারে শতাধিক বছরের পুরনো একাধিক বাড়ি রয়েছে। গোটা কুঠিবাজারে ব্যবসা করেন প্রায় ৫০০ জন ব্যবসায়ী। সকাল হতে না হতেই ভিড় জমে বাজারে।

Advertisement

কেন সংস্কার হচ্ছে না বাজারের? একসময় কুঠিবাজার ছিল ইংরেজদের বাণিজ্যকেন্দ্র। ইংরেজরা চলে যাওয়ার পর বর্তমানে কুঠিবাজার রক্ষণাবেক্ষণ করে ‘সুরেখা ট্রাস্ট’। তারা কেন রক্ষণাবেক্ষণ করছে না। সূত্রের খবর, ব্যবসায়ীরা এত কম টাকা ঘর ভাড়া দেন যে তা দিয়ে সংস্কার সম্ভব নয়। ওই ট্রাস্টের ম্যানেজার সমীর ঘোষের কথায়, ‘‘পুরসভা যদি বৃহত্তর স্বার্থে ভেঙে দেয় তাহলে আমাদের আপত্তি নেই।’’ পুরসভাও উদ্যোগী হয় না। বিপন্নতা কমে না ক্রেতা-বিক্রেতাদেরও। শুধু কুঠিবাজারই নয়। ঘাটাল শহরে ইতিউতি আরও একাধিক বিপজ্জনক বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। তার বেশিরভাগই নড়বড়ে।

মেদিনীপুর শহরেও কিছু বিপজ্জনক বাড়ি রয়েছে। বিশেষ করে বল্লভপুর, মির্জাবাজার, কর্নেলগোলা, হবিবপুর, পাটনাবাজারের মতো পুরনো এলাকায়। কখনও কখনও জীর্ণ বাড়ির একাংশ ভেঙেও পড়ে। তবে শহরে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে মৃত্যুর নজির সাম্প্রতিককালে নেই।

খড়্গপুর শহরে অবশ্য রেল ও পুরসভার ঘোষিত কোনও বিপজ্জনক বাড়ি নেই। তবে রেল শহরের আনাচে-কানাচে রয়েছে জীর্ণ ও বিপজ্জনক বাড়ি। যেমন শহরের ছোট ট্যাংরায় ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে একটি দোতলা বাড়ি। বাড়ির উপরের অংশ রাস্তার দিকে ঝুলে রয়েছে। দেওয়ালে গজিয়ে উঠেছে গাছ-গাছালি। রেল এলাকা বোগদায় অবস্থিত ডাকঘরের ভবনটিরও একই অবস্থা। পরিস্থিতি এমনই যে কর্তৃপক্ষও ডাকঘর সরিয়ে নিতে উদ্যোগ হয়েছেন। সাউথ সাইডে ব্রিটিশ জমানায় গড়ে ওঠা একাংশ রেল বাংলোর অবস্থাও জীর্ণ। শহরের ধ্যানসিংহ ময়দানে, মথুরাকাটিতে থাকা রেল আবাসনগুলির অবস্থাও তচৈবচ। ঝাড়গ্রাম পুর এলাকায় পুরসভার নথিভুক্ত কোনও বিপজ্জনক বাড়ি এই মুহুর্তে নেই। বর্তমানে ১৮টি ওয়ার্ড বিশিষ্ট ২১বর্গকিলোমিটার শহরে সবমিলিয়ে ৩২ হাজার ভবন রয়েছে। এর মধ্যে ২২০০-র মত পুরনো বাড়ি রয়েছে।

বর্ষা এলেই কাঁপন ধরে বুড়ো বা়ড়িতে। এই বুঝি মাটি ধরল শতাব্দী প্রাচীন ইতিহাস।

তথ্য: কিংশুক গুপ্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী, বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

চলবে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন