ফাঁক সেই নজরদারে

হলদিয়ার নিরাপত্তার জন্য মাস খানেক আগে প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, নজরদারি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হবে শহরকে। তা হয়েছে। কিন্তু আদতে কেমন হাল সেই নজরদারি ক্যামেরার? ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।হলদিয়ার নিরাপত্তার জন্য মাস খানেক আগে প্রশাসন ঘোষণা করেছিল, নজরদারি ক্যামেরায় মুড়ে ফেলা হবে শহরকে। তা হয়েছে। কিন্তু আদতে কেমন হাল সেই নজরদারি ক্যামেরার? ঘুরে দেখল আনন্দবাজার।

Advertisement

অপ্রমেয় দত্তগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৬
Share:

মাখনবাবুর বাজারে এই ক্যামেরা বিকল, সে কথা মানছেন প্রশাসনিক কর্তারাও।

একেই বলে বজ্র আঁটুনি ফস্কা গেরো!

Advertisement

শিল্পশহর হলদিয়ার নিরাপত্তার নজরদারির জন্য মাস খানেক আগেই ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রশাসনের তরফে ঘোষণা করা হয়েছিল, শহর মুড়ে ফেলা হবে নজরদারি ক্যামেরায়। সেই ঘোষণার পর কাজও শুরু হয়েছিল জোর কদমে। কিন্তু তারপর সেই সিসিটিভি ক্যামেরার বেহাল হয়ে পড়ে রয়েছে অধিকাংশ এলাকায়। কোথাও ক্যামেরা খুলে গিয়েছে, কোথাও তা ভেঙে পড়েছে আবার কোথাও ক্যামেরা থেকে ফুটেজ মিলছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে।

শহরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে লাগানো যে দামি ক্যামেরা লাগানো হল, তার ব্যবহার নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। এই বিষয়ে হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজি সামসুদ্দিন আহমেদের অবশ্য সাফাই, ‘‘শুরুর দিকে যে কোনও কাজেই কিছু সমস্যা হয়। এক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা হয়েছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, শিল্পাঞ্চলের ঢোকার মুখেই ট্র্যাফিক সিগন্যাল স্ট্যান্ডের মাথায় ক্যামেরাগুলি বসানো হয়েছে। টাউনশিপের মাখনবাবুর বাজারের মোড়, রানীচক, সিটি সেন্টার, দুর্গাচক, মঞ্জুশ্রী মোড়, কাপাসএড়্যা, চৈতন্যপুর মোড়ে এই নজরদারি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই কাজ করছে না স্থানীয়দের অভিযোগ। সিটি সেন্টারের কাছে যে ক্যামেরা লাগানো হয়েছে সেটা খুলে ঝুলছে। কয়েকটি জায়গায় ক্যামেরা বিকল অবস্থায় রয়েছে। যার জন্য সেই ক্যামেরাগুলি থেকে সঠিক ফুটেজ মিলছে না। ব্রজলালচক, কুঁকড়াহাটি নদীঘাট, সিইএসসি ও মিৎসুবিসি কারখানা সংলগ্ন এলাকা, হলদি নদীর টাউনশিপ ঘাটে, নন্দীগ্রাম, মহিষাদল এবং তেরপেখিয়া ঘাটেও সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর তোড়জোড় চলছে।

প্রশাসনিক সূত্রেই জানা গিয়েছে, শিল্পাঞ্চলে অপরাধমূলক কাজকর্ম ঠেকানোর পাশাপাশি নজরদারি করতে এবং হাইওয়ে ক্রাইম রুখতে মহকুমার ১২টি জায়গায় মোট ৪৪টি সিসিটিভি বসানো শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০টি জায়গায় ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। এক একটি মোড়ে ক্যামেরা বসাতে ৮৬ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় ক্যামেরা লাগানোর কাজ। এরই মধ্যে ক্যামেরা এমন হাল কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এলাকার বাসিন্দারাও। এলাকার বাসিন্দা অমোঘ হালদারের কথায়, ‘‘যে নিরাপত্তার জন্য এই ক্যামেরা তার তো ছিটেফোঁটাও কাজও হল না। তা হলে আর এত টাকা খরচ করে ক্যামেরা লাগানো কেন?’’ প্রথম বর্ষের কলেজ ছাত্রী মধুরিমা দাস বলে, ‘‘ক্যামেরা লাগানো খবরে খুশি হয়েছিলাম। এখন তো দেখছি সব ফাঁকা বুলি।’’


উল্টো করে বসানো রয়েছে ক্যামেরা।

রাজ্যের পরিবরণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও খামতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। সাম্প্রতিক পথ নিরাপত্তার একটি অনুষ্ঠানে এসে তিনি বলেন, ‘‘দিল্লিতে যে মানের সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে, সেগুলো লাগাতে হবে। হলদিয়া উন্নয়ন পর্যদ এ জন্য টাকা দেবে বলেও জানান তিনি।

তারপরই সিসিটিভি লাগানোর বরাত যে সংস্থাকে দেওয়া হয়েছিল তার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। দ্বিতীয় একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই সংস্থার ক্যামেরা প্রযুক্তিগতভাবে অনেক উন্নত বলে জানানো হয়েছে। ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক, রাজ্য সড়ক, নদীপথে এবং শিল্পাঞ্চলে প্রবেশের পথগুলিতে ক্যামেরা বসিয়ে থানা থেকেই সরাসরি নজরদারি চালাতে পারবে পুলিশ। এই কারণে প্রোটোকল ক্যামেরা(আইপি ক্যামেরা) লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রতিটি থানা তার এলাকা মোড়গুলির সিসি ক্যামেরাই নজরদারি চালাবে। তাই মোড় সংলগ্ন একটি জায়গায় কন্ট্রোল মনিটর থাকছে। থানার কর্মীরা তা কন্ট্রোল করবে। পরবর্তীকালে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রত্যেকটি থানার সঙ্গে লিঙ্ক তৈরি করে একটা যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে।

কিন্তু এতকিছুর পর নিরাপত্তার বজ্র আটুনির ফস্কা গেরো কী থেকেই গেল? প্রশ্নটা রয়েই যাচ্ছে।

ছবি: আরিফ ইকবাল খান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন