বাণিজ্যের হাত ধরে যাত্রা শহরের পথে

একশো বছর আগে তৈরি হয়েছিল মেচেদা রেল স্টেশন। কিন্তু সে স্টেশনকে ঘিরে এলাকার তেমন উন্নতি চোখে পড়েনি বহুদিন, বিশেষত বাণিজ্যের। বরং কয়েক দশক আগেও মেচেদায় ব্যবসা বলতে ছিল গ্রামীণ হাট। প্রবীণ মানুষেরা আজও মনে করতে পারেন, রেল স্টেশনের উত্তরে ছিল গোপালগঞ্জের হাট। সেই হাটেই চলত এলাকার যাবতীয় বাণিজ্য।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

মেচেদা  শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৫ ০১:১৩
Share:

মেছেদা সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ডে নামছে পানের বোঝা (বাঁ দিকে) স্টেশন সংলগ্ন মাছের আড়ত ( ডান দিকে)। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস।

একশো বছর আগে তৈরি হয়েছিল মেচেদা রেল স্টেশন। কিন্তু সে স্টেশনকে ঘিরে এলাকার তেমন উন্নতি চোখে পড়েনি বহুদিন, বিশেষত বাণিজ্যের। বরং কয়েক দশক আগেও মেচেদায় ব্যবসা বলতে ছিল গ্রামীণ হাট। প্রবীণ মানুষেরা আজও মনে করতে পারেন, রেল স্টেশনের উত্তরে ছিল গোপালগঞ্জের হাট। সেই হাটেই চলত এলাকার যাবতীয় বাণিজ্য। আরও কিছুদিন পরে মেচেদা স্টেশন লাগোয়া কাকডিহি গ্রামে শুরু হয়েছিল হাট। মেচেদা-বাপুর খালের পাশে বসত সেই ‘হরির হাট’ বা বটতলার বাজার। সেখানেই পাওয়া যেত ধান, চাল, মাছ, সব্জি থেকে কাপড় বা গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় সব কিছু।

Advertisement

তারপর অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। ১৯৭০ সালের পর থেকে গুরুত্ব বাড়তে থাকে মেচেদা রেলস্টেশনের। ফলে মেচেদা বাজার এলাকায় ব্যবসার প্রসারও ঘটে আধুনিক রেলের হাত ধরে। এখন এ শহর ব্যবসায় যথেষ্ট পরিণত। একদিকে যেমন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, সিমেন্ট কারখানা তেমনই রয়েছে কৃষিজ পণ্যের বাজারও। পান এলাকার বড় অর্থকরি ফসল। পাশাপাশি রয়েছে মাছ, সব্জি আর ফুলের ব্যবসাও। আর সে সব কিছুকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন শহরে বাড়ছে মানুষের চাপ। গড়ে উঠছে বহুতল। অথচ এ শহর আজও প্রশাসনিক হিসাবে খাতায় পঞ্চায়েত এলাকা। তবে আশ্বাস আছে, যতদ্রুত সম্ভব পুরসভার অন্তর্ভুক্ত করা হবে মেচেদাকে। প্রক্রিয়াও এগিয়েছে অনেকটাই। তাই শহরের বাসিন্দারা চান সুষ্ঠু পরিকল্পনা। প্রাচীন পুরসভাগুলির মতো ঘিঞ্জি পরিবেশ তৈরি হয়ে যাওয়ার আগেই যাতে সুপরিকল্পিতভাবে এই শহরের নাগরিক পরিকাঠামো তৈরি করে দেওয়া যায়।

গত শতকের সত্তরের দশকের পর থেকেই মেচেদায় শুরু হয়েছে বাণিজ্যের প্রসার। বিশেষত পান রফতানিকে কেন্দ্র করে এখানে যথেষ্ট উৎসাহ রয়েছে কৃষক থেকে ব্যবসায়ী সকলের মধ্যেই। বেড়েছে বাজারের সংখ্যাও। অনেকদিন আগে বটতলা বাজারের কাছে মাজীর হাটে পান বাজার বসত। পরবর্তীতে মেচেদা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় উঠে আসে সেই বাজার। আশির দশকে রামকৃষ্ণ পানবাজার চালু হয়। তারপরে মেচেদা মিনি মার্কেট এলাকায় গৌরাঙ্গ পানবাজার, আরও পরে মেচেদা থার্মাল গেটের কাছে শান্তিপুর এলাকায় সারদা পান বাজার চালু হয়েছে ।

Advertisement

একই ভাবে বেড়েছে মাছের বাজারও। আশির দশকে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডের পাশে বর্তমান মেচেদা মাছ বাজার চালু হয়। এখন এখানে ৬২ টি মাছের আড়ত রয়েছে। প্রতিদিন ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত পাইকারি ও খুচরো মিলিয়ে জমজমাট বাজার। মেচেদা মাছ বাজারের আড়তদারদের সংগঠন মেচেদা ফিস মার্চেন্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সদস্য জামশেদ আলি জানান, ‘‘অন্ধ্রপ্রদেশ ও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে মাছ আসে। প্রতিদিন প্রায় ৫০ টনের বেশি মাছ বেচাকেনা চলে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতা থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন।’’ জামশেদ আলি কথায় বছর ৩৫ আগে চালু হওয়া মেচেদার এই মাছের বাজারের আর চেনা যায় না।

মেচেদার এই উন্নয়ন শুরু হয় ১৯৭৩-৭৪ সাল থেকে। কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরির পরে বাইরে থেকে আসা মানুষের ভিড় মেচেদা বাজার সম্প্রসারণে সাহায্য করে। পুরনো বাসস্ট্যান্ডের পরিবর্তে তৈরি হয় নতুন কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড। পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে নতুন বাসস্ট্যান্ডের পাশেই তৈরি হয় নতুন দুটি মিনি মার্কেট। মেচেদা ১ ও ২ নম্বর মিনিমার্কেট নামে পরিচিত ওই দু’টি বাজারের ধাঁচেই পরে তৈরি হয় ৩ নম্বর মিনি মার্কেটও। প্রতিটি মার্কেটেই রয়েছে ২০০-৩০০টি দোকান। তা ছাড়া মেচেদা পুরাতন বাজারে তো প্রায় ৪০০ টি দোকান রয়েছেই।

বাণিজ্যিক প্রসারে প্রয়োজনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় ও রাজ্য সড়কের ধারে গ়ড়ে উঠেছে বহু হোটেল, রেস্তোরাঁ। মেচেদা শহর এলাকায় ১০ টি আধুনিক মানের আবসিক হোটেল রয়েছে। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যে যে বাড়ছে তার প্রমাণ মেলে ব্যঙ্কগুলোর দিকে তাকালেই। অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শহরে শাখা খুলেছে।

বহুতল আবাসন, হাজারো বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়, হোটেল-রেস্তোরাঁ, উড়ালপুল আর ট্রাফিকের চাপে বছর কুড়ি আগের মেচেদাকে চেনা দায়। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দারাই প্রশ্ন তুলছেন, সত্যিই এই নগরায়ন উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবে তো তাঁদের এতদিনের চেনা মেচেদাকে!

২ নম্বর মিনি মার্কেট কমিটির সম্পাদক সুধাকর সামন্ত বলেন, ‘‘বাজার এলাকায় ভাল রাস্তা, নিকাশি ও প্রতিটি বাজারের ভিতরের রাস্তায় পথবাতির ব্যবস্থা করতে হবে। আর বাজারের আবর্জনা ফেলার জন্য জঞ্জাল সাফাই অত্যন্ত জরুরি।’’ সাধারণ ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের নিরাপত্তার জন্য এখানে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি তৈরির বিষয়ে সওয়াল করেন তিনি।’’

ডিএসও- র দাবি। সেল্ফ ফিনান্সিং কোর্স বাতিল করে সরকারি ব্যয়ে নতুন কোর্স চালু করা, বর্তমান শিক্ষাবর্ষ থেকে সমস্ত প্রকার কোর্স ফি প্রত্যাহার করা, ১ বছরেই বিএড ডিগ্রি পড়াবার ব্যবস্থা চালু রাখা সহ বেশ কিছু দাবিতে বুধবার বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জয়ন্তকিশোর নন্দীর দফতরে ডেপুটেশন দিয়েছে ডিএসও। নেতৃত্বে ছিলেন সিদ্ধার্থশঙ্কর ঘাঁটা, মৃন্ময় দাস, রাকিবুল হাসান প্রমুখ। ডিএসও নেতৃত্বের বক্তব্য, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দুই মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন কলেজগুলোতে প্রতি বছরই ছাত্রছাত্রীদের থেকে কোর্স ফি- র নামে এবং নতুন নতুন কোর্সগুলোর ক্ষেত্রে সেল্ফ ফিনান্সিং- এর নামে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করা হয়। আবার বছর বছর এই ফি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতেই থাকে। দাবি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন