বনমহোৎসবে হাতির সঙ্গে বন্ধুত্বের বার্তা

গ্রামবাসীরা জঙ্গল মাফিয়া আপ্পানকে ঘিরে ধরে বলছে, ‘জীবনে যত গাছ কেটেছ, তার দ্বিগুণ গাছ তোমাকে লাগাতে হবে।’ গ্রামবাসীর প্রতিরোধে ভ্যবাচ্যাকা আপ্পান ও শাগরেদরা কুড়ুল ফেলে দিয়ে সবুজায়নের শপথ নেয়। ক্রমে সবুজে ভরে ওঠে গোটা মঞ্চ।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৬ ০১:০৭
Share:

কাঁথিতে জেলাস্তরের বনমহোৎসবের সূচনা ।

গ্রামবাসীরা জঙ্গল মাফিয়া আপ্পানকে ঘিরে ধরে বলছে, ‘জীবনে যত গাছ কেটেছ, তার দ্বিগুণ গাছ তোমাকে লাগাতে হবে।’ গ্রামবাসীর প্রতিরোধে ভ্যবাচ্যাকা আপ্পান ও শাগরেদরা কুড়ুল ফেলে দিয়ে সবুজায়নের শপথ নেয়। ক্রমে সবুজে ভরে ওঠে গোটা মঞ্চ।

Advertisement

তারপরই শোনা গেল হাতির ডাক। ফুলমণি ও তার দলের সদস্যরা শুঁড় দুলিয়ে জঙ্গলে ফিরে আসতেই দর্শকাসনে তখন করতালির ঝড়। ততক্ষণে মহুল জড়িয়ে ধরেছে ফুলমণিকে। সেই সময়েই মানিকপাড়ার ফরেস্ট রেঞ্জ অফিসার বিজনকুমার নাথের আবেদন, “হাতিকে উত্যক্ত করবেন না। তাহলে দেখবেন ওরাও আপনাদের ক্ষতি করবে না। হাতিকে তার স্বাভাবিক গতিপথে যেতে দিন।” বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম ব্লকের বেলতলা প্রাঙ্গণে মহকুমাস্তরের বনমহোৎসবের উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হল পুতুল নাটক ‘ফুলমণি ও তার ছোট্ট বন্ধু’।

ঝাড়গ্রাম ‘কুরকুট’-এর প্রযোজনায় বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে সচেতনতার লক্ষ্যে তৈরি এই পুতুল নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘ফুলমণি’ নামের একটি হাতি। তার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় গাঁয়ের বালক মহুলের। কিন্তু জঙ্গল-মাফিয়ারা নির্বিচারে জঙ্গলের গাছ কেটে পাচার করে দেয়। টান পড়ে ফুলমণিদের স্বাভাবিক বাসস্থান ও বিচরণভূমিতে। শুরু হয় মানুষ ও বন্যপ্রাণের সংঘাত। মহুলের গ্রামে হামলা চালায় ফুলমণির দলের হাতিরা। গ্রামবাসীর পাল্টা তাড়া খেয়ে এলাকা ছাড়ে হাতির পাল। মহুল-ফুলমণির বিচ্ছেদ হয়ে যায়। বন্ধুবিচ্ছেদের যন্ত্রণায় অসুস্থ হয়ে পড়ে মহুল। অবশেষে, ফুলমণিদের জন্য সবুজায়নে হাত লাগান গ্রামবাসী। আপ্পানের শাস্তি হয়, জীবনে যত গাছ কেটেছে, তার দ্বিগুণ গাছ লাগাতে হবে তাকে। ঘন সবুজ জঙ্গলে একদিন ফিরে আসে ফুলমণি ও তার পরিবার। দুই বন্ধুর মিলন হয়।

Advertisement

পুতুল নাটকটি দেখার পরে বিএসএনএল কর্মী সন্দীপ মাহাতো, প্রাথমিক শিক্ষক প্রদীপ মাহাতো, গৃহবধূ কল্পনা পাল-রা বলেন, “জঙ্গলমহলের বাস্তব সমস্যাকে সুন্দর ভাবে পুতুল নাটকের মাধ্যমে উপস্থাপিত করা হয়েছে।” স্কুলপড়ুয়া রাখি মাহাতো, কলেজ পড়ুয়া বিপ্লব চক্রবর্তীদের উপলব্ধি, “সবুজকে রক্ষা করতে হবে। আরও গাছ লাগাতে হবে। ঘন জঙ্গল থাকলে হাতিরা লোকালয়ে চড়াও হবে না। মহুল ও তার গ্রামের লোকেরা আমাদের সেই শিক্ষাই দিল।”

ঝাড়গ্রামে পুতুল নাটক ‘ফুলমণি’ । নিজস্ব চিত্র।

এ দিন সকালে বেলতলা প্রাঙ্গণে ঝাড়গ্রাম মহকুমাস্তরের বনমহোৎসবের উদ্বোধন করেন ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা। অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ মন্ত্রী চূড়ামণি মাহাতো বলেন, “আজন্ম কাল ধরে হাতিদের সঙ্গেই আমাদের সহাবস্থান। হাতিকে তাড়ানোর নামে আগুনের হুলা দিয়ে ছ্যাকা দিয়ে উত্যক্ত করলে হাতিও কিন্তু ছেড়ে কথা বলবে না। অযথা হাতিকে বিরক্ত করা থেকে সবাই বিরত থাকুন। আরও সবুজায়ন করে সমস্যার সমাধান করতে হবে।” মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা ও ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চির বক্তব্য, “বাড়িতে চোলাই মদ তৈরি ও মজুত রাখা বন্ধ করুন। জঙ্গলে প্রাতঃকৃত্য না করে বাড়িতে শৌচাগার ব্যবহার করুন।” শৌচাগার তৈরির জন্য বন দফতর জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে প্রকল্প রূপায়ন করবে বলেও জানান রবীন্দ্রনাথবাবু।

পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাস্তরের বনমহোৎসব আয়োজিত হয় কাঁথিতে। বৃহস্পতিবার দেশপ্রাণ ব্লকের পেটুয়াঘাটে বন দফতর ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে জেলা বন মহোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন জেলাশাসক রশ্মি কমল। এ দিনই সকালে জেলা প্রশাসনিক ভবনের চত্বরে বৃক্ষরোপণ করে অরণ্য সপ্তাহের সূচনা করেন জেলাশাসক। এ ছাড়া বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা মূলক প্রচারের জন্য দু’টি ট্যাবলোরও উদ্বোধন করা হয়। জেলা প্রশাসনিক অফিস ভবনে বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়। প্রতিযোগিতায় ৫৯ জন ছাত্র-ছাত্রী যোগ দেয়।

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বনমহোৎসব সপ্তাহ উদ্‌যাপন উপলক্ষে একশো দিন কাজের প্রকল্পে জেলা জুড়ে ৬ লক্ষ ৫৪ হাজার ও সামাজিক বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার গাছের চারা লাগানোর কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। জেলার উপকুলবর্তী এলাকায় নারকেল ও ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছের চারা লাগানো হবে। ২০ জুলাই নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের রেয়াপাড়ায় বনমহোৎসব সপ্তাহ উদ্‌যাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন