Midnapore Medical College

ভবনে রঙের পোঁচ, রোগীর ঠাঁই মেঝেয়

পশ্চিম মেদিনীপুরের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যাল। এখানেও বেশিরভাগই নীল-সাদা ভবন। এই হাসপাতাল ২০০৪ সালে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৬
Share:

মেদিনীপুর মেডিক্যালের অন্তর্বিভাগে ঠাসাঠাসি রোগী। ফাইল চিত্র।

'গোরা'য় রবীন্দ্রনাথ লিখছেন— ‘বিচার করতে গেলে ভিতরে প্রবেশ করতে হয়।’ রং-বেরঙের হাসপাতালের স্বাস্থ্যব্যবস্থার গুণ বিচারেও সে-ই একমাত্র পথ। আর সে পথে হেঁটেই দেখা যাচ্ছে রং-রাজনীতির জাঁতাকলে স্বাস্থ্যের সুদিন এখনও সুদূরই।

Advertisement

কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত এখন প্রায় সব প্রকল্পেই। সম্প্রতি বিরোধ বেড়েছে সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি নিয়ে। তৃণমূলের দাবি, ওই ভবন গেরুয়া রং না করাতেই অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করেছে বিজেপি সরকার। তবে পাল্টা দাবি, রংটা হলুদ আর বাদামি করার নির্দেশ রয়েছে। এবং সেই নির্দেশ আজকের নয়, বেশ পুরনো। বস্তুত, স্বাস্থ্যে রং রাজনীতির আমদানি এ রাজ্যে তৃণমূলই করেছে। জেলায় জেলায় সব নীল-সাদা হাসপাতাল ভবন। কিন্তু তাতে না আছে যন্ত্রপাতি, না চিকিৎসক।

পশ্চিম মেদিনীপুরের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল মেদিনীপুর মেডিক্যাল। এখানেও বেশিরভাগই নীল-সাদা ভবন। এই হাসপাতাল ২০০৪ সালে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নীত হয়েছে। তবে কার্ডিয়োলজি -সহ কয়েকটি বিভাগের পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল বলেই অভিযোগ। অথচ জেলার বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, ভিন্ জেলা থেকেও রোগীরা এখানে আসেন। ইতিউতি ডাঁই হয়ে পড়ে থাকলেও চেয়েও ম্যাট্রেস পান না মেঝেয় থাকা রোগীরা। স্বাস্থ্য পরিষেবার মান নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। অনেক সিনিয়র ডাক্তারকে সময়ে পাওয়া যায় না। ওষুধ, চিকিৎসা সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। মেডিক্যালের এক আধিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘পরিষেবার মান আগের থেকে বেড়েছে।’’

Advertisement

অথচ পরিসংখ্যান বলছে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর— এই ছ’মাসে জেলায় ২২ জন প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যালেই মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। মেডিক্যালে এখনও ‘মাদার্স ওয়েটিং হাট’ও চালু হয়নি। একাধিক মহলের মতে, এটি চালু হলে প্রসূতি মৃত্যু কমতে পারে। নতুন করে হাসপাতালে তিনটি তোরণ তৈরি হচ্ছে। তোরণ তৈরির আগে একাংশ ওয়ার্ডের হাল ফেরানোর দরকার ছিল, মত একাংশ রোগীর পরিজনের।

দাসপুর ২ ব্লকের জ্যোতঘনশ্যাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরে নীল-সাদা রঙের প্রলেপ। ভিতরে বেহাল পরিষেবা। সামান্য জ্বর, সর্দি-কাশিতেও নাকি 'রেফার' হতে হয় রোগীদের। গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালের মূল ভবন নীল-সাদায় সাজলেও ভিতরে পুরনো অ্যাসবেস্টসে ছাউনি বেয়ে জল পড়ে রোগীদের শয্যায়। গোয়ালতোড়ের কেওয়াকোল গ্রামীণ হাসপাতালে বাড়তি রোগীর চিকিৎসা হয় মেঝেতে শতরঞ্জি পেতে।

অথচ পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলাতেই একাধিক সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল মাথা তুলেছে গত কয়েক বছরে। তবে সেখানেও স্বাস্থ্য পরিষেবা তিমিরে বলেই নালিশ। তারই মধ্যে কেশিয়াড়ি, নারায়ণগড়, দাঁতনের দুটি ব্লকে অনেকগুলি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়েছে। তবে সেখানে পরিষেবা কতটা মিলবে তা সময়ই বলবে। ঘাটাল ব্লকে ৪৫টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। তার মধ্যে ২৯টিতে টেলি মেডিসিন পরিষেবাও সমানে চলছে। দাসপুর এবং সোনাখালি গ্রামীণ হাসপাতালের ছাড়াও দুই ব্লকে ৬০টির বেশি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। সেগুলি সচল। চন্দ্রকোনা-২ ব্লকে ২২টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে।তারমধ্যে তিনটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজ চলছে। বাকি গুলি চালু হয়ে গিয়েছে। তবে বেশিরভাগ সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে এখনও পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। চালু হয়নি টেলি মেডিসিন পরিষেবাও। ফলে গ্রামের মানুষকে সেই শহরে ছুটতেই হচ্ছে। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন