উত্তীর্ণ। এ বার মার্কশিট নেওয়ার পালা। তমলুকের একটি স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
মাধ্যমিকের ফলে পাশের হারের নিরিখে এ বছরও রাজ্য সেরা পূর্ব মেদিনীপুর। এই নিয়ে টানা সাত বার।
বুধবার সকালে মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পরই দেখা যায়— পূর্ব মেদিনীপুরে এ বার গড় পাশের হার ৯৬.১৩ শতাংশ। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছর জেলা থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ৬৩ হাজার ৪৪৫ জন। ২৯ হাজার ৫৯১ জন ছাত্র এবং ৩৩ হাজার ৮৫৪ জন ছাত্রী। গত বছরের তুলনায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা একটু কমলেও পাশের হার বেড়েছে। মেধা তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে জেলার তিন পড়ুয়া।
তবে সেই সাফল্যকে ছাপিয়েও আলোচনার কেন্দ্রে জেলার সাফল্য। ২০১২ সাল থেকে টানা সাত বছর ধরে পূর্ব মেদিনীপুর পাশের হারে রাজ্যে প্রথম হচ্ছে। বছর বছর বাড়ছে পাশের হারও। ২০১২ সালে জেলায় মাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৯১.৪২ শতাংশ, ২০১৩-তে ৯২.৯০ শতাংশ, ২০১৪-য় ৯২.৭৮ শতাংশ, ২০১৫ সালে ৯৪.৭০ শতাংশ, ২০১৬ সালে ৯৪.৭৮ শতাংশ আর ২০১৭ সালে এই হার ছিল ৯৬.০৬ শতাংশ। এমন ধারাবাহিক সাফল্যে খুশি শিক্ষক ও অভিভাবকমহল।
কিন্তু এই সাফল্যের রহস্যটা কী?
জেলার অন্যতম নামী স্কুল তমলুকের হ্যামিল্টন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গোবিন্দ প্রসাদ শাসমল বলেন, ‘‘এখানকার অভিভাবকরা অত্যন্ত সচেতন। পড়াশোনার ব্যাপারে নিয়মিত ছেলেমেয়েদের খোঁজ নেন তাঁরা। তা ছাড়া, পূর্ব মেদিনীপুরে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ অনেক আগে থেকেই রয়েছে। তাই পাশের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে।’’ হলদিয়া বিবেকানন্দ গভর্মেন্ট স্পনসরড হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিপদ ঘটকের আবার মত, জেলার প্রায় সব স্কুলেই ছাত্র-ছাত্রীদের যত্ন সহকারে পড়ান। তার বাইরেও গৃহশিক্ষক দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন অভিভাবকেরা। সব মিলিয়েই এগোচ্ছে জেলার ছেলেমেয়েরা।
এই সাফল্যের পিছনে জেলার ছেলেমেয়েদের মানসিক গঠনকেও কারণ হিসাবে মনে করছেন অনেকে। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক)আমিনুল আহেসানের মতে, ‘‘বহু মনীষীর জন্ম ও কর্মভূমি এই পূর্ব মেদিনীপুর। এই জেলার ছেলেমেয়েদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি। ওদের দমানো যাবে না।’’ তৃণমূলের শিক্ষা সেলের জেলা সভাপতি তথা মাধ্যমিকের কনভেনর জয়ন্ত কুমার দাসেরও মত, ‘‘ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্কের বুনোট আর জেলার ঐতিহ্যের ইতিহাস ছেলেমেয়েদের প্রেরণা জোগাচ্ছে।’’
তবে জেলার সামগ্রিক ভাল ফলের মাঝেও মেধাতালিকায় প্রথম দিকে কেউ না থাকায় শিক্ষকদের আক্ষেপ রয়েছে। তা ছাড়া, এ বার জেলার মেয়েরা মাধ্যমিকে কম বসার বিষয়টিও ভাবাচ্ছে। কন্যাশ্রী-সহ বিভিন্ন প্রকল্প সত্ত্বেও কেন মেয়েরা কম পরীক্ষা দিল, সেই কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। তমলুকের রাজকুমার সান্ত্বনাময়ী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা মজুমদারের কথায়, ‘‘পড়াশোনায় মেয়েদের আরও এগিয়ে আনতে সকলকেই উদ্যোগী হতে হবে।’’